ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনে হামলাকারীদের শাস্তি দাবি সংসদে

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১০ এপ্রিল ২০১৮

ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনে হামলাকারীদের শাস্তি দাবি সংসদে

সংসদ রিপোর্টার ॥ আন্দোলনের নামে মুখোশ-হেলমেট পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে বর্বরোচিত হামলার সমালোচনা করে দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীসহ অন্যান্য সংসদ সদস্যরা হামলাকারীদের জামায়াত-শিবিরের এজেন্ট দাবি করে বলেন, এ ঘটনা ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সকল শিক্ষার্থীদের জন্য কলঙ্কজনক অধ্যায়। যারা ভ-, প্রতারক ও ষড়যন্ত্রকারী তারাই মুখোশ পড়ে হামলা করে। এদের বিষয়ে ন্যূনতম শৈথিলতা দেখানো ঠিক হবে না। এদের কোন ক্ষমা নেই, ক্ষমা পেতে পারে না। অবিলম্বে হামলাকারীদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি দাবি জানান। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার রাতে পয়েন্ট অব অর্ডারে অনির্ধারিত বিতর্কে অংশ নিয়ে তারা এসব দাবি জানান। বিতর্কের সূত্রপাত করেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডাঃ রুস্তম আলম ফরাজী। আলোচনায় অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, তথ্য প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট তারানা হালিম, বিএনএফ’র সভাপতি এস এম আবুল কালাম আজাদ ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী অনির্ধারিত বিতর্কে অংশ নিয়ে বলেন, ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলঙ্কিত অধ্যায় সূচিত হয়েছে। ডাকসুর জিএস নির্বাচিত হয়ে মোনায়েম খানের বিরুদ্ধেও আমরা তীব্র আন্দোলন করেছি। কিন্তু উপাচার্যের গায়ে হাত দেয়া, রাতের অন্ধকারে বাড়িতে ভয়াবহভাবে হামলা-ভাংচুর করার ঘটনা কখনও কোন শিক্ষার্থী চিন্তাও করেনি। যেটি এবার হয়েছে। এই ঘটনা ঢাবি’র সকল শিক্ষার্থীর জন্য কলঙ্কের বিষয়। প্রতিবাদ করতে হলে মুখোশ পড়তে হবে কেন? যারা ভ-, প্রতারক, ষড়যন্ত্রকারী তারাই মুখোশ পড়ে। ইতর হওয়ার একটা সীমা আছে। মুখ দেখাতে এত ভয় কীসের? যুদ্ধাপরাধী সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে এমন গুজব ছড়িয়ে ওই সময় বগুড়া যে স্টাইলে হামলা এবং আগুন দিয়েছিল, একই স্টাইলে ঢাবি’র উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, ফেসবুক, ইন্টারনেট সারা পৃথিবীকে মানুষের নাগালের মধ্যে আনার সুযোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। ফেসবুকে জীবিত ব্যক্তিকে মৃত বানিয়ে উস্কানি প্রদানকারীকে অবশ্যই জাতির সামনে সঠিক জবাব দিতে হবে। কাপুরুষরা মুখ দেখাতে সাহস পায় না বলেই মুখোশ পড়ে। কোটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকা থেকে পড়া এবং মফস্বলে পড়া এক নয়। সমান সুযোগ দিয়েই মেধার বিচার করতে হবে। আসলে ষড়যন্ত্রকারীদের প্রধান গাত্রদাহই হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা। রাজধানী কেন্দ্রিক এলিট শ্রেণীর চক্রান্ত থেকেই জামায়াত-শিবিরের এজেন্টরা ঢাবিতে এ মহড়া দেখিয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ চলছে, চলবে। রাজাকারের বাচ্চাদের অবশ্যই আমরা দেখে নেব। তাদের বিষয়ে ন্যূনতম শৈথিলতা দেখানো হবে না। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে হামলাকারীদের উপযুক্ত বিচার দাবি করে বলেন, এদের কোন ক্ষমা নেই, ক্ষমা হতে পারে না। তথ্য প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট তারানা হালিমও ন্যক্কারজনক এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, হঠাৎ করে দেখলাম একজন ফেসবুক পেজে লিখেছে পুলিশের গুলিতে নিহত ঢাবির শিক্ষার্থী মারা গেছেন! সেই সংবাদটি ৩৫ মিনিট ধরে প্রচারের পর কথিত মৃত ব্যক্তি স্ট্যাটাস দিলেন আমি মরি নাই। এ ধরনের মিথ্যা সংবাদ প্রকাশকারী ও ছাত্র নামধারী এই মুখোশধারী হামলাকারী কারা? আমি বিশ্বাস করি ছাত্রদের আন্দোলনের ঘোষণা কখনও এটা হতে পারে না। সহিংসতা কখনও যৌক্তিকতা হতে পারে না, গ্রহণযোগ্যও নয়। সহিংস পথে আর যাই-ই হোক দাবি আদায় করা যায় না। তিনি বলেন, দাবি সকলের থাকতেই পারে। যৌক্তিক দাবি আদায়ে কণ্ঠস্বর উচ্চকিত করা এটা গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু সেই অধিকার নিয়ে রাতের আঁধারে উপাচার্যের মতো একজন শিক্ষকের বাড়িতে ঢুকে ভাংচুর, তছনছ, খুবই পার্সোনালি জিনিস আলমারি, ভেনিটি ব্যাগ খোলা, স্ত্রী-সন্তানদের খোঁজা, জাতির পিতার প্রতিকৃতি ভাঙ্গা এটা কোনভাবেই আন্দোলনে আদায়ের পথ বলতে পারি না। অধিকার আদায়ের পথ এটা হতে পারে না। এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। বিতর্কের সূত্রপাত করে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতার পর ৩০ শতাংশ চাকরিতে কোটা নির্ধারণ করেছিলেন। এখন সেই কোটা বেড়ে ৫৬ শতাংশ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কোটা কমানোর দাবিতে আন্দোলনের পক্ষে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে যে নারকীয় ঘটনা ঘটানো হয়েছে তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ ঘটনার আমি তীব্র নিন্দা জানাই। প্রয়োজনে একটি সংসদীয় কমিটি গঠন করে এ দাবির ন্যায্য সমাধান করা যেতে পারে। বিএনএফ’র সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনে মুখোশ পড়ে ন্যক্কারজনক হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে একটি সংসদীয় কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলছে। পরিস্থিতি দেখেই বোঝা যায় এটি একটি পরিকল্পিত হামলা। সাবিনা আক্তার তুহিন ফেসবুকে জীবিত ব্যক্তিকে মৃত জানিয়ে উস্কানিদাতা গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকারকে দ্রুত গ্রেফতারের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি দাবি জানিয়ে বলেন, ছাত্র সমাজের নামে স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করছে। এভাবে চললে আমরা বসে থাকব না, শুধু প্রতিবাদ নয় প্রয়োজন হলে রাজপথে থেকেই প্রতিরোধ করব।
×