ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যাপক আয়োজনে বর্ষবরণের প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ১০ এপ্রিল ২০১৮

ব্যাপক আয়োজনে বর্ষবরণের প্রস্তুতি

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ দিন যত সামনে এগোচ্ছে তত বাঙালীর প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ এগিয়ে আসছে। বাঙালীর নিজস্ব জাতিসত্তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার অন্যতম উৎসব বৈশাখ বরণকে ঘিরে বরিশালের গ্রাম থেকে শহর সর্বত্রই চলছে ব্যাপক আয়োজনের প্রস্তুতি। বাংলা বছরের প্রথমদিনে বৈশাখ বরণেই থাকছে মঙ্গল কামনায় শোভাযাত্রার আয়োজন। পাশাপাশি আয়োজন করা হয়েছে গ্রামীণ জনজীবনের ঐতিহ্যবাহী বৈশাখ মেলার। মঙ্গলশোভাযাত্রার আয়োজন নিয়ে বরিশালে দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছে চারুকলা-উদীচীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংগঠক কর্মী ও শিল্পীরা। আবহমান বাংলার সংস্কৃতির বিভিন্ন চিত্র ফুটিয়ে তুলতেই তাদের এ ব্যস্ততা। চারুকলা বরিশালের ২৭ তম আয়োজনে আগাম সকল প্রস্তুতি চলছে বরিশাল নগরীর বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়কস্থ তাদের অস্থায়ী কার্যালয়ে। সেখানে চারুকলার ছাত্রছাত্রী, সংগঠক ও শিল্পীরা নতুন করে তৈরি করছেন কৃত্রিম বাঘ, টাট্টু ঘোড়া, পাখি। তৈরি হচ্ছে বাঁশিবাদক রাখালের ভাস্কর্য, লোকচিত্র, মুখোশ, রাখি ও মুকুট। মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের সমন্বয়ক তমাল রায় বলেন, ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ সেøাগানে এবারের বৈশাখ উৎসবের আয়োজন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে পহেলা বৈশাখ সকাল সাতটায় সিটি কলেজ মাঠের মঞ্চে শুরু হবে চারুকলার আয়োজনে বৈশাখ বরণের দুই দিনব্যাপী কর্মসূচী। যেখানে সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি পরিবেশন করবেন নজরুল সাংস্কৃতিক জোট, নৃত্যাঙ্গন ও খেয়ালী গ্রুপ থিয়েটার। এরপর সেখানে গুণিজন ও মুক্তিযোদ্ধাদের রাখি পরানো এবং সম্মাননা প্রদান করা হবে। এরপর ৭টা ৫৯ মিনিটে কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে মঙ্গলশোভাযাত্রা বের করে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করা হবে। যশোর স্টাফ রিপোর্টার যশোর অফিস, সময় ॥ পহেলা বৈশাখের সকালে শহরের রাজপথে বর্ষবরণ উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ মঙ্গলশোভাযাত্রা নামে। শিল্প সমৃদ্ধে ভরপুর মহাকাব্যিক এ শোভাযাত্রায় বাঙালীর লোকজ জীবনের প্রতিচ্ছবি ঢেউ তোলে। ঢাক-ঢোল, বাঁশি, কাঁসির সুর তুলে বাঘ, হরিণ, পেঁচা, ভূত, রাক্ষসের প্রতিকৃতির নাচন, ইট পাথরের শহুরে ‘জঙ্গলে’। শোভাযাত্রায় বহন করা লাঙ্গল, মাছ ধরার পোলো, ঢাউস আকারের হাতপাখাসহ বাঙালী জনজীবনে ব্যবহার্য বিভিন্ন উপকরণ সুদূর অতীতের গরিমা বিমূর্ত করে তোলে। সেই দিনটির আর দেরি নেই। অচিরেই হাজির হচ্ছে ১৪২৫’র এই মাহেন্দ্রক্ষণ। আর তাই মঙ্গলশোভাযাত্রার জন্য বিভিন্ন শিল্প উপকরণ সৃজনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যশোরের চারুশিল্পীরা। যেহেতু যশোর থেকেই শুরু হয়েছিল মঙ্গলশোভাযাত্রা। তাই যশোরে এর আয়োজন