ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পহেলা বৈশাখ উদযাপনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন ছায়ানটের

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১১ এপ্রিল ২০১৮

পহেলা বৈশাখ উদযাপনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন ছায়ানটের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ছায়ানট। প্রতিবছরের মতো এবারও সকালে রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এতে অংশ নেবেন দেড়শ’র বেশি শিল্পী। এবারের অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্যÑ বিশ্বায়নের বাস্তবতায় শেকড়ের সন্ধানে। মঙ্গলবার ছায়ানটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়। এতে বর্ষবরণসহ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে কথা বলেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি সন্জীদা খাতুন। বক্তব্য রাখেন সহসভাপতি ডাঃ সারওয়ার আলী ও খায়রুল আনাম শাকিল। অনুষ্ঠানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা। সন্জীদা খাতুন বলেন, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান বাঙালিত্বের সাধনা। প্রতিবারের মতো এবারও আমরা সকলকে সঙ্গে নিয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করছি। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান সময়ের নানা দিক নিয়ে কথা বলেন তিনি। বলেন, মুক্তিযুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। স্বাধীনতার আন্দোলন স্থির কাজ নয়। নিয়ত সাধনার বিষয়। এই সাধনা করে যেতে হবে। তা না হলে আমরা হেরে যাব। আজকের বাস্তবতায় দুঃখ করে তিনি বলেন, পাকিস্তান আমাদের দেশটাকে স্বার্থকভাবে শেষ করতে পেরেছে। এ অবস্থায় সংস্কৃতিকে হাতিয়ার করে আবারও যুদ্ধে নামার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, আমরা আমাদের সংস্কৃতির শক্তিকে ব্যবহার করছি না। ব্যবহার করতে হবে। বাঙালীর সংস্কৃতিকে তৃণমূলে ছড়িয়ে দিতে হবে। শিল্প সাহিত্য নাটক ইত্যাদি নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে যেতে হবে। তিনি কিছুটা হতাশার সুরে বলেন, গত বছর পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে আমি সংস্কৃতিকে হাতিয়ার করে যুদ্ধে নামার আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু সে আহ্বান সবার কাছে পৌঁছেছে বলে মনে হয় না। এর পর আমি আশা করেছিলাম অনেকেই যোগাযোগ করবেন, উদ্যাগী হবে, হয়নি সেটা। ডাঃ সারওয়ার আলী বলেন, বিশ্বায়নের যুগে জ্ঞানের ভা-ার যেমন উন্মুক্ত হয়েছে, একইভাবে বিপন্ন হচ্ছে জাতীয় সংস্কৃতি। ছায়ানট এটি নিয়ে ভাবছে। আমরা আধুনিকতাকে অস্বীকার করি না। কিন্তু আকাশে তাকিয়েও পাটা যেন মাটিতে থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখা জরুরী। লাইসা আহমদ লিসা বলেন, শত্রুমুক্ত স্বাধীন দেশ গড়ার লক্ষ্যে ১৯৭১ সালে সর্বান্তকরণে সর্বস্তরের বাঙালী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। অর্জিত হয়েছে বাঙালীর স্বাধীনতা। কিন্তু সত্যিকারের মুক্তি কি পেয়েছে বাঙালী? ক্ষণে ক্ষণে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে নানা স্বার্থের বশবর্তী হয়ে নানা অন্ধবিশ্বাস আর ধর্মীয় অপব্যাখ্যায় প্রসারিত সাম্প্রদায়িকতা ও সামাজিক অনাচার। সাম্প্রতিক হত্যা-ধর্ষণ যেন সামাজিক বিকারগ্রস্ততারই প্রকট প্রতিচ্ছবি। এসবের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার প্রকৃত শক্তি তরুণ প্রজন্ম। দেশময় সকল কর্মকা-ের মূল চালিকাশক্তি হলেও গতিময় বিশ্বায়নে তরুণরা আজ অনেকাংশে শিকড় বিচ্ছিন্ন। মুক্তিযুদ্ধ করে বাঙালী যদি দেশ আদায় করে থাকে তবে ষোলআনা বাঙালী হতে পারে না কেন? ছায়ানট মনে করে বিশ্বমানব হবার আগে চাই শাশ্বত বাঙালী হবার প্রত্যয়। নতুন বাংলা বছরে তাই এবারের বিষয় ‘‘বিশ্বায়নের বাস্তবতায় শিকড়ের সন্ধান’’। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পাকিস্তানী আমলের বৈরী পরিবেশে ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে ছায়ানটের যে যাত্রার সূচনা তা মূলত বাঙালীর আপন সত্তাকে জাগিয়ে তুলবার, আপন সংস্কৃতিতে বাঁচবার অধিকার ও বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করবার জন্য। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার উন্মেষ ঘটাবার জন্য ১৯৬৭ সালে রমনার বটমূলে শুরু হয় বাংলাবছরকে আবাহনের আয়োজন। ‘কায়মনে বাঙালী’ হবার প্রত্যয় নিয়ে সেই থেকে পাঁচ দশক ধরে বাংলা বছরের প্রথম লগ্ন পহেলা বৈশাখের প্রত্যুষে মানুষের ভালবাসা ধন্য এই সংগঠন আপন সংস্কৃতির অনুষ্ঠান করে আসছে। নানা চড়াইউৎরাই পেরিয়ে রমনার বটমূল, দেশের গ-ি ছাড়িয়ে বাংলা নববর্ষ আজ বিশ্বময় বাঙালীর সবচেয়ে বড় মিলনমেলা, একটি জাতীয় উৎসব। এই উৎসব আপামর বাঙালীকে প্রাণিত করে ভালবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হতে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ছায়ানট আয়োজিত বর্ষবরণের এবার ৫১তম আয়োজন। বরাবরের মতো এবারেও অনুষ্ঠান শুরু ভোর সোয়া ছয়টায়। বাঁশিতে ভোরের রাগালাপ দিয়ে সূচনা করা হবে। দেড়শ’র বেশি শিল্পী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। দুই ঘণ্টার অনুষ্ঠান চলবে সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ। থাকবে ১৬টি একক গান। ১২টি সম্মেলক গান। ২টি আবৃত্তি। অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হবে ছায়ানট-সভাপতি সন্জীদা খাতুনের কথন দিয়ে। ১৩ এপ্রিল বিকেল ৩টায় বটমূলে থাকবে মঞ্চ মহড়া। অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করছে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার। সরাসরি সম্প্রচারে আগ্রহী বেসরকারী টিভি চ্যানেলগুলোকে বিটিভি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। পুরো অনুষ্ঠান সরাসরি দেখা যাবে ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেল যঃঃঢ়://নরঃ.ষু/পযুহঃনফ তে। ইউটিউব চ্যানেলে খওঠঊ: ঈঐঐঅণঅঘঅটঞ, ইঙজঝঐঙইঙজঙঘ ১৪২৫ ছায়ানট, বর্ষবরণ ১৪২৫ সার্চ বা অনুসন্ধান করেও সরাসরি সম্প্রচার দেখা যাবে। বটমূলের বর্ষবরণ আয়োজন সুষ্ঠু রাখতে সার্বক্ষণিক সহায়তা দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অনুষ্ঠানে সকল ধর্মবর্ণ শ্রেণী পেশার মানুষকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
×