ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খরার পূর্বাভাস

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ৯ এপ্রিল ২০১৮

খরার পূর্বাভাস

বাংলা বছরের শেষার্ধে চৈত্রের দাবদাহের প্রকোপ দেখা না গেলেও আগামীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধিসহ তীব্র খরার পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়া ও জলবায়ু বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এয়ারোনটিকস এ্যান্ড স্পেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) ও ন্যাশনাল ওসেনিক এ্যান্ড এ্যাটমসফেরিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নোয়া) ক্লাইমেট ডাটা সেন্টার চলতি বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পূর্বাভাস দিয়েছে। সংস্থা দুটির মতে, উষ্ণম-লীয় সমুদ্র রাত এল নিনোর প্রভাবে এবার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তাপমাত্রা বাড়বে, যা ৪৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা হবে খরাকবলিত। ফলে পানির অভাবে কৃষি জমি ও জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাবে। ফলে ধান উৎপাদন হবে ব্যাহত। দেখা দেবে সুপেয় পানির অভাব। বাংলাদেশ অবশ্য এ বিষয়ে সজাগ ও সচেতন। প্রধানমন্ত্রী গত বছর ওয়ান প্ল্যানেট সামিটে যোগ দিতে গিয়েছিলেন ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় অভিন্ন প্রচেষ্টা নির্ধারণের লক্ষ্য এগিয়ে নিতে সরকারী-বেসরকারী অর্থায়নের কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই সম্মেলন। ২০১৫ সালে বিশ্বের ১৮৮টি দেশের ঐকমত্যে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির দুই বছরের মাথায় বৈশ্বিক তহবিলের বর্তমান অবস্থা এবং তা বাড়িয়ে তোলার লক্ষ্যে উন্নত দেশগুলোর দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের তাগিদ দিয়ে শেষ হয় এই সম্মেলন। তবে দুঃখজনক হলো, এ বিষয়ে খুবই কম আশাব্যঞ্জক সাড়া পাওয়া গেছে। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতোমধ্যেই সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গেছেন। অন্যদিকে উন্নত বিশ্বের অনেক দেশও কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে অবলম্বন করছে ধীরগতি। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জোরপূর্বক মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এতে যোগ করেছে বাড়তি ঝুঁকি। চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের অনেক পাহাড়-টিলা-বনাঞ্চল ইতোমধ্যেই প্রায় সাফ ও সমতলে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রামে গত কয়েক বছর ধরে অতিবৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। এ অবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংকের ৪৫০ কোটি ডলারের তহবিল গঠনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বৈকি। উল্লেখ্য, নগর ও স্থানীয় সরকারের একটি বৈশ্বিক জোটের সঙ্গে মিলে সর্ববৃহৎ এই ঋণদাতা সংস্থাটি সাগর পৃষ্ঠের বাড়ন্ত উচ্চতা থেকে সুরক্ষায় ১৫০টি উন্নয়নশীল শহরের যথাযথ অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা দেবে। তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের চট্টগ্রামও। এটি একটি আশাব্যঞ্জক খবর বৈকি। গত কয়েক বছর ধরেই বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। এর অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম অতিমাত্রায় কার্বন নিঃসরণের ভূম-লের বায়ুস্তরে ওজন হোলের আয়তন বৃদ্ধি, উত্তর মেরু, দক্ষিণ মেরুর ঘন ভারি তুষার স্তূপ গলে যাওয়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, সর্বোপরি মহাসাগরীয় স্রোত এল নিনো, লা নিনার প্রতিকূল প্রভাব। এর বাইরেও রয়েছে মনুষ্যসৃষ্ট নির্বিচারে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস, বিভিন্ন নদ-নদীতে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ ও ব্যারাজ নির্মাণ, কয়লা ও জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ, এমনকি বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত যুদ্ধবিগ্রহ, বোমাবাজি, ধ্বংসযজ্ঞ ইত্যাদি। উল্লেখ্য, এসব একদিনে বা কয়েক বছরে হয়নি। বরং সৃষ্টির পর থেকেই মানুষ নানাভাবে নানা উপায়ে ক্রমাগত ধ্বংস করে চলেছে প্রকৃতিকে। সেটা বর্তমানে এই পর্যায়ে গিয়েছে যে, প্রকৃতিও বিরূপ হয়ে ফুঁসে উঠেছে। দেখা দিয়েছে রুদ্ররূপে। আশার কথা এই যে, বিলম্বে হলেও বোধোদয় ঘটেছে মানুষের। অতঃপর ধরিত্রীকে রক্ষার অনিবার্য প্রয়োজনে সর্বস্তরে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক ও বহুজাতিক ধরিত্রী সম্মেলন। প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনের অগ্রগতি সন্তোষজনক এবং একটি সবুজ পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য ইতিবাