ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভিসির বাসভবনে কারা হামলা চালিয়েছে-তদন্তে নেমেছে পুলিশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১০ এপ্রিল ২০১৮

ভিসির বাসভবনে কারা হামলা চালিয়েছে-তদন্তে নেমেছে পুলিশ

শংকর কুমার দে ॥ কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে রবিবার গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের বাসভবনে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় তৃতীয় কোন পক্ষের হাত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আড়ালে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য পর্দার অন্তরাল থেকে কলকাঠি নেড়ে দেশের নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে কিনা তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। সরকারের উচ্চ পর্যায় সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কারের শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নিরীহ, নিরাপরাধ, সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা যাতে কোন ধরনের পুলিশী হয়রানি, নির্যাতন, মামলা মোকদ্দমার শিকারে পরিণত না হয় এবং ধৈর্য-সহ্যের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের বিষয়টি মোকাবেলা করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের নামে গভীরা রাতে ভিসির বাসভবনসহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, হামলার ঘটনাগুলোকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে সরকার। এমনকি কোটা সংস্কারের আন্দোলনের আড়ালে যারা এই ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে তার পেছনে এরা কারা? এদের পারিবারিক পরিচয় কী? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বহনকারী পরিবারের কোনও সন্তান এই আন্দোলনে জড়াতে পারে কিনা তার তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কাররের দাবিতে আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের বিষয়ে নমনীয় মনোভাব প্রদর্শন করার বিষয়টি বিবেচনা করবে সরকার। তবে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, হামলা, অবরোধ, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিষয়ে সরকার অনমনীয় মনোভাব প্রদর্শন করে কঠোর হস্তে দমন করার বিষয়টি আলোচনা হয়। বৈঠকের আলোচনায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করে সমঝোতার মাধ্যমে ধ্বংসাত্মক কর্মকা- থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে সরকার। সোমবার বিকেলে শাহবাগ থানার সামনে এক ব্রিফিংয়ে কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, সরকারের নীতি নির্ধারক মহলের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের আলোচনায় ভাল একটি সমাধান হওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে পুলিশের এই উর্ধতন কর্মকর্তা বলেছেন, উপাচার্যের বাড়িতে হামলার বিষয়টি তদন্ত না করে এই বিষয়ে কোন কিছু বলা যাবে না। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেছেন, উপাচার্যের বাসভবনে হামলার ঘটনায় মামলা দায়েরের বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, কোটা সংস্কারের আন্দোলনের নামে ভাংচুর, হামলা, নৈরাজ্য সৃষ্টির ঘটনায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা ও হত্যা চেষ্টা এবং ভাংচুরের ঘটনা নজিরবিহীন। মন্ত্রী বলেন, এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর পেছনে যারা ইন্ধন দিচ্ছেন, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকেও আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। সোমবার দুপুরে শিক্ষক সমিতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে সমিতির সংবাদ সম্মেলনে বর্বরোচিত হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়ে বলেছেন, গভীর রাতে উপাচার্যের বাসভবনে হামলার ঘটনা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ এবং এর সঙ্গে বহিরাগতরা জড়িত বলে মনে করেন তারা। শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাকসুদ কামাল বলেছেন, কোন ছাত্র এ ধরনের ধ্বংসাত্মক হামলা চালাতে পারে বলে মনে করি না। এছাড়া তারা হামলার পর মুখোশ পরিহিত অবস্থায় যখন পালিয়ে যায়, তখনই তারা বহিরাগত বলে বিষয়টি পরিষ্কার। বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক মদদপুষ্ট হয়ে বহিরাগতদের মাধ্যমে এ হামলা চালানো হয়েছে। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, রবিবার রাতে উপাচার্যের বাসভাবনে হামলার সঙ্গে আন্দোলনকারীদের কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে আন্দোলনের নেতাদের দাবি। তারাও বলছেন, ‘বাইরের সন্ত্রাসীরা’ এই হামলা চালিয়েছে।
×