ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আমার ভেতর আরেক আমি

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ৯ এপ্রিল ২০১৮

 আমার ভেতর  আরেক আমি

অনেকেই মনে করি আমরা যা চিন্তা করি তাই আমি। বাস্তবে নিজেকে নিয়ে আমরা যা ভাবি আমরা তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু। মস্তিষ্কের সক্ষমতার মাত্র এক পার্সেন্ট হলো আমাদের চিন্তা-ভাবনা। আর বাকি ৯৯ পার্সেন্ট কিন্তু মনুষ্যোচিত। মস্তিষ্কে ডাটা সংরক্ষণ বা স্থানান্তরের হার পুরোপুরি আমরা জানি না, জানা সম্ভবও না। আমাদের মস্তিষ্ক এতটাই ব্যস্ত যে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১১ মিলিয়ন ডাটা সংরক্ষণ বা সরবরাহ করে। (ডেইলি মেইল থেকে নেয়া)। তবে জানেন কি, কিছু বিষয় আছে যা একেবারেই সহজাত যেমন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়া। তাই মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ এই চিন্তা খুবই সামান্য, তার ক্ষমতার তুলনায়। তারপরও আমাদের চিন্তার অনেকটাই কেন নেতিবাচক? দেখা যায় পাঁচটির মধ্যে চারটি ভাবনাই এমন যে, তা হয় খুবই সমালোচনাপূর্ণ এবং কুৎসিত। যার বেশিরভাগ বার্তাই আমাদের বিপদের সঙ্কেত দেয় এবং এই ম্যাসেজটা মনের মধ্যে গেঁথে যায়। তাই নিজেকে এই কথাগুলো বলা এখনই বন্ধ করা দরকার- ‘ওহ মাই গড আই এ্যাম গোয়িং টু বি কট এনাদার আইস এজ উইদাউট গ্লোভ’। ‘ওহ মাই গড আইএ্যাম গোয়িং টু লুস মাই জব/গার্লফ্রে-/ লুকস/মানি/ লাইফ’। স্নায়ুবিজ্ঞানী রিক হ্যানসন এর মতে, ‘মস্তিষ্কের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা হলো ভ্যালক্রো আর পজেটিভ টেফলোন। আমি হয়ত অন্য কারওটা জানি না কিন্তু নিজের উপলব্ধি হলো, নেতিবাচক চিন্তা বিবর্তনের আরেকটি উপাদান মাত্র। যা আমাকে কোনরকম টিকিয়ে রাখে যেন আমি একা নই।’ সাফল্যকে সবসময় অর্জনের পাল্লায় মাপা উচিত নয়, দরকার মানসিক বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বিচার করা। যা আমাদের সচেতন হতে ক্ষমতা প্রদান, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ, আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যের প্রতি সহানুভূতি বাড়াতে সাহায্য করবে। এতে করে আপনি আরও বেশি মানসিক শক্তির অধিকারী হবেন। যে কোন বিষয় থেকে উপলব্ধি করা শিখবেন। আর এটা আপনাকে ভাল একজন অভিভাবক হতেও সাহায্য করবে। কারণ আপনি যদি আপনার নিজের চিন্তা, অনুভূতি ও ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন না হন তবে তো আপনাকে সেই শিশুকালের জীবন বয়ে বেড়াতে হবে। আমেরিকান কমেডিয়ান ডক্টর রুবি ওয়াক্স এর নিজের নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলেন এভাবে, আমার একমাত্র মেয়ে অভিনয় ভালবাসতো। পেশা হিসেবে সে ওটাই বেছে নেয়। প্রত্যেক সময় সে যখন তার অডিশন শেষ করে বাসায় ফিরত বেচারিকে বলতে শুনতাম, ‘তারা কি আমাকে পছন্দ করেছে?’, তারা কি তখন হাসছিল?, ‘আমি যা করছি তা কি যথেষ্ঠ ছিল’ ইত্যাদি। এটাকে বলা যায় একেবারে মরিয়া হয়ে পড়া। আমার মেয়েটা ইতোমধ্যে ভাল সময়ে আছে এবং সেভাবে যা করছে তা হয়ত ঠিক নেই তাই তাকে তা আরও ভাল করে করতে হবে। আমি নিজেকে তার তুলনায় ১০০ বছরের বেশি পুরনো দিনের মানুষ ভাবি। মেয়ের প্রত্যেকটা অডিশনে, আমার মনে বল্লমের মতো কিছু একটা আঘাত করে। মনে পড়ে নিজের জীবনের সেই দিনটি, যেদিন রয়েল একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্টের অডিশনে আমার নাম ডাকা হয়নি। আমি এখন সচেতন হতে শিখেছি। সে যখন বাড়ি ফেরে আমি আমার জিহবাকে সংযত রাখি তার ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলা থেকে বিরত রাখতে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি আমার মুখে ফুটে ওঠা উদ্বিগ্নতা লুকাতে পারি না। আমার ধারণা, আমি যেটুকু অর্জন করেছি তা যথেষ্ঠের বেশি। তারপরও সামান্য প্রত্যাখ্যানকে মেনে নিতে পারি না। হ্যা এটা সত্য যে, আমরা নেতিবাচক বিষয় নিয়ে বেশি ভাবি কারণ একটি বল্লম যখন আমায় আঘাত করে তখন তার সৌন্দর্যের চেয়ে ব্যথা প্রদানের ক্ষমতাই মনে দাগ কাটে। আমাদের অধিকাংশই জানে না আমরা কে বা আমরা কী। আমাদের স্পষ্ট ধারণা নেই, আমরা যা করছি তা কেন করছি। আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাই যেন আমাদের স্মৃতিতে পলি জমেছে। কারণ বা ফলাফল না জেনেও আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাই।
×