ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ রিদওয়ানুর রহমান

অভিমত ॥ সড়ক দুর্ঘটনা এবং আমাদের করণীয়

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১১ এপ্রিল ২০১৮

অভিমত ॥ সড়ক দুর্ঘটনা এবং আমাদের করণীয়

রাজধানী ঢাকা বর্তমানে প্রায় দুই কোটি মানুষের নগরী। এখানকার প্রায় প্রতিটি মানুষকে কোন না কোন কাজে প্রতিনিয়ত রাস্তায় বের হতে হয়। সবাই এক ধরনের ঝুঁকি নিয়েই এখানে চলাচল করেন। ইদানীং এ ঝুঁকি আরও বেশি বেড়ে যাচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এর মূল কারণ কি বা আমাদের করণীয়ই বা কি। সে সব নিয়েই আমাদের এখন ভাবতে হবে এবং এর যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে হবে। প্রথমত রাজধানীর গণপরিবহনগুলোতে কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। বাসগুলো চলে বিশৃঙ্খল অবস্থায়। বাসচালকদের খামখেয়ালিপনা ও বেপরোয়া গাড়ি চালানোর প্রবণতায় অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। রাজধানীতে একক কোন কোম্পানির গাড়ি না চলায় এক কোম্পানির সঙ্গে আরও কোম্পানির চলে তীব্র প্রতিযোগিতা। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, গাড়ি চালকের নেই কোন প্রশিক্ষণ। নেই লাইসেন্সও! হেলপারকেও চালকের আসনে বসিয়ে দেয়া হয়। এটাই বর্তমানে ঢাকার অধিকাংশ বাসের বাস্তব চিত্র। যার ফলে সাধারণ যাত্রীরা নানাভাবে হতাহত এমনকি প্রাণও হারাচ্ছেন। সম্প্রতি দুই বাসের ওভারটেকিং নিয়ে রেষারেষিতে ডান হাত হারানো রাজীবের মতো কোন ছাত্রের স্বপ্নের যেন অপমৃত্যু না হয় সে জন্য এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। ফিটনেসবিহীন ও লাইসেন্স ছাড়া প্রতিটি গাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার এখনই মোক্ষম সময়। প্রশিক্ষণবিহীন চালক এবং এ সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগে যেন আর এক মুহূর্তও দেরি করা না হয় কর্তৃপক্ষের সে ব্যবস্থা নিতে হবে। ট্রাফিক সিগনাল ছেড়ে দেয়ার পর এবং অন্য যে কোন সময় অনিয়ন্ত্রিত, বেপরোয়া ওভারটেকিং করা গাড়িগুলোকে সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে মনিটরিংয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। চীনসহ প্রায় প্রতিটি উন্নত দেশে এ ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। এতে বেপরোয়া গতির বাস চলাচল কিছুটা হলেও কমে আসবে এবং দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে বলে আশা করা যায়। সাধারণত একটি আদর্শ মহানগরে ২৫ শতাংশ জায়গা সড়কের জন্য থাকা উচিত। কিন্তু ঢাকা মহানগরের সড়কের জন্য আছে মাত্র ৭ শতাংশ। সম্প্রতি মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনায় বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এমআরআই) তথ্য মতে, সারা দেশে যত দুর্ঘটনা ঘটে তার ৭৪ শতাংশই হয় ঢাকায়। এমআরআইর গবেষকদের মতে, রাজধানীতে মানুষ বেশি, যানবাহনও বেশি। তাই এখানে দুর্ঘটনার হারও বেশি। সারাদেশের দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে আনতে না পারার অন্যতম আরেকটি কারণ হচ্ছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। বেপরোয়া বাস চালকরা একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটিয়েই যাচ্ছে। অথচ ক’জনইবা আইনের আওতায় এসেছে। তাদের কারোরই তো যথাযথ বিচার হয়নি। ফলে বেপরোয়া চালকদের সাহস আরও বেড়ে যাচ্ছে। এসব যানবাহন, চালক এবং মালিকদের একটা নির্দিষ্ট শৃঙ্খলার মধ্যে আনা না হলে দুর্ঘটনার হার দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাবে। এসবের পাশাপাশি পথচারীদেরও আত্মসচেতনতা বাড়াতে হবে। নিজেদের দায়িত্বশীল সুনাগরিকের ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ, ঢাকার সড়কগুলো পথচারীদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। ঢাকার রাস্তায় যত ফুটপাথ থাকার কথা তা নেই। পথচারীরা তাই ফুটপাথ দিয়ে না হেঁটে সড়কের ওপর দিয়ে হাঁটছে। ফলে পথচারীরা দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। তাই দুর্ঘটনারোধে পথচারীদেরও ভূমিকা রাখতে হবে এবং সচেতন হতে হবে। হাঁটতে হাঁটতে ফোনে কথা বলা, ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার না করা, বাসে ঝুঁকিপূর্ণ ওঠা-নামা করার প্রবণতা পরিহার করতে হবে। একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। তাই আইন প্রয়োগের পাশাপাশি নিজ নিজ সচেতনতা এবং সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে। অদূর ভবিষ্যতে কোন মায়ের কোল যেন আর খালি না হয় এবং রাজীব হোসেনের মতো এতিম সন্তানের স্বপ্ন যেন অঙ্কুরেই বিনষ্ট না হয়- সেই প্রচেষ্টাই আমাদের এখন করতে হবে। লেখক : গবেষক
×