ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মীর আব্দুল আলীম

গণতন্ত্রের ভবিষ্যত আরও উজ্জ্বল হোক

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ৯ এপ্রিল ২০১৮

গণতন্ত্রের ভবিষ্যত আরও উজ্জ্বল হোক

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী খুলনা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের বছর এটা। বলা যায় নির্বাচন ঘিরেই কাটবে ২০১৮ সাল। বিগত জাতীয় নির্বাচন বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোট ছাড়া হলেও এবার মনে হচ্ছে তা হবে না। যে কোন মূল্যে বিএনপি নির্বাচনে যাবে এমন আভাসই পাওয়া যাচ্ছে। ৩১ মার্চ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি খুলনা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।’ বড় রাজনৈতিক দু’দল নির্বাচনে গেলে যা হয় তাই হয়ত হবে। আবহাওয়াটা ফের গুমট ঠেকছে। গণতন্ত্র, সুষ্ঠু রাজনীতি, অপরাজনীতি এসব নিয়ে আলোচনায় আসতে চাই না। তবে এটাই বলতে চাই, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এ সরকারের সময়টা খুব একটা খারাপ যায়নি। দেশে বিদেশী বিনিয়োগ শুরু হয়েছে, দেশের দৃশ্যমান উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয়েছে। হরতাল-অবরোধ না থাকায় জনমনে স্বস্তি ছিল। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছেন, শিল্প-কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে। ভয় এখানেই; এ ধারা ঠিক থাকবে তো? সামনের দিনগুলো ভাল যাবে, মনে হচ্ছে না। আবার জ্বালাও পোড়াও, ভাংচুর, হরতাল-অবরোধ এসব হবে না তো? বিরোধী দলের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসছে নির্বাচনে তারা যাবেই। হুঙ্কার দেয়া হচ্ছে রাজপথ দখলের। তাদের কথায় বোঝা যাচ্ছে পূর্বের স্টাইলে আন্দোলন হলে অশান্তি বাড়বে। অর্থনীতি ধ্বংস হবে। দেশে বেকার বাড়বে, ব্যবসা বাণিজ্যে অচলাবস্থা দেখা দেবে। সে যুদ্ধে দেশের অর্থনীতি পঙ্গু হবে। সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত হবে। এমনটা আমরা আর চাই না। তবে এটাও সত্য বিরোধী দলের সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি করার পরিবেশ দিতে হবে বর্তমান সরকারকে। কী করবে বিরোধী দল? তাদের রাজনীতি করার পরিবেশটা তো দিতে হবে। সে পরিবেশ পাচ্ছে না তারা। দেশের স্বার্থে সরকারকে ছাড় দিতে হবে, তবেই দেশে শান্তি বিরাজ করবে। জ্বালাও পোড়াওয়ের রাজনীতি বিএনপিকে অনেকটাই পিছিয়ে দিয়েছে। তারা ভোটের রাজনীতিতে পিছিয়ে না গেলেও জ্বালাও পোড়াওয়ের কারণে নানাভাবে অনেক পেছনে পড়েছে এবং এ কারণে তাদের খেসারতও দিতে হচ্ছে। বিরোধী দলগুলো সহনশীল হবে সেই সঙ্গে সরকারী দলও সব ক্ষেত্রে সদয় হবে এমন প্রত্যাশা সবার। পত্রিকা খুললেই রাজনৈতিক গরম খবর দেখতে পাই। রাজনৈতিক দলের নেতারা নির্বাচনকে ঘিরে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যেও নির্বাচনকে ঘিরে বেশ উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। জনগণ চায় ঝামেলা মুক্ত রক্তপাতবিহীন নির্বাচন। তারা অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনও প্রত্যাশা করে। এ অবস্থায় কী করবে নির্বাচন কমিশন? আমরা জানি, নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের ওপরই ন্যস্ত। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সব নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ করার জন্য ওয়াদা করেছেন। তিনি তার ওয়াদা রক্ষা করবেন এমনটাই সবাই চায়। ক’বছর আগে রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে আমরা প্রতিদিন কী দেখেছি? দেশজুড়ে নৈরাজ্যে দেখেছি। সে কথা এখনও ভুলে যাইনি আমরা। হতভাগ্য বাবার চোখের সামনে গুলিবিদ্ধ কিংবা পেট্রোলবোমায় ঝলসে যাওয়া ছেলের চিৎকার শুনেছি। সম্পদ হারিয়ে পথে বসতে দেখেছি অনেককে। এরা তো সবাই রাষ্ট্রেরই সুনাগরিক ছিল? এদের তো বাঁচার আর সম্পদ রক্ষার অধিকার আছে। এসব রক্ষায় সরকারেরও দায় ছিল। কিন্তু ওই দানবদের হাত থেকে কেউই আমাদের রক্ষা করতে পারেনি। প্রতিনিয়ত চোখের সামনেই এসব ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছি। কিছুই করতে পারিনি আমরা। এসব রোধে আইন আছে। নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা রাষ্ট্রের দ্বিতীয় অপরিহার্য কাজ। এ হত্যার দায় যেমন বিরোধী দলের ছিল, রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে সরকার দলও এ দায় কিছুতেই এড়াতে পারে না। এ কথা বলতেই হয় সুস্থ গণতান্ত্রিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে না পারাটা, বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক দিক। ষড়যন্ত্র, গোপন তৎপরতা আমাদের রাজনীতিতে লেগেই আছে। যখনই দেশটিতে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় আসে, ঠিক তখনই নির্বাচনকে ঘিরে শুরু হয় গোপন তৎপরতা ও ষড়যন্ত্র। আমরা যতদূর জানি, নির্বাচন শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই হবে। এ ব্যাপারে তারা বদ্ধপরিকর। এহেন পরিস্থিতিতে বিএনপি কোন্ পথে যাবে? ২০১৪ সালের নির্বাচন বানচালে ব্যবহৃত পেট্রোলবামা, হরতাল নাকি অবরোধ? আগামী নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ-উদ্দীপনায় কোন ঘাটতি নেই। মানুষ ভোট দিতে যে কতটা উদগ্রীব, তা মোটামুটিভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনগুলোর ভোটের হারে বোঝা যায়। নির্বাচনের সততা বা ভোটের পবিত্রতা রক্ষার বিষয়টি তাই রাজনৈতিকভাবে খুবই স্পর্শকাতর। সে জন্যই এ দেশে ‘আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব’ স্লোগান দিয়ে যেমন আন্দোলন হয়েছে, তেমনি কোটিখানেক ভুয়া ভোটারের মাধ্যমে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার ষড়যন্ত্রও ব্যর্থ হয়েছে। সংযুক্ত হয়ে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা। কিন্তু গণতন্ত্রের কয়েক যুগ পরও আমরা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। সন্দেহ নেই, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলতে আমরা প্রকৃত নির্বাচনই বুঝে থাকি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটতে হবে। তারা নিরপেক্ষ না হলে আমরা কিভাবে প্রকৃত নির্বাচন আশা করব? নির্বাচন কমিশনকে ঘিরে বিতর্ক নিরসন না হওয়ার দায় কার? তবু নির্বাচন কমিশনই পারে এদেশের আপামর জনসাধারণের মনে আশার আলো জ্বালাতে। তা না হলে নির্বাচন এবং গণতন্ত্রের ভবিষ্যত আবারও সঙ্কটে নিপতিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে। আমরা গঠনমূলক রাজনীতি চাই। ব্যক্তি স্বাধীনতা চাই। ধ্বংসাত্মক রাজনীতির পরিবর্তন চাই। সবার উচিত এই চাওয়াকে সম্মান জানানো। আবার বিরোধী দলেরও উচিত হবে সরকারকে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করার সুযোগ দেয়া এবং দেশ পরিচালনায় সহায়তা করা। লেখক : সাংবাদিক
×