ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভিসির বাসভবনে হামলার প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন

অপরাধীদের ৭ দিনের মধ্যে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা চাই

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১১ এপ্রিল ২০১৮

অপরাধীদের ৭ দিনের মধ্যে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা চাই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামানের বাসভবনে বর্বরোচিত হামলা, ভাংচুর ও হত্যাচেষ্টা চালানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নেমেছেন শিক্ষকরা। মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আগামী সাত দিনের মধ্যে অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামাম সেই রাতের বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, আমার বাড়িতে প্রবেশ করেও কয়েকজন আমার প্রাণ রক্ষা করেছে। আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তবে মুখোশ পরা কয়েকজন আমাকে লাঠি হাতে আক্রমণের, আঘাত দেয়ার চেষ্টা করেছে। সকালে মানববন্ধন কর্মসূচীতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। পরে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে একটি র‌্যালি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এসে শেষ হয়। মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল উপাচার্য ভবনে বর্বরোচিত হামলা, ভাংচুর এবং সপরিবারে উপাচার্যকে হত্যার যে প্রচেষ্টা চালানো হয় তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আগামী ৭ দিনের মধ্যে অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এর আগে সকাল ১০টায় উপাচার্য ভবনে বর্বরোচিত হামলা, ভাংচুর এর প্রতিবাদে উপাচার্য ভবনের সম্মুখে যৌথভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কারিগরি কর্মচারী সমিতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী ইউনিয়ন মানববন্ধন পালন করে। মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ আলী আকবর ও সাধারণ সম্পাদক একেএম আবু মুছা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সমিতির সভাপতি মোঃ আব্দুল কাদের ও সাধারণ সম্পাদক মজুমদার মোঃ মকবুল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কারিগরি কর্মচারী সমিতির সভাপতি মোঃ মোজাম্মেল হক ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহবুব সরকার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ শাহজাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ সেলিম মিয়াসহ সংগঠনগুলোর অন্যান্য সদস্যবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ এক জরুরী সভার মাধ্যমে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানিয়েছে। বিভাগের পক্ষ থেকে আজ থেকে আগামী ১২ এপ্রিল ২০১৮ পর্যন্ত কালো ব্যাজ ধারণ করবে এবং আগামীকাল ১১ এপ্রিল ২০১৮ সকাল ১১টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করবে। এদিকে লাশ ফেলে বিভীষিকা সৃষ্টি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারকে অচল করার পরিকল্পনায় নিজ বাসভবনে হামলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক ড. উপাচার্য আখতারুজ্জামান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দুর্বৃত্তরা চেয়েছিল একটি লাশের রাজনীতি করতে, রক্তের রাজনীতি করতে। এটি একবারেই রাজনৈতিক উদ্দেশে করা হয়েছে। হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে রক্তপাত ঘটিয়ে একটি বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করে বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল করা, সরকারকে অচল করা, অস্থিতিশীল একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা। এটাই আমার কাছে সকল আলামতে মনে হয়। এর সঙ্গে কোটার কোন সম্পর্ক নেই। মানসিক অবস্থা কেমন জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, বেঁচে আছি এটাই আল্লার রহমত। যারা আমার বাড়িতে প্রবেশ করল তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, তারা কিন্তু আমার প্রাণ রক্ষা করেছে। তবে মুখোশ পরা কয়েকজন আমাকে লাঠি হাতে আক্রমণের, আঘাত দেয়ার চেষ্টা করেছে। এই হামলার সময় দুর্বৃত্তদের দমন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাল্টা ‘এ্যাকশনে’ না গিয়ে কেন নীরব ছিল তার যৌক্তিকতাও তুলে ধরেন উপাচার্য। বলেন, সিন্ডিকেট যথার্থই বলেছে, রাত ২টার দিকে যদি পুলিশ র‌্যাব এ্যাকশনে যেত তবে অনেক প্রাণহানি হতো, যেটি কোনভাবেই কাম্য নয়- দুর্বৃত্তদের এটাই ছিল প্রত্যাশা। পুলিশ এবং র‌্যাবের শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দিয়ে আমরা এই দুর্বৃত্তকে দমন করিনি এবং সেটার জন্য আমরা যে প্রজ্ঞা এবং সাহসী একাগ্রতা এবং নৈতিক মানে উজ্জীবিত থেকেছি এবং বড় আকারের প্রাণহানি যে ঘটেনি সে কারণে সিন্ডিকেট সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
×