ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বব্যাংকের হিসাবে জিডিপি হবে ৬.৫ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১০ এপ্রিল ২০১৮

বিশ্বব্যাংকের হিসাবে জিডিপি হবে ৬.৫ শতাংশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছর (২০১৭-১৮) শেষে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এটি উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংকের হিসাব, যা প্রবৃদ্ধির সরকারী হিসাব ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশের চেয়ে অনেক কম। বিশ্বব্যাংক বলছে, সাম্প্রতিককালে বিশ্বের যে কয়টি দেশ ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, তাদের বিনিয়োগ অথবা রফতানি বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দুটিই বেড়েছে। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। বাংলাদেশে সরকারী বিনিয়োগ বাড়লেও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ স্থবির। সার্বিকভাবে রফতানি আয়ও কম। শুধু ভোগ ব্যয়ের ওপর ভিত্তি করে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। যা বিশ্বে একেবারেই ব্যতিক্রম। এদিকে বিশ্বব্যাংকের বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ^ব্যাংকের পূর্বাভাস সম্পূর্ণ অনুমান নির্ভর। বাস্তবতার সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নাই। কারন মাঠ পর্যায়ে তারা কোন জরিপ করে না। বিশ^ব্যাংক যে তথ্য-উপাত্ত দেয়, তার সবই আনুষ্ঠানিক খাতের এবং ঢাকায় বসে তৈরি করা। অনানুষ্ঠানিক খাতের কোন পরিসংখ্যান বা তথ্য উপাত্ত তাদের কাছে নাই, তারা হিসাবেও নেয় না। অথচ আমাদের অর্থনীতি এখনও অনানুষ্ঠানিক খাত নির্ভর। গত নয় বছরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত অর্থনীতিতে যে গতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে, তা তাদের জানা নেই। সোমবার আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট ২০১৮’ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এ সময় বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান, জনসংযোগ কর্মকর্তা মেহরীন এ মাহবুব এবং প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপনকালে সংস্থাটির মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আমরা বলছি না বিবিএস এর প্রবৃদ্ধির হিসাব ভুল। জাতীয় অর্থনীতির তথ্যপ্রাপ্তির একমাত্র উৎস বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। কারণ তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে তাদের যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও সক্ষমতা, সেটি আর কারও নেই। তবে তাদের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যার দাবি রাখে। যে তিনটি খাতের ওপর ভিত্তি করে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হিসাব করা হয়, বিশ^ব্যাংক ও বিবিএস এর হিসাবে সেগুলোর মধ্যে ফারাক আছে। বিশ^ব্যাংকের মতে চলতি অর্থবছর কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ, যা বিবিএস এর হিসাব ৩ দশমিক ০৬ এর চেয়ে কিছুটা বেশি। তবে শিল্প ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি বিবিএস এর হিসাবের তুলনায় বিশ^ব্যাংকের হিসাবে কম হবে। বিশ^ব্যাংকের হিসাবে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ, যা বিবিএস এর হিসাবে হবে ১৩ শতাংশের বেশি। সেবা খাতে চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। কিন্তু বিবিএস বলছে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। উল্লেখ্য, সম্প্রতি চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) অর্থনীতির বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিবিএস জানিয়েছে এবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়াবে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ, যা চলতি বাজেটে প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধির (৭.৪ শতাংশ) চেয়েও বেশি। প্রতিবেদন প্রকাশের আগে চিমিয়াও ফান বলেন, বছরের শুরুতেই দুটি বন্যার পরও উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। রফতানি বাণিজ্য ও রেমিটেন্স প্রবাহের ধারা উর্ধমুখী প্রবণতায় ফিরেছে, যা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। তবে রাজস্ব ঘাটতির কারণে কর জিডিপির অনুপাত ৮ দশমিক ৮ শতাংশেই সীমাবদ্ধ আছে। কর-জিডিপি অনুপাতের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। ফান বলেন, শুধু মধ্যম আয়ের দেশ হলে হবে না, রাজস্ব আয়ও মধ্যম মানের হতে হবে। মহিলা ও তরুণদের কর্মসংস্থানে যুক্ত করতে হবে। ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে হবে। উচ্চ সুদের হার কমাতে হবে। আর্থিক খাতে উল্লেখযোগ্য সংস্কার আনতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের সঙ্গে বিশ^ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধির কোন সম্পর্ক নেই। ওটা জাতিসংঘের হিসাব। বিশ^ব্যাংকের হিসাব করে মাথাপিছু আয়ের ওপর। ওই হিসেবে বাংলাদেশ এখন নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশ। সুদহার নিয়ে বাংলাদেশের আশঙ্কার কোন কারণ নেই। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক ॥ প্রতিবেদনের ব্যাখ্যায় ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ২০১৬ সালের পর থেকে দারিদ্র্য বিমোচনের গতি কমে গেছে। জনসংখ্যার অনুপাতে গ্রামে অতিদারিদ্র্যের হার বাড়ছে। ২০১০ সালে ৩০ লাখ গ্রামীণ জনসংখ্যা অতি দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। এই সংখ্যা ৩৩ লাখ। রংপুরের কিছু এলাকায় দারিদ্র্যের হার ২০১০ সালের তুলনায় বেড়েছে, রাজশাহী ও খুলনায়ও তেমন অগ্রগতি হয়নি। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্য বিমোচনে আগের মতো ভূমিকা রাখতে পারছে না। এর অন্যতম কারণ বৈষম্য বেড়ে যাওয়া। তাছাড়া অর্থনীতির কাঠামাগোত রূপান্তর না হওয়া, কৃষি খাত থেকে অন্য খাতে কর্মসংস্থান স্থানান্তরের শ্লথগতিও এর কারণ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া আগামী ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে আর বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। এ বিষয়ে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে বৈপরিত্য রয়েছে। দেখা গেছে, যদি খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়ে তাহলে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমে। আবার যদি খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বাড়লে খাদ্যে কমে। এভাবে সার্বিক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তা ভাববার বিষয়। প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস সম্পূর্ণ অনুমান নির্ভর ॥ বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন প্রকাশের পর একই দিন নিজ দফতরে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ^ব্যাংকের পূর্বাভাস অনুমানের ওপর ভিত্তি করে দেয়া। তাদের তথ্য বস্তুনিষ্ঠ নয়, অনুমান নির্ভর। তারা ঢাকায় বসে দেশের অর্থনীতির তথ্য উপাত্ত হিসাব করে। গত নয় বছরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত অর্থনীতিতে যে গতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে, তা তাদের জানা নেই। তিনি আরও বলেন, বিশ^ব্যাংকের ভারত অফিসে যারা কাজ করেন, তারা যদি বাংলাদেশে আসতেন তাহলে আমরা হয়তো ভিন্ন মূল্যায়ন পেতাম। বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের হয়ে যারা কাজ করছেন, তাদের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
×