ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্য ক্যাডারে নিয়োগ পাচ্ছেন ৪৭৯২ নতুন ডাক্তার

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৯ এপ্রিল ২০১৮

স্বাস্থ্য ক্যাডারে নিয়োগ পাচ্ছেন ৪৭৯২ নতুন ডাক্তার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাস্থ্য ক্যাডারে চার হাজার ৭৯২ জন চিকিৎসক নিয়োগ দিতে ৩৯তম বিশেষ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সরকারী কর্মকমিশন (পিএসসি)। রবিবার পিএসসির প্রতিষ্ঠা দিবসের উৎসবের মধ্যেই চিকিৎসকদের কাক্সিক্ষত বিশেষ বিসিএসের ঘোষণা এলো। প্রতিষ্ঠা দিবসের উৎসবে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পিএসসির কাজের প্রশংসা করে বলেছেন, পিএসসি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হাতে তৈরি একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি নিরপেক্ষতার সঙ্গে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। অন্য আলোচকরাও বলেছেন, পিএসসি এই মুহূর্তে সবচেয়ে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি নিয়ে কাজ করছে। এর আগে সকালে দিবসের কর্মসূচী হিসেবে প্রথমে পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিকের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটির সদস্য, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে বের করা হয় বর্ণাঢ্য র‌্যালি। র‌্যালিটি পিএসসি কার্যালয়ের সামনে এলে রীতিমতো নেচে গেয়ে দিবসের উৎসবে শামিল হন সকলে। এরপর শুরু হয় আলোচনা সভায়। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিকের সভাপতিত্বে আলোচনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এম আশিকুর রহমান। বক্তব্য রাখেন পিএসসির পিএসসির সদস্য আনোয়ারা বেগম, উজ্জল বিকাল দত্ত, কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব মঞ্জুরুর রহমান, সহকারী প্রোগ্রামার কৌশিক দেবনাথ প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, এই পিএসসি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হাতে তৈরি একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৭২ সালে জাতির জনক এই প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। আজ পিএসসি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দায়িত্ব পালন করছেন। পিএসসি অত্যন্ত নিপেক্ষতার সঙ্গে জাতীয় দায়িত্ব পালন করছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এম আশিকুর রহমান বলেন, পিএসসির কাজ অত্যন্ত কঠিন কাজ। একটি পরীক্ষা নেয়াই অনেক কঠিন, সেখানে পিএসসি সুনামের সঙ্গে শত শত পরীক্ষা নিচ্ছে। কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক তার বক্তব্যে তুলে ধরেন পিএসসির নানা অর্জনের কথা। জাতির জনকের প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা রক্ষায় তিনি প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান। চেয়ারম্যান জানান, ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠান পর থেকে এখন পর্যন্ত পিএসসি প্রায় ৭৪ হাজার ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগের সুপারিশ করেছে। গত ৮ বছরে পিএসসির যে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগের সুপারিশ করেছে তা তার আগের ৮ বছরের তুলনায় ৫ গুণ। চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে কমিশনের সীমাবদ্ধতার জন্য কিছুটা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, রাষ্ট্রের এ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির নেই আর্থিক ক্ষমতা। অন্যান্য কমিশন থেকে এ প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা অনেক ক্ষেত্রে কমও। অথচ এ প্রতিষ্ঠান দেশের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সীমাবদ্ধতা নিয়েই। পরীক্ষার দ্রুত ফল প্রকাশ, প্রশ্নফাঁস বন্ধসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে ড. সাদিক বলেন, আমাদের এক বিজ্ঞ সদস্য আমাদের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছেন। যা রীতিমতো ম্যাজিকের মতো কাজ করছে। বাটন টিপলেই রেজাল্ট। অথচ এই সফটওয়্যার তৈরি করতে আগে ৫০ লাখ টাকা অপচয় হয়েছে। লোপাট হয়েছে। যারা কাজ করবে বলে বলা হয়েছে তারা টাকা নিয়ে গেছে। আর আমরা নিজেরাই আজ সেটি তৈরি করে কাজ করছি। পিএসসির সদস্য আনোয়ারা বেগম বলেন, পিএসসির সিলেবাসে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হওয়া উচিত। তাহলে আগামী তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সম্পর্কে জানতে পারবে। এদিকে অনুষ্ঠানের পরপরই স্বাস্থ্য ক্যাডারে চার হাজার ৭৯২ চিকিৎসক নিয়োগ দিতে ৩৯তম বিশেষ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সরকারী কর্মকমিশন (পিএসসি)। চেয়ারম্যান বলেন, প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান নিয়েই আমরা বসে নেই। আমরা ৩৯ বিসিএসের কাজও এক সঙ্গে করছি। কমিশনের ওয়েবসাইটে (িি.িনঢ়ংপ.মড়া.নফ) বিশেষ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি, পরীক্ষার সিলেবাস ও নির্দেশাবলী প্রকাশ করা হয়েছে। এই বিসিএসে অংশ নিতে আগামী ১০ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করা যাবে। যাদের ২১ থেকে ৩২ বছর তারা আবেদন করতে পারবেন। বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে ২০০ নম্বরের এমসিকিউ ধরনের লিখিত ও ১০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে এককালীন চিকিৎসক নিয়োগ দিতে এর মধ্যে বিধিমালাও সংশোধন করেছে সরকার। সংশোধিত বিধিমালা অনুযায়ী, মেডিক্যাল সায়েন্স বা ডেন্টাল সায়েন্স বিষয়ে ১০০ নম্বর; বাংলা, ইংরেজী, বাংলাদেশ বিষয়াবলী ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীতে ২০ নম্বর করে এবং মানসিক দক্ষতা ও গাণিতিক যুক্তিতে ১০ নম্বর করে মোট ২০০ নম্বরের দুই ঘণ্টার এমসিকিউ ধরনের লিখিত পরীক্ষা হবে। প্রতিটি এমসিকিউ প্রশ্নের সঠিক উত্তরের জন্য এক নম্বর দেয়া হবে। আর প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য কাটা হবে শূন্য দশমিক ৫০ নম্বর। লিখিত পরীক্ষায় পাস নম্বর পিএসসি নির্ধারণ করবে। মৌখিক পরীক্ষার পাস নম্বর ধরা হয়েছে ৫০। লিখিত পরীক্ষা শুধু ঢাকায় হবে। সাধারণত বিসিএসে ২০০ নম্বরের জন্য চার ঘণ্টার এবং ১০০ নম্বরের জন্য তিন ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষা হয়। সাধারণ ক্যাডারে নিয়োগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পর ২০০ নম্বরের মৌখিকসহ মোট ১১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় বসতে হয় সরকারী চাকরিপ্রার্থীদের। আর সাধারণ ক্যাডারের বাইরে অন্য কোন ক্যাডারে পরীক্ষায় অংশ নিতে চাইলে সংশ্লিষ্ট পদ বা সার্ভিসের জন্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। সাধারণত লিখিত পরীক্ষার গড় ন্যূনতম পাস নম্বর ৫০ শতাংশ। আর মৌখিক পরীক্ষার পাস নম্বর ৫০ শতাংশ।
×