ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন বাস-ট্রাক

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১১ এপ্রিল ২০১৮

নতুন বাস-ট্রাক

লাভ হোক আর না হোক কিংবা লোকসান যতই বাড়ুক, তাতে কিছু যায় আসে না বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা বা বিআরটিসির। বেসরকারী খাতে পরিবহন সংস্থাগুলো যেখানে চুটিয়ে ব্যবসা করছে, সেখানে প্রচুর সংখ্যক বাস থাকা সত্ত্বে¡ও বেড়েছে সংস্থাটির লোকসান। লাভের মুখ দেখার কোন প্রচেষ্টাই নেই তাদের। অযোগ্য ও অদক্ষ লোকের হাতে পড়ে মাথা ভারি প্রশাসন এবং অদক্ষ চালক-হেল্পারদের মাধ্যমে বছরের পর বছর ধরে ক্রমাগত লোকসান দিয়ে চলেছে সংস্থাটি। বেসরকারী খাতের যানবাহনগুলো যেখানে অবলীলাক্রমে ২০ থেকে ১৫ বছর ধরে চলে, সেখানে বিআরটিসির বাসগুলো রাস্তায় নামার দুই-তিন বছরের মধ্যেই জরাজীর্ণ, অকেজো অথবা অচল হয়ে পড়ে প্রধানত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে। অথচ সংস্থাটির ডিপোগুলোতে যানবাহন মেরামতের ব্যবস্থাসহ জনবলও রয়েছে। কিন্তু মেরামতের কোন চেষ্টা না করেই ফেলে রাখা হয় যানবাহনগুলো। চুক্তি ভিত্তিতে বিআরটিসির যানবাহন চালানোর প্রচেষ্টাও কোন সুফল বয়ে আনেনি। সংস্থাটির মালামাল পরিবহনের জন্য ট্রাকের বহরও রয়েছে। এ অবস্থায় রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষের পণ্য ও গণপরিবহন ব্যবস্থায় এর সুফল পাওয়ার কথা থাকলেও তা গুড়েবালি। পরিবর্তে সংস্থাটি বছরের পর বছর ধরে বাড়িয়ে চলেছে লোকসান ও ঋণের বোঝা। বর্তমানে সংস্থাটির বহরে মোট এক হাজার ৫৩৮টি বাস রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫৭টিই অচল। ৩০টি মেরামতযোগ্য। বাকি ২৫৬টির মধ্যে ১৫০টি নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। আরও ১০০টি অচল বাস নিলামে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। সচল ৯৮১ বাসের মধ্যে সরাসরি যাত্রীসেবায় ব্যবহৃত হচ্ছে ৬৭৩। নষ্ট যানবাহনের কারণে স্বাভাবিকভাবেই কমছে বিআরটিসি সেবার পরিধি। আর ভোগান্তি বাড়ছে যাত্রীদের। দুর্বল ব্যবস্থাপনার মধ্যেই বিআরটিসি আরও ৮০০শ’ বাস ও ট্রাক ক্রয় করতে যাচ্ছে। আগামী মে মাসে আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকা হচ্ছে। দুই বছর আগে একনেকের সভায় বাস ও ট্রাক সংগ্রহের পৃথক দুটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। কিন্তু কোন অগ্রগতি হয়নি। অবশেষে গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে সংস্থাটি। ভারতের অর্থায়নে প্রকল্প দুটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। এতে ব্যয় হবে ৭৯৮ কোটি টাকা। দুই প্রকল্পে ভারত দেবে ৫৯৩ কোটি টাকা। বাকি অর্থের যোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার। এর মধ্যে ছয় শ’ বাস কেনায় ব্যয় হবে ৫৮১ কোটি টাকা। আর ২১৭ কোটি টাকায় কেনা হবে পাঁচ শ’ ট্রাক। ভারতের এক্সিম ব্যাংকের ঋণে শর্তানুযায়ী কিনতে হবে ভারতে প্রস্তুত করা যানবাহন। নির্মাণ বৈশিষ্ট যাচাই-বাছাই হয়েছে। চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যে এই বাস-ট্রাক বিআরটিসি বহরে যুক্ত হবে। ঢাকার বাস-ট্রাক সঙ্কট কাটাতে ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির জন্য এই যানবাহন কেনা হলেও তা পরিচালন, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রটি দুর্বল থেকে গেলে ফলাফল শূন্য হবে। যোগ্য প্রশাসক ও দক্ষ জনবলের ঘাটতি রেখে লোকসান বাড়ানোর জন্য এসব আমদানি করা হলে ফলাফল শূন্যতে দাঁড়াবে। সংস্থাটির বর্তমান প্রায় অচলাবস্থার প্রেক্ষাপটে নতুন বাস ও ট্রাক কেনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। সেবার মান বাড়ানো না গেলে ও দক্ষ পরিচালন ব্যবস্থা না থাকলে এই সংস্থাটিতে যতই যানবাহন সংযুক্ত করা হোক না, তা কোন সুফল প্রদান করবে না। সবার আগে বিআরটিসিকে দুর্নীতি ও দুরারোগ্য ব্যাধিমুক্ত করা সংগত। লোকসানী প্রতিষ্ঠানটিকে লাভজনক করে গড়ে তোলা জরুরী।
×