ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বেদনা বিষাদমুক্ত উৎসবে নববর্ষ

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ৯ এপ্রিল ২০১৮

বেদনা বিষাদমুক্ত উৎসবে নববর্ষ

যে কোন উৎসবে অপ্রীতিকর বা বিষাদময় ঘটনা ঘটুক, তা কারও কাম্য হতে পারে না। মানুষে মানুষে সম্মিলনের এই উৎসবে মানুষের ব্যাপক সমারোহ ঘটে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীরা ঘোরতর উৎসববিরোধী। আনন্দ-উল্লাস, সম্প্রীতি, পুনর্মিলন, মানুষে মানুষে এ রকম সংযোগের তারা শত্রু। তাই তারা উৎসবকে কেন্দ্র করে গোলযোগ, গোলমাল শুধু নয়, প্রাণ হরণের ঘটনাও ঘটিয়েছে। তার নিদর্শন দেখেছে বাংলাদেশ রমনার অশ্বথমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার। জঙ্গীরা এই হামলা চালিয়েছিল। তারা ধরা পড়ে বিচারের সম্মুখীনও হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে টিএসসির মোড়ে। অপরাধীরা ধরা পড়েনি, তাই বিচারও হয়নি। উৎসবে নারী ও শিশু-কিশোরীদের লাঞ্ছিত, নিগৃহীত হওয়ার ঘটনাও কম নয়। এতসব নেতিবাচক দিক থাকার পরও উৎসব মানেই আনন্দ। সেই আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে, মানুষের মনে। প্রশ্ন উঠেছে, কতিপয় দুর্বৃত্ত ও সন্ত্রাসীর কারণে উৎসবের আয়োজন হয়ে পড়বে সঙ্কুচিত? মানুষের ঢলের স্রোত তবে হবে না বহমান? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, নববর্ষের দিন রমনার বটমূলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে উন্মুক্ত স্থানে নববর্ষের অনুষ্ঠান চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। তবে রবীন্দ্র সরোবরে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অনুষ্ঠান চলবে রাত আটটা পর্যন্ত। ইউনেস্কো পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ঢাকার অনুকরণে এখন কলকাতায়ও এই শোভাযাত্রা চালু হয়েছে। এই শোভাযাত্রার অংশ হচ্ছে মুখোশ। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চাইছেন মুখোশ থাকবে হাতে। আশঙ্কা সন্ত্রাসী ও জঙ্গীরা মুখোশ পরে হামলা চালাতে পারে। এমনটা যে হতে পারে, তা তিনিই ভাল জানবেন। হাতিরঝিলে মানুষের যে ঢল নামে, দুপুরের পর হতে তা পাঁচটায় সঙ্কুচিত করা কতটা সম্ভব? রবীন্দ্র সরোবরে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা গেলে অন্যত্র কেন করা যাবে নাÑ সে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। কোন হুমকি থেকে এই সঙ্কোচন নয় বলে মন্ত্রী উল্লেখ করে জানিয়েছেনও সতর্কতা অবলম্বনের জন্য এসব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ব্যাপারটা যদি মাথাব্যথা সারানোর জন্য মাথা কেটে ফেলা হয়, তবে তা বিপজ্জনক বৈকি! বাঙালী জাতির উৎসবমুখর পরিবেশ পালনে এও এক ধরনের বিপত্তিকর অবশ্য। মন্ত্রী অবশ্য মজার কথা বলেছেন, ‘পাঁচটার পর যার যার বাড়িতে চলে যান। বাড়িতে গিয়ে অনুষ্ঠান করেন। আত্মীয়-স্বজনকে সময় দেন। কিংবা ঘরের ভেতরে বা হলরুমে অনুষ্ঠান করেন।’ মানুষে মানুষে সংযোগ স্থাপন বা মিলিত হওয়ার ক্ষণগুলো পাঁচটার পর লুপ্ত হয়ে যাবে। তবে, আর গৃহ মাঝে হৈ হৈল্লা না হোক মুড়ি-মুড়কি খাবার আয়োজন হয়ত হবে। তাতে প্রাণের টানে খোলা আকাশের নিচে বিস্তীর্ণ প্রান্তরজুড়ে মানুষের ঢলের মধ্যে যে প্রাণ প্রবাহ বয়ে যায়, তার ক্ষতচিহ্ন আঁকা হয়ে যাবে বিকালেই। এমনই নিয়তি আজ বাঙালীর! জঙ্গীবাদবিরোধী কার্যকলাপ রুখতে দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটানোর কথা সরকারীভাবেও বলা হচ্ছে। জাগরণের পথের যোগানীরা হলেনÑ সংস্কৃতি কর্মীরা। সে কারণেই সম্ভবত সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অনুষ্ঠানে কড়া নিরাপত্তার পাশাপাশি সার্চলাইটও ব্যবহার করা হবে। নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি পেয়ে দুই বছর বন্ধ থাকার পর এবারই জোট অনুষ্ঠান করছে। এটা তো বাস্তব এবং তা মনেও করেন জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস। তার মতে, কয়েক বছর ধরে অতিরিক্ত সতর্কতা ও কড়া নিরাপত্তা বজায় রাখতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো মানুষের স্বাভাবিক উদযাপনকে সঙ্কুচিত করে ফেলেছে। সাংস্কৃতিক প্রবাহ প্রাণহীন করে ফেলেছে, যা আমাদের ঐতিহ্যবিরোধী। বাংলা নববর্ষ বরণ বাঙালীর হৃদয়সঞ্জাত উৎসব। ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোত্র, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সার্বজনীন এই উৎসব প্রতি বছর নতুন মাত্রা পায়। বাঙালী নতুন করে শপথ নেয়, নববর্ষে নবপ্রাণের আবাহনে কল্যাণ ও মঙ্গল সাধনের ব্রতে। সেই জাতি জঙ্গী বা সন্ত্রাসের ভয়ে ভীত হয়ে উৎসবের আয়োজন সঙ্কুচিত করার পদক্ষেপে বিমর্ষ হতেই পারে। বিষাদের ছায়া এসে গ্রাস করতে পারে। চির নতুনের আবাহন করার এই লগ্নে প্রাঙ্গণ অঙ্গন থেকে মানুষকে ঘরে ফিরিয়ে নেয়ার ‘মহতী উদ্যোগ’ জাতি হিসেবে বাঙালীর জন্য অসম্মানজনক বৈকি। সশস্ত্রযুদ্ধে যে জাতি স্বাধীনতা এনেছে, সে জাতির সাংস্কৃতিক মিলনমেলা সঙ্কুচিত হয়ে আসবে ক্রমান্বয়ে, তা অভাবনীয়। অথচ এই নববর্ষ পালন অনুষ্ঠান বাঙালীকে জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিল। আর চার দশক পর নিষেধের বেড়াজালে রেখে ঢেকে উৎসবে মিলিত হওয়ার এই বিধিবিধিান ভারবহ, অস্বস্তিকর। অসহনীয় এবং অভব্য। বাঙালী একাত্তরে নিরাপত্তাহীনতার ভেতর দিয়ে পাকিস্তানী হানাদারদের নিধন শুধু নয়, তাদের পরাজিত