ব্যাপক। গত কয়েকদিনে চারুপীঠ-চারুতীর্থসহ যশোর শহরের চারুশিল্পের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ঘুরে মঙ্গলশোভাযাত্রার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিকৃতি ও মুখোশ তৈরির ব্যস্ততা দেখা যায়। শোলা, আর্ট পেপার, বক্সবোর্ড কেটে তাতে প্লাস্টিক পেইন্ট করে বিভিন্ন ধরনের ফুল, প্রজাপতি, পেঁচা, বাঘ, সাপ, কুমির, বিকৃত মানুষ, ভূত, প্রেত, রাক্ষসের প্রতিকৃতি বানাচ্ছেন চারুশিল্পীরা। এসবের পাশাপাশি বাঁশের চটা ও কাপড় দিয়ে দোয়েল পাখি, ময়ূর, নৌকা, রাজা রানীর পুতুল তৈরি করা হচ্ছে। বাঁশের চটা দিয়ে তৈরি ফ্রেমে কাপড় বসিয়ে তাতে রং করে বিরাট আকৃতির এসব প্রতিকৃতি বানানোর কাজ চলছে। এবারের পহেলা বৈশাখের সকালে চারুতীর্থ ক্রিয়েটিভ আর্ট স্কুল ঢাউস সাইজের হাতপাখা ফুল, পাখি, গাছপালা, বাঘ, কুমিরের রং বেরংয়ের প্রতিকৃতি নিয়ে মঙ্গলশোভাযাত্রা বের করবে। শোভাযাত্রায় এসবের পাশাপাশি ঢাল, তলোয়ার, বর্শায় সজ্জিত হয়ে মন্ত্রী-শাস্ত্রী নিয়ে হাজির থাকবেন হাবু রাজা। রাজার মন্ত্রী-শাস্ত্রী, পাইক-পেয়াদা বেষ্টিত হাবু রাজার চারপাশে থাকবে গাছপালাসহ বাঘ, হরিণ, কুমির, ফুল, পাখির প্রতিকৃতি। এর মাধ্যমে চারুতীর্থ পহেলা বৈশাখের সকালে মানুষের মাঝে বার্তা পৌঁছাবে শান্তির, হিংসা বিদ্বেষহীনতার। হাবু রাজার দেশে কোন হিংসা নেই, নেই বিদ্বেষ। মানুষ পশুপাখিসহ সবাই যেখানে শান্তি আর সম্প্রীতির মেলবন্ধনে বসবাস করে। নওগাঁ নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁ থেকে ॥ ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ আসছে বাংলার নববর্ষ বাঙালীর প্রাণের উৎসব । আর মাত্র কয়েকদিনের অপেক্ষা। এর পরই পহেলা বৈশাখ। ইতোমধ্যেই বৈশাখ বাঙালীর ঘরের কড়া নাড়ছে। জীর্ণতা আর পুরনো সব গ্লানি মুছে বৈশাখ বাঙালীর জীবনে নিয়ে আসছে নতুন দিনের নতুন বছরের এক অনন্য আনন্দ উৎসব। আর এই বৈশাখকে বরণ করার জন্য চলছে নানান মহলের নানান প্রস্তুতি। আর এই বৈশাখকে সামনে রেখে নানা রংয়ের ও প্রকারের বাহারি কাগজ, কাপড় ও শোলা দিয়ে কৃত্রিম ফুল তৈরির ধুম। এসব ফুল তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আত্রাই উপজেলার প্রত্যন্ত জামগ্রামের এই ক্ষুদ্র কুঠির শিল্পের ছোট-বড় কারিগররা। ওই গ্রামে গোলাপ, স্টার, সূর্যমুখী, কিরণমালা, মানিক চাঁদ, জবা, বিস্কুট, গাঁদাসহ বিভিন্ন নামে হরেক রকম ফুল তৈরি করা হয়। আত্রাই উপজেলার ভোঁপাড়া ইউনিয়নের একেবারেই অবহেলিত প্রত্যন্ত একটি গ্রাম জামগ্রাম। নেই কোন ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা। বাংলাদেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য এটিই একটি গ্রাম যেখানে কাগজ, কাপড় ও শোলার রঙিন বাহারি রকমের কৃত্রিম ফুল তৈরি করা হয়। এখানকার তৈরি ফুল দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন উৎসব, ও মেলাতে পুরুষরা নিয়ে গিয়ে ফেরি করে বিক্রি করে থাকে। লাভও হয় দ্বিগুণ। কিন্তু যোগ্য পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এখনও এই হস্ত শিল্পটি আধুনকিতার দোর গোড়ায় পৌঁছেনি। গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়বে গাছের ছাঁয়া ভেজা বিভিন্ন স্থানে কয়েকজন মিলে বসে বসে তৈরি করছেন এই ফুলগুলো।
×