ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনে সর্বজনীন স্বাস্থ্যবীমা দরকার

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৯ এপ্রিল ২০১৮

সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনে সর্বজনীন স্বাস্থ্যবীমা দরকার

নিখিল মানখিন ॥ সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। দেশের ক্ষুদ্র আয়তন ও সীমিত সম্পদের বিপরীতে রয়েছে জনসংখ্যার বিস্ফোরণ। এই কাঠামোর বিভিন্ন উপাদানগুলোর মধ্যে নেই কোন সমন্বয়। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে রয়েছে আকাশচুম্বী বৈষম্য। সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনামূল্যের নামে বিদ্যমান সেবার মান প্রশ্নবিদ্ধ। আর বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উচ্চমূল্যের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। স্বাস্থ্য বীমা শুরু হলেও তা দেশের মাত্র একটি জেলার তিনটি থানায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু রয়েছে। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার মূল কথা হচ্ছে, সব মানুষ প্রয়োজনের সময় মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা পাবে। চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে কেউ দরিদ্র হয়ে পড়বে না। উদ্দেশ্য অর্জনে কৌশল হিসেবে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি অপচয় ও দুর্নীতি কমাতে হবে, স্বাস্থ্য বীমা মানুষকে সেবাপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেবে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হেলথ ইকোনমিক্স ইউনিটের তৈরি ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ এ্যাকাউন্টস ১৯৯৭-২০১৫’ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের স্বাস্থ্য খাতে যে অর্থ ব্যয় হয়, তার মাত্র ২৩ ভাগ বহন করে সরকার আর ৬৭ ভাগ ব্যয় করে ব্যক্তি নিজে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের মানুষ স্বাস্থ্যের জন্য নিজের পকেট থেকে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করে। ২০১২ সালে মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৩ শতাংশ বহন করত ব্যক্তি নিজের পকেট থেকে। আর এখন তা বেড়ে ৬৭ শতাংশ হয়েছে। আর এনজিও ও দাতা সংস্থাগুলো বহন করছে ১০ শতাংশ। স্বাস্থ্য ব্যয় বাড়লেও সরকারী অংশের খরচ কমেছে। স্বাস্থ্য বীমার কার্যক্রম কম ॥ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রোগীর সুরক্ষায় স্বাস্থ্য বীমা চালু থাকলেও বাংলাদেশে এখনও এ সেবা সফলভাবে চালু করা সম্ভব হয়নি। স্বাস্থ্য বীমা শুরু হলেও তা দেশের মাত্র একটি জেলার তিনটি থানায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু রয়েছে। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণে দেশের মানুষকে স্বাস্থ্য বীমায় আগ্রহী করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। জানা যায়, দেশে প্রচলিত প্রাইভেট ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বীমা খুব গ্রহণযোগ্য না হলেও গ্রুপ স্বাস্থ্য বীমা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে বহু প্রতিষ্ঠান এই গ্রুপ স্বাস্থ্য বীমা করছে। এর বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রামীণ ব্যাংকসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান নিজস্ব আঙ্গিকে স্বাস্থ্য বীমা চালু করেছে। অন্যদিকে কমিউনিটি পর্যায়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ আরও কয়েকটি সংস্থা কাজ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেবাপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা থাকার পরও দেশের অধিকাংশ মানুষই স্বাস্থ্যসেবা পেতে বীমা করতে আগ্রহী নয়। তাছাড়া আগে টাকা দিয়ে পরে সেবা গ্রহণের মনোভাব না থাকা এবং একজনের টাকায় অন্যজনের চিকিৎসা এ বিষয়েও অনীহা রয়েছে। তাই স্বাস্থ্য বীমা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। পৃথিবীর উন্নত দেশ এবং কল্যাণ রাষ্ট্রগুলোয় মানুষের স্বাস্থ্য সেবা অনেকাংশে বীমার ওপর নির্ভরশীল। ফলে স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় মেটাতে সেসব দেশের জনগণকে আর্থিক সমস্যায় পড়তে হয় না। কিন্তু স্বাস্থ্যসেবা পেতে বাংলাদেশের মানুষকে মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৭ ভাগ পকেট থেকে করতে হয়। স্বাস্থ্যসেবা পেতে বীমাতে অনাগ্রহের কারণে অধিক সংখ্যক মানুষকে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার (ইউএইচসি) আওতায় আনা যাচ্ছে না। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ১৭ উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্যতম সবার জন্য সুস্বাস্থ্য। কারণ দেশের সব ধরনের উন্নয়নের স্থায়িত্বের জন্য সবার আগে প্রয়োজন জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। এজন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচীর এবং স্বাস্থ্য বীমার বিকল্প নেই। কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্য বীমার প্রতি অনাগ্রহী। এই প্রেক্ষিতে দেশে স্বাস্থ্য বীমা নিশ্চিত করা সহজ নয়। এর জন্য সমন্বিত (সরকারী-বেসরকারী) উদ্যোগ প্রয়োজন। এদিকে ২০৩০ সালের মধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের একটি বাধ্যবাধকতা অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় সমন্বিত কার্যক্রম নেই ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে কিডনি, লিভার, ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার মাত্রা কয়েকগুণ বেড়েছে। অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় কোন জাতীয় দিক নির্দেশনা নেই। কেন্দ্রীয়ভাবে নেই কোন ব্যবস্থাপনা। প্রথমবারের মতো এ জাতীয় রোগ নিয়ে বিশেষ গবেষণা কার্যক্রম শুরু করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো নিজেদের মতো করে ব্যবসায়িক মনোভাব নিয়ে এ জাতীয় রোগের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে। নতুন করে বিশেষ কার্যক্রম সাজাতে গিয়ে পদে পদে প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সংক্রামক রোগ ধীরে ধীরে কমছে, দ্রুত বাড়ছে অসংক্রামক রোগ। অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা ব্যয় দেশের অধিকাংশ মানুষের সামর্থের বাইরে চলে যাচ্ছে। আর অনেক অসংক্রামক রোগের শতভাগ চিকিৎসা ব্যবস্থা দেশে নেই। তাই অনেক অসংক্রামক রোগীকে চিকিৎসার অভাবে অকালে মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে। বর্তমানে দেশের শতকরা ৬১ ভাগ রোগই হচ্ছে অসংক্রামক রোগ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও স্বাস্থ্য সেক্টরে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশে মারাত্মক পানিজনিত সমস্যা বিদ্যমান। আর জলবায়ুর পরিবর্তন এ সমস্যাকে আরও ঘনীভূত করেছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে রক্ষার জন্য দারিদ্র্যের সঙ্গে সম্পর্কিত রোগসমূহ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী। গ্রীনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমানোর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কমানো এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট প্রায় সকল পরিবেশগত ও সামাজিক বিপর্যয় চূড়ান্তভাবে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। জলবায়ু পরিবর্তন এ অঞ্চলের সব দেশের উপর প্রভাব ফেলবে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিদ্যমান অসমতার কারণে সৃষ্ট ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যথেষ্ট সক্ষম নয়। নগর পরিকল্পনা, পরিবহন ব্যবস্থা এবং খাদ্য উৎপাদন ও মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে আন্তঃসেক্টর পরিকল্পনার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানো সম্ভব। সরকারী হাসপতালে চিকিৎসাব্যয় ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, নামমাত্র খরচে চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় সরকারী হাসপাতালে। অপারেশন, সিসিইউ, আইসিসিইউ ও ডায়ালাইসিস সেবার ক্ষেত্রে কোন টাকা নেয়া যাবে না। তবে বেশকিছু পরীক্ষা করাতে স্বল্প ফি নেয়া হয়। এক্ষেত্রেও সরকারী ফি বেসরকারী হাসপাতালের ফি’র তুলনায় অনেক গুণ কম। সরকারী হাসপাতালে করোনারি এনজিওগ্রামে ২ হাজার টাকা, সিটিস্ক্যানে ২ হাজার টাকা, এমআরআই ৩ হাজার টাকা, ইসিজি ৮০ টাকা, ইকোকার্ডিওগ্রাম ২০০ টাকা, এক্সরে ২০০ টাকা, আল্ট্রাসনোগ্রাম ৩০০ টাকা, কার্ডিয়াক ক্যাথ ২ হাজার টাকা, ইউরিন ৩০ টাকা এবং রক্তের হিমোগ্লোবিন, টোটাল কাউন্ট করাতে লাগে মাত্র ১০০ টাকা। সব হাসপাতালে ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রী বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। এই মুহূর্তে কোন ঘাটতি নেই। কিন্তু বিনামূল্যের চিকিৎসায় ফি দিতে হয় সরকারী হাসপাতালে। জরুরী বিভাগ থেকে রোগীশয্যা পর্যন্ত পৌঁছার চিকিৎসা ব্যয় (ট্রলিম্যান ও শয্যা যোগানদাতা) লিখিত থাকে না। শয্যায় উঠার পর চলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার খেলা। প্রকৃতপক্ষে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে কোন ফ্রি নাই। ইউজার ফি আদায়ের নামে এখানে রোগীদের ফি প্রদানে বাধ্য করা হয়েছে। অনেক পরীক্ষা বাইরে গিয়ে করাতে হয়। উচ্চমূল্যের ওষুধ এবং চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশনে লেখা কোম্পানির ওষুধ সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে পাওয়া না গেলেই রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়। শুধু চিকিৎসককে এবং রোগীর খাবারের ক্ষেত্রে কোন টাকা দিতে হয় না। তবে চুক্তিবদ্ধ বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা জন্য রোগী পাঠিয়ে সরকারী হাসপাতালে ফ্রি রোগী দেখার টাকা উঠিয়ে নেন অনেক চিকিৎসক। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে নিয়ে যেতে ট্রলিম্যানদের টাকা দিতে হয়। অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রেই ফ্রি বেড বলে কিছু নেই। টাকা ও তদ্বির না হলে ফ্রি বেড পাওয়া যায় না। সার্জারি ও আইসিইউ রোগী হলে তো খরচের শেষ নাই। এভাবে পদে পদে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ খরচ মেটাতে গিয়ে সরকারী ফ্রি চিকিৎসা যেন সাধারণ মানুষের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে! সরকারী স্বাস্থ্যসেবার একটি বড় অংশই জনগণকে বহন করতে হচ্ছে। আর দালালদের মাধ্যমে অর্থ লুট ও সীমাহীন হয়রানি সরকারী হাসপাতালের স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেসরকারী হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ ॥ বেসরকারী হাসপাতালসমূহের চিকিৎসাসেবার খরচ অনেকটা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। প্রতিটি অপারেশনে ১০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা লাগে। প্রতিদিন সিসিইউ সেবা পেতে ৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং আইসিইউ সেবা পেতে লাগে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। প্রতি সেশনে ডায়ালাইসিস করাতে খরচ হয় প্রায় ৫ হাজার টাকা। এভাবে করোনারি এনজিওগ্রামে ১৫ হাজার টাকা, সিটিস্ক্যানে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা, এমআরআই ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা, ইসিজি ৩০০ টাকা, ইকোকার্ডিওগ্রাম ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, এক্সরে ৫০০ টাকা, আল্ট্রাসনোগ্রাম ১ থেকে ৩ হাজার টাকা, কার্ডিয়াক ক্যাথ ১৫ হাজার টাকা, ইউরিন ২০০ টাকা এবং রক্তের হিমোগ্লোবিন, টোটাল কাউন্ট করাতে লাগে মাত্র ৪৫০ টাকা। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জন করতে হলে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সেøাগান হিসেবে শুনতে ভাল। কিন্তু এই জনবহুল দেশে বাস্তবায়ন করা খুব কঠিন। অর্থ ছাড়া মানসম্পন্ন সেবা দেয়া সম্ভব নয়। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জন করতে হলে স্বাস্থ্য, অর্থ ও জনপ্রশাসনসহ আরও বেশকিছু সংখ্যক মন্ত্রণালয়কে একসঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের সাবেক মহাপরিচালক আসাদুল ইসলাম বলেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার ধারণা আমাদের জন্য নতুন নয়। সংবিধানে সবার জন্য স্বাস্থ্যর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০০ সালের আলমা আতা ঘোষণায়ও ‘সকলের জন্য স্বাস্থ্য’-এ কথা বলা হয়েছিল। তাতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ওপর জোর দেয়া হয়েছিল। তবে ইউএইচসিতে যে বিষয়টি নতুন তা হলো মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এবং তা আমরা কীভাবে নিশ্চিত করব সেই বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, বস্তি, ভাসমান, চর ও হাওড়াঞ্চলের মানুষ এখনও স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে না। দেশের ৫৫ শতাংশ মানুষ এখনও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার ধারণায় ২০৩০ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে ও সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। অথচ আমাদের দেশে চিকিৎসা পেতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় এর ৬৭ শতাংশই রোগীকে বহন করতে হচ্ছে। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের জন্য মানসম্পন্ন ও দক্ষ জনবলও দরকার। দেশে পর্যাপ্তসংখ্যক চিকিৎসক থাকলেও নার্স ও টেকনিশিয়ানের ঘাটতি আছে। সুতরাং সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আমরা অনেকটা দূরেই আছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিকসের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবুল হামিদ বলেন, দেশে প্রচলিত প্রাইভেট ইন্স্যুরেন্স কেম্পানিগুলোর ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বীমা খুব গ্রহণযোগ্য না হলেও গ্রুপ স্বাস্থ্য বীমা খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বহু প্রতিষ্ঠান এই গ্রুপ হেলথ ইন্স্যুরেন্স করছে। এর বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রামীণ ব্যাংকসহ আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নিজস্ব আঙ্গিকে স্বাস্থ্য বীমা চালু করেছে। অন্যদিকে কমিউনিটি পর্যায়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ আরও কয়েকটি সংস্থা কাজ করছে। তিনি বলেন, এখন জরুরী হয়ে উঠেছে সরকারের সিদ্ধান্ত। বেসরকারী পর্যায়ের স্বাস্থ্য বীমার কার্যক্রমের সঙ্গে সরকারী কার্যক্রমের সমন্বয় ঘটিয়ে সারাদেশের মানুষের জন্য একটি কার্যকর স্বাস্থ্য বীমা পদ্ধতি চালু করা। যার মধ্য দিয়ে সরকারের সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা পরিকল্পনা বাস্তবায়নও সহজ হয়ে উঠবে।
×