করেছে। একালে কতিপয় উর্বর মস্তিষ্ক জঙ্গীর ভয়ে ভীত কাপুরুষের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া বাঙলীর সাজে না। ‘প্রাণে খুশির তুফান’ লাগার দিনে ভয়ের করাল থাবা সম্প্রসারিত হচ্ছে সর্বত্র। অজানা শঙ্কায় জাগ্রত হচ্ছে ভীতির সংস্কৃতি। আগাম ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ভীতি সঞ্চারের কাজটি চমৎকার সুনিপুণভাবে যে করা হচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য। বিধিনিষেধের কালো হাত এসে থাবা বসাচ্ছে বুঝি বাঙালীর প্রাণে প্রাণে যোগ হবার উৎসবে। যখন উৎসবের প্রতিপাদ্য হতো, ‘অনেক আলো জ্বালাতে হবে মনের অন্ধকারে’, তখন চারপাশকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করার কত কসরত যে দেখা যেত। অসভ্যতা, বর্বরতা, অভব্যতা কদর্য করে তোলে উৎসবকে। আর এসব থেকে রেহাই পাবার পন্থা হিসেবে প্রাণ প্রবাহকে গুটিয়ে নেয়ার জন্য এখনও যে চাপ তৈরি করা হয়, তাতে স্পষ্ট হয় মনের অন্ধকার ঘুচবে না। বরং কলুষতার কালোছায়া ছড়িয়ে পড়ে যেন সর্বত্র। ‘ভয় হতে তব অভয় মাঝে’ বলে রবীন্দ্রনাথকে ধারণ করে প্রয়াত সঙ্গীতজ্ঞ ওয়াহিদুল হক যে গেয়ে উঠতেন আসরে, অভয় নিয়ে লিখতেন নিবন্ধ প্রবন্ধ, কলাম, তখন সাহসে বুক বেঁধে দাঁড়াত নাগরিক বাঙালী। সেই অভয় বাণী শোনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন বিকেল শেষের সন্ধ্যা এবং রাতেও উৎসবের আলোকের ঝর্ণাধারায় রেঙ্গে ওঠার আয়োজন। আর এখানেই বিদ্ধ করা হয়েছে চোখ রাঙ্গানি দিয়ে ভয়কে বদ্ধমূল করে তোলায়। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ যে এত গাইলেন সঙ্কোচের বিহ্বলতা কাটিয়ে ‘শুভ কর্মপথে ধর নির্ভয় গান’। সেই গান ভয়ার্ত কণ্ঠে গাইতে হবে উৎসবের মঞ্চের নিচে বসে! বাঙালীকে বাঙালী হয়ে বেঁচে ওঠার পথটি দেখিয়েছিলেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালীর উৎসব, সংস্কৃতি সবকিছুকে রক্ষা করে তাকে বিকশিত করার জন্য যে সংগ্রাম, তা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন জীবনের সকল শ্রম, কর্মনিষ্ঠতা ও কুশলতা মিলিয়ে। বাঙালী অন্তঃপ্রাণ শেখ মুজিব সেই পঞ্চাশ, ষাটের দশকেও দলীয় কার্যালয়ে আয়োজন করতেন বাংলা নববর্ষ বরণের অনুষ্ঠানমালার। মুড়ি-মুড়কি খাওয়া হতো। তার সুদূর প্রেরণা আর সংগ্রামী চেতনার বাতাস দোলায়িত হয়েছিল ছায়ানটেও। এই ছায়ানটের হাত ধরেই নগরজীবনে বৈশাখ এসেছিল কেবল উৎসবের আমেজ নিয়ে নয়, দ্রোহের-প্রতিবাদের, স্বাধিকারের ও স্বাধীনতার আবাহন নিয়েও। বাঙালীর যে স্বাধীনতা আন্দোলন-সংগ্রাম, তাতে প্রাণ প্রবাহ যুগিয়েছে, আন্দোলনকে তীব্রতর করেছে সাংস্কৃতিক অভিযাত্রার দীপ্ততায়। পাকিস্তানী জান্তা শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সেই ষাটের দশকের শেষ দিকে এসে রমনা বটমূলে ছায়ানট যে আয়োজন করেছিল বৈশাখী উৎসবের, গত পাঁচ দশকের বেশি সময়ে তা ডালপালা ছড়িয়েছে এমনভাবে যে, সারাদেশেই বৈশাখী উৎসব আর মেলায় ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে তা সব বাঙালীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। এদিন তাই বাঙালী গেয়ে ওঠে, ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা/ এসো, এসো, এসো, হে বৈশাখ।’ সকল না পাওয়ার বেদনাকে ধুয়ে-মুছে, আকাশ-বাতাস ও প্রকৃতিকে অগ্নিস্নানে শুচি করে তুলতেই ফিরে ফিরে আসে পহেলা বৈশাখ। নতুন স্বপ্ন, উদ্যোগ ও প্রত্যাশার আলোয় রাঙানো নতুন বাংলা বছরেরও শুরু হয় যাত্রা। বৈশাখের নব প্রভাতেই বাঙালী তাই কায়মনে প্রার্থনা করে, যা কিছু ক্লেদাক্ত, গ্লানিময়, যা কিছু জীর্ণ বিশীর্ণ, দীর্ণ, যা কিছু পুরনো-তা বৈশাখের রুদ্র দহনে পুড়ে হয় যেন ছাই। গ্রীষ্মের এই তাপস নিঃশ্বাস বায়ে পুরনো বছরের সব নিষ্ফল সঞ্চয় নিয়ে যায়, দূরে যায়, দূর-দিগন্তে মিলায়। বর্ষ বরণের উৎসবের আমেজে মুখরিত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। গ্রীষ্মের অগ্নিজিহ্বা হয়তো বাতাসে লকলক করে উঠবে গেয়ে। উগড়ে দেবে বাংলার ভূ-প্রকৃতিতে অগ্নিবরণ নাগ-নাগিনীপুঞ্জ ও তাদের সঞ্চিত বিষ। তারপরও বাঙালী এই খরতাপ উপেক্ষা করে মিলিত হয় তার সর্বজনীন অসাম্প্রদায়িক উৎসবে। দেশের প্রতিটি পথে-ঘাটে, মাঠে- মেলায় অনুষ্ঠান জুড়ে থাকে কোটি মানুষের প্রাণের চাঞ্চল্য, আর উৎসবমুখরতার বিহ্বলতা। কারণ বৈশাখ মানেই বাঙালীর আনন্দের দিন। বাংলা নববর্ষে মহামিলনের এ আনন্দ উৎসবই বাঙালীকে ধর্মান্ধ অপশক্তির কূট ষড়যন্ত্রের জাল ভেদ করবার আর কুসংস্কার ও কূপমূকতার বিরুদ্ধে লড়াই করবার অনুপ্রেরণা দেয়। সেই সঙ্গে করে ঐক্যবদ্ধ। নতুন বছর মানেই এক নতুন সম্ভাবনা, নতুন আশায় পথ চলা। বৈশাখ কেবল আনন্দের নয়, প্রতিবাদেরও মাস। বৈশাখ অপশক্তিকে রুখে দাঁড়াবার শক্তি যোগায়। নববর্ষের প্রথম দিন বদলে যায় ঢাকা, বদলে যায় দেশ। শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলায় বর্ণবহুল হয়ে ওঠে। কাকডাকা ভোর থেকেই বাঙালী সংস্কৃতি লালনকারী আনন্দপিয়াসীরা পথে নামে। কায়মনে বাঙালী হয়ে ওঠার বাসনা জেগে ওঠে সবার মনে। বর্ণাঢ্য উৎসবের রঙে রেঙে ওঠার দিনটি প্রাণে প্রাণে প্রবাহ যোগায়। কিন্তু এই উৎসবকে মলিন করে দিয়ে ধর্মান্ধ, বাঙালী বিরোধীরা নানা ঘটনাও ঘটিয়েছে। রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণে বোমা হামলাও হয়েছে। টিএসসিতে কনসার্ট চলাকালে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। মেয়েদের প্রতি অশোভন আচরণও করা হয়েছে। আর এমন ঘটনায় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাই বাঙালীর প্রাণে প্রাণে যোগ ঘটে যে উৎসবে, সেই উৎসবকে সঙ্কুচিত করে তোলার প্রয়াস যখন ঘটান হয়, তখন জাতিসত্ত্ব¡ার অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। ‘আমি ভয় করব না, ভয় করব না/ দু বেলা মরার আগে মরব না ভাই মরব না’- বলে বিশুদ্ধ সুরে ওয়াহিদুল হক গান গাইতেন, তখন প্রবীণ-নবীন সকলের মধ্যে এক দুর্দান্ত সাহস এসে ভর করত, উৎসবের রঙ্গিন আলোয়। কিন্তু এখনকার দ-মু-ের হর্তাকর্তারা দুবেলা মরার মতো নিষ্প্রাণ হয়ে ভয়ের নৌকায় জাতিকে চড়িয়ে মাঝনদীতে ডুবিয়ে মারার জন্য যে ভয়ভীতির দরোজা ‘সিসিম ফাঁক’ বলে খুলে দিচ্ছেন আগাম, তাতে উৎসব ভীতির শকুনেরা ওড়াড়িই করবে। তাদের এই আগাম ভয়-ডর ছড়ানো অবদমিত করতে পারে বাঙালীর প্রাণ প্রবাহকে। উৎসবহীনতার এক বদ্ধতার ভেতর থুবড়ে পড়ায় বাধ্য করতে পারে জাতিকে। সশস্ত্রযুদ্ধে জয়ী জাতি এসব ভয়ভীতিকে চিরকাল তুচ্ছ করে এসেছে। তারা এসব মানবে কেন? চারণ কবি মুকুন্দ দাস সেই স্বদেশী আন্দোলন যুগে গাইতেন, ‘ভয় কী মরণে, রাখিতে সন্তানে, মাতঙ্গী মেতেছে আজ সমর রঙ্গে।’ এই যে ভয়হীনতার দিকে মানুষকে নিয়ে যাওয়া, ভীতিহীন পরিবেশে বেড়ে ওঠা, সাহসের বরাভয় কাঁধে নিয়ে বাড়ি ফেরা, সেই বাঙালী তার উৎসবকে গোধূলি লগনে সমাপ্ত করে দেবে- এমন বাধ্যবাধকতা যারা আরোপ করে, তাদের ‘নির্ণয় ন জানি’। কিন্তু এই দন্ডমুন্ডের হর্তাকর্তারা ভয়ের আবডালে নিজেদের আড়াল করার জন্য নানা পন্থা অবলম্বন করতেই পারেন। কিন্তু ‘বাঙালীকে আর দাবায়ে রাখবার পারবা না’ বলে যে উচ্চারণ ৪৬ বছর আগে বাঙালী শুনে এসেছে, সেই তাকে দাবানোর কোন অপচেষ্টাই কার্যকর হতে পারে না। উৎসবের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে পুলিশের স্বল্পতার কারণে। নাশকতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন আশঙ্কা থেকে মুখোশপরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ তো পারে, ছাত্রছাত্রী এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীদের সমন্বয়ে ব্রিগেড গঠন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সমুন্নত রাখতে। অনুষ্ঠানমালা রাত ৮টা পর্যন্ত চালান যেতে পারে সকলের সমন্বিত সহযোগিতায়। প্রাণের উচ্ছ্বাসে, নাড়ির টানে একে অপরের হাতে হাত রেখে সব ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে নববর্ষ উদ্যাপন করবে বাঙালী- এমনটাই হবার কথা। কিন্তু ভয়ের সংস্কৃতির বিস্তার ঘটিয়ে উৎসবের প্রাণ ভ্রমরাকে গলাটিপে মেরে ফেলার এই আয়োজন ভয়ঙ্কর। ভীতিমুক্ত উৎসব চাই সর্বত্র। চাই বেদনা বিষাদমুক্ত পহেলা বৈশাখ।
×