ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ভ্যাট আরোপ নয়

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১১ এপ্রিল ২০১৮

বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ভ্যাট আরোপ নয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর কোন ধরনের মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আরোপ করা হবে না। এ ধরনের কোন পরিকল্পনাও সরকারের নেই। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সবকিছু ভ্যাটমুক্ত থাকবে এবং শিক্ষা খাতের বিকাশের জন্য যা যা করা প্রয়োজন, বর্তমান সরকার সবই করবে। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কথা বলেন। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। শেরে বাংলানগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১৫ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকার ১৬ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। ব্রিফিংয়ের সময় পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, অর্থমন্ত্রী নাকি বলেছেন-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ভ্যাট বসাবেন। একনেক সভায় অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে বলেছেন, এই ধরনের কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে না। ভ্যাট বসানোর কোন প্রয়োজন নাই। এই বিষয়ে কোন বিতর্ক নাই। সভায় উপস্থিত সকলেই এতে একমত পোষণ করেছেন। পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, সভায় অর্থমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। তিনি এ বিষয়ে কিছু বলেননি। আমার মনে হয় না, অর্থমন্ত্রী ভ্যাট আরোপের কথা বলেছেন। তার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ট্রাস্টি, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় ভবন এসবের কোন কিছুর ওপর কোন ভ্যাট বসানো হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকার ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করবে। তবে সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিয়ে নয়। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই এটি করা হবে। উন্নত দেশ হতে হলে আমাদের ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত আরও বাড়াতে হবে। অর্থাৎ উন্নত সেবার বিনিময়েই ভ্যাট আদায় করতে হবে। সরকার যেন রাজস্ব পায়, আবার ভ্যাট দিচ্ছেন-তারাও যেন কিছু পান। ভ্যাট হার নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। কোন নিত্যপণ্যের ওপর ভ্যাট বসবে না। ১৫ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকার ১৬ প্রকল্প অনুমোদন ॥ দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র। এটি স্থাপনের কাজ চলছে জোরেশোরেই। এই কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুত দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের জন্য স্থাপন করা হচ্ছে শক্তিশালী সঞ্চালন ব্যবস্থা। এজন্য ১০ হাজার ৯৮১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুত ইভাকুয়েশনের জন্য সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সঙ্গে রাশিয়ার পর যুক্ত হচ্ছে ভারত। মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা, ভারতীয় ঋণ থেকে ৮ হাজার ২১৯ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবি) নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, অনুমোদিত ১৬টি প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৬৮৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৭০৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, প্রকল্প সাহায্য ৮ হাজার ৭৪০ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ২৩৫ কোটি ৭ লাখ টাকা পাওয়া যাবে টাকা। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, রূপপুরের বিদ্যুত সারাদেশে নেয়ার জন্য প্রকল্পটি দেশের তিন বিভাগের ১৩টি জেলার ৩৭টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে। যেসব স্থানে বাস্তবায়ন করা হবে সেগুলো হচ্ছে, ঢাকা বিভাগের ঢাকা জেলার ধামরাই ও সাভার উপজেলায়, গাজীপুরের কালিয়াকৈর, মানিকগঞ্জের শিবালয়-ঘিওর-দৌলতপুর-মানিকগঞ্জ সদর, সাটুরিয়া ও সিঙ্গাইর উপজেলায়, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার-টাঙ্গাইল সদর, মির্জাপুর ও কালিহাতি উপজেলা, রাজবাড়ীর পাংশা ও বালিয়াকান্দি উপজেলা, ফরিদপুরের ভাঙ্গা-বোয়ালমারী ও মধুখালী উপজেলা এবং গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর উপজেলায়। এছাড়া রাজশাহী বিভাগের পাবনা জেলার ইশ্বরদী-পাবনা সদর-সাঁথিয়া-সুজানগর-বেড়া ও আটঘরিয়া উপজেলা, নাটোরের বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর ও সিংড়া উপজেলা, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও শাহজাদপুর উপজেলা এবং বগুড়ার নন্দিগ্রাম-বগুড়া সদর ও কাহালু উপজেলা এবং খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া জেলার খোকসা ও কুমারখালী উপজেলা, মাগুড়া জেলার শ্রীপুর উপজেলায় এটি বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ৬০৯ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, রূপপুর-ঢাকা (আমিনবাজার-কালিয়াকৈর) ১৫৪ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, রূপপুর-গোপালগঞ্জ ১৫০ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন স্থাপন, রূপপুর-বগুড়া ১০২ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন, রূপপুর-ধামরাই ১৫২ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন এবং রূপপুর বাঘাবাড়ী ৬০ কিলোমিটার ২৩০ কেভি সঞ্চালন ডাবল সার্কিট লাইন নির্মাণ করা হবে। সরকার কারা গঠন করবে জনগণই তা ঠিক করবে- প্রধানমন্ত্রী ॥ বাসস জানায়, গণতন্ত্রের ওপর অগাধ আস্থা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার কারা গঠন করবে তা জনগণই ঠিক করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার জাতীয় সংসদ ভবন কার্যালয়ে নবনিযুক্ত ফরাসী রাষ্ট্রদূত মেরি-এ্যানিক-বউরডিন সৌজন্য সাক্ষাতে এলে একথা বলেন। খবর বাসস’র। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে কাজ করে যাচ্ছে যদিও ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে নৃশংসভাবে হত্যার পর বাংলাদেশের ইতিহাস মোটেও সুখকর নয়। বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, বৈঠকে দ্বি-পাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সকল বিষয় ছাড়াও রোহিঙ্গা সমস্যা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা, পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রসমূহ এবং বিদ্যুত ও জ্বালানি ক্ষেত্রও আলোচনায় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে এবং সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করে। তার শাসনামলে অনুষ্ঠিত সকল নির্বাচনই অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়েছে এবং যার বেশকিছু নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ও ঘটেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ফরাসী সমর্থনের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যকার বিদ্যমান গভীর ও উষ্ণ দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বাংলাদেশে আর্থসামাজিক খাতসহ বিভিন্ন ফরাসী সহযোগিতার কথা স্মরণ করে দায়িত্ব পালনকালে নবনিযুক্ত ফরাসী রাষ্ট্রদূতকে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি এ সময় গত ডিসেম্বরে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত ওয়ান প্লানেট সামিট চলাকালে ফরাসী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গও স্মরণ করেন। নবনিযুক্ত ফরাসী রাষ্ট্রদূত এ সময় বাংলাদেশের সন্ত্রাস এবং উগ্রচরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সঙ্গেও একাত্মতা প্রকাশ করেন। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে তিনি ফরাসী সরকারের আগ্রহের কথাও ব্যক্ত করেন। ফরাসী রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গাদের খাদ্য সাহায্য সরবরাহে এ সময় বাংলাদেশকে ফরাসী সমর্থন অব্যাহত রাখা এবং তাদের কল্যাণে এনজিও কর্মকা- সম্প্রসারণের কথাও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
×