ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গুগল সব জানে!

প্রকাশিত: ০৭:১৯, ১০ এপ্রিল ২০১৮

গুগল সব জানে!

ক্যামব্রিজ এ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারি বদলে দিয়েছে অনেক কিছুই। উদ্বিগ্ন ব্যবহারকারীরা ভুগছেন ব্যক্তিগত তথ্য চুরির আশঙ্কায়। কতটুকু তথ্য চুরি গেল, এই আশঙ্কায় ঘুম হারাম অনেকেরই। এই সোশ্যাল মিডিয়া বা আপনার স্মার্টফোনের সার্চ ইঞ্জিন- আপনার সম্পর্কে কতটুকু জানে, কী কী তথ্য তাদের কাছে রয়ে যায়? আপনি কি তা জানেন? রাতদুপুরে ইউটিউব! কী খোঁজেন গুগল কিন্তু জানে! ইউটিউবে আপনার যাবতীয় ইতিহাস গুগলের কাছে রক্ষিত আছে। আপনি কী কী খুঁজেছেন ভিডিও ব্রাউজিং সাইটে, সবই লিখা আছে গুগলের খাতায়। অর্থাৎ বিশ্বের এক নম্বর সার্চ ইঞ্জিনটি জানে যে আপনি সন্তানসম্ভবা কি না, আপনি চাইনিজ না দেশী কোন খাবার পছন্দ করেন, আপনার হবি, বা আপনি ডিপ্রেশনে ভুগছেন কি না। আপনি কোথায় আছেন আর যান, জানে গুগল : যেদিন থেকে আপনি ফোনে গুগল ব্যবহার করতে শুরু করেছেন, সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত আপনি কবে, কখন, কোথায় গিয়েছেন, গুগল সবই জানে। যখন এ্যাপে ক্যাব ডাকেন বা আমাজন-ফ্লিপকার্ট থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় কোন সামগ্রী কেনেন, তখন আপনাকে গুগলের ‘লোকেশন ট্র্যাকিং’ অন করতেই হয়। আর যখনই আপনি লোকেশন ট্র্যাকার ‘অন’ করেণ, গুগল আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ তাদের সার্ভারে জমিয়ে রাখে। কী বিজ্ঞাপন দেখবেন তাও ঠিক করে দেয় গুগল : আঁতকে উঠলেন? এ তো কেবল শুরু। আপনার আয়, ব্যয়, বাসস্থান, লিঙ্গ, বয়স, শখ, কেরিয়ায়, আগ্রহ, ব্যক্তিগত জীবন এমনকি ওজনও জানে গুগল। এই সব বিষয়ের ওপর নির্ভর করে আপনার একটি প্রোফাইল তৈরি করে গুগল। সেই প্রোফাইলের ওপর ভিত্তি করে আপনি কী বিজ্ঞাপন দেখবেন সেটা ঠিক করে দেয় গুগলই। কারণ, সার্চ ইঞ্জিনটি জটিল এ্যালগরিদম হিসেব করে অনুমান করতে পারে, কী ধরনের বিজ্ঞাপন দেখে প্রভাবিত হয়ে পণ্যগুলো আপনি কিনতে পারেন। কী খুঁজেছেন আর মুছে দিয়েছেন, গুগল জানে : আপনার ডিভাইসের যাবতীয় ব্রাউজিং হিস্ট্রি গুগল জমা রাখে। যদি ভেবে থাকেন, সার্চ হিস্ট্রি মুছে দেয়া আবার এমন কী ব্যাপার! না। আপনার মুছে দেয়া হিস্ট্রিও গুগলের কাছে রয়েছে। গুগল জানে, আপনি কী কী এ্যাপস ব্যবহার করেন : আপনি যে সব এ্যাপ আপনার স্মার্টফোনে ব্যবহার করেন, তার যাবতীয় তথ্য গুগলে জমা হয়। গুগল এটাও জানে আপনি দিনে কতবার ওই এ্যাপটি ব্যবহার করেন। আরও সহজে বললে, মেসেঞ্জারে আপনি কতক্ষণ কার সঙ্গে কথা বলেন, বা কোন দেশের মানুষের সঙ্গে আপনি কথা বলেন, সেই সব গুগল জানে। এমনকি রাতে চ্যাট করতে করতে কখন ক্লান্ত হয়ে আপনি ঘুমিয়ে পড়েন, তারও একটা গড় হিসাব রয়েছে গুগলের তথ্যভা-ারে। এছাড়া এক একজন ব্যবহারকারীর ৬০০ এমবি ডাটা ফেসবুকের কাছে থাকে যা দিয়ে ভরিয়ে ফেলা যাবে প্রায় ৪ লাখ ওয়ার্ড ডকুমেন্ট । ফেসবুকের কাছে যে সব তথ্য আপনিই দিয়ে রেখেছেন! যত মেসেজ আজ পর্যন্ত আপনি অন্যদের পাঠিয়েছেন, পাঠিয়েছেন যত ফাইল, পাঠিয়েছেন বা পেয়েছেন যত ছবি, আপনার ফোনের সমস্ত কন্ট্যাক্ট নম্বর, অডিও মেসেজ- এসব ফেসবুকের কাছে রয়েছে। বিজ্ঞান কল্পকাহিনী মনে হতে পারে, কিন্তু ফেসবুক আপনার ল্যাপটপের ওয়েবক্যাম ও মাইক্রোফোনও চাইলে নিজের খুশিমতো ব্যবহার করতে পারে। কম যায় না গুগলও। আপনি কাকে, কী মেইল পাঠিয়েছেন, তার হদিস গুগুল এক মুহূর্তে খুঁজে বের করে দিতে পারে। আসল কথা হলো, একজন ব্যবহারকারীর যাবতীয় তথ্য গুগলের কাছে জমা থাকে। দ্য গার্ডিয়ানের এক সাংবাদিক গুগলের এই সব তথ্য নামিয়ে দেখেন, একা তার একারই প্রাায় ৫.৫ জিবি ডাটা গুগলের কাছে জমা রয়েছে। এসব তথ্য দিয়ে প্রায় ৩০ লাখ এমএস ওয়ার্ডের পাতা ভরে যায়। যার মধ্যে রয়েছে আপনার ই-মেল, বুকমার্কস, গুগল ডক ফাইল, ড্রাইভের ডাটা, আপনার আপলোড করা ইউটিউব ভিডিওর ডাটা, ছবি, আপনার জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, কোন ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন কি না, কী কী ফোন রয়েছে আপনার- এসব। আজকের যুগে একজন মানুষের বলতে গেলে সবকিছুই জানে গুগল। এমনকী, আপনি এক একদিনে ক’পা হাঁটেন, সেটাও কিন্তু গুগলের কাছে জমা রয়েছে। কাজেই চিলে কান নিয়ে গিয়েছে বলে খামোখা চিলের পেছনে ছুটে লাভ নেই। আপনি নিজেই জ্ঞানত এই সব তথ্য গুগল, ফেসবুকের হাতে তুলে দিচ্ছেন। এ্যাপ ইনস্টল করার আগে এক সেকেন্ড অপেক্ষা করে পড়েও দেখছেন না যে ওই এ্যাপকে আপনি কী কী অনুমতি দিচ্ছেন! আ.জা.ই
×