ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা

সিটি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াল জাতীয় পার্টি

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১১ এপ্রিল ২০১৮

সিটি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াল জাতীয় পার্টি

রাজন ভট্টাচার্য ॥ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কোন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবে না বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। এরই ধারাবাহিকতায় খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে মেয়র পদে কোন প্রার্থী দেয়া হচ্ছে না। যদিও এই দুই সিটিতে মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করেছিল দলটি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এরশাদের একান্ত বৈঠকের পর জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে সিটি নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আগামী ১৫ মে এক দিনে গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। তফসিল অনুযায়ী, মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ১২ এপ্রিল; যাচাই-বাছাই ১৫-১৬ এপ্রিল ও প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৩ এপ্রিল। ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন গঠিত। এখানে ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৫ জন। খুলনা সিটি কর্পোরেশন গঠিত ৩১টি সাধারণ এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে। এখানে মোট ভোটার ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৪৫৪ । গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রকিবউদ্দিন ম-লকে এবং খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ ইউনুস আলীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আসন্নœ খুলনা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঝে মনোনয়নপত্র বিতরণ করার কথা ছিল গত রবি ও সোমবার। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বনানীর কার্যালয় থেকে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আগ্রহীদের মাঝে মনোয়নপত্র বিতরণ করার ঘোষণা দিয়েছিল দলটি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাপা চেয়ারম্যানের বৈঠকের পর পরই মনোনয়নপত্র বিক্রি কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এতে নাখোশ হন দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। প্রশ্ন হলো সিটি নির্বাচনে প্রার্থী না দিলে বিরোধী দলের লাভ কী। উত্তর খুঁজতে কথা হয় জাপার নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে। তারা জানান, আগামীতে মহাজোট গঠন করে জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। এ জন্য এরশাদের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের কাছে ১০০ আসন চেয়ে তালিকাও পাঠান হয়েছে। রাজনৈতিক সমীকরণ ঠিক থাকলে আগামী নির্বাচনেও ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে তায় জাপা। তাই হয়তো সিটি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করতে এরশাদকে অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা। সিটি নির্বাচনে ছাড় দিলে হয়তো সংসদ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে সুবিধা পেতে পারে জাতীয় পার্টি। সুবিধা বিবেচনায় হয়তো এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাব মেনে নিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এর কারণ হিসেবে জাপার একাধিক শীর্ষ নেতা জানান, রংপুর সিটি নির্বাচনে ভাল ফলাফল করে জাতীয় পার্টি। সেখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ধরাশায়ী হয়। এরপর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ আসনে সংসদ উপনির্বাচনে বিজয়ী হয় জাপার প্রার্থী। ইতোমধ্যে ঢাকাসহ চট্টগ্রামে দুই মহাসমাবেশ করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। বিভাগীয় পর্যায়ে মহাসমাবেশের প্রস্তুতি চূড়ান্ত। অর্থাৎ এসব কিছুর মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টি এখন উজ্জীবিত। সবার প্রত্যাশা স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত সকল পর্যায়ে দলটি অংশ নেবে। এতে নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের পাশাপাশি বিজয়ী হলে সারাদেশে অন্যরকম প্রভাব পড়ে। পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, গাজীপুর ও খুলনা সিটিতে আমাদের একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। তবে রাজনীতি হচ্ছে কৌশলের খেলা, শেষ মুহূর্তে অনেক নাটকীয় সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তাই খুলনা ও গাজীপুর সিটিতে জাতীয় পার্টি মেয়র পদে প্রার্থী দিচ্ছে কী না তা অচিরেই জানা যাবে। তিনি বলেন, বিশেষ কারণে মনোনয়ন বিক্রি বন্ধ রয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, দলের পক্ষ থেকে দুই সিটিতে মেয়র পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য দুইজন প্রার্থী চূড়ান্ত করে মাঠে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিযেছিল জাপার নীতিনির্ধারকরা। এরা হলেন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে জাপায় যোগদান করা এসএম মুশফিকুর রহমান ও সাবেক স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজ উদ্দিন মিয়া। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট মাহাবুব আলম মামুনও মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। এর মধ্যে এস এম মুশফিকুর রহমানকে জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজে খুলনায় গিয়ে সমাবেশ করে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মেয়র পদে প্রার্থী ঘোষণা করেন। অপর দিকে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজ উদ্দিন মিয়াকে গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেন এরশাদ। নির্দেশনা পেয়ে দুই জনই নিজ নিজ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরই আরও জোরে সোরে নির্বাচনী কর্মকা- শুরু করে জাপার দুই সিটির নেতাকর্মীরা। নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য জাপার সব কর্মকা- যখন স্বাভাবিক গতিতে চলছিল ঠিক তখন রবিবার রাত ৮টার পর থেকে পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট। জাপার অপর একজন শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এরশাদ একান্তে কথা বলেছেন। তাই কী বিষয়ে কথা হয়েছে, সেটা পরিস্কার করে বলা মুশকিল। তবে এইটুকু বলতে পারি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলাপ আলোচনা হতে পারে। বিশেষ করে আসন্ন খুলনা ও গাজীপুর সিটিতে আওয়ামী লীগ-জাপার একক প্রার্থী নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় পার্টির প্রার্থী না দেয়ার জন্য এরশাদকে অনুরোধ করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। তবে এরশাদের রাজনৈতিক সচিব সুনীল শুভ রায় জানিয়েছেন, গাজীপুর সিটিতে আমাদের যোগ্যপ্রার্থী থাকার পরও কৌশলগত কারণে দলীয়ভাবে আমরা মেয়র প্রার্থী দিচ্ছি না। আর খুলনা সিটিতে প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। একাধিক প্রার্থী থাকায় আমরা সর্বাধিক যোগ্যপ্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য কাজ করছি।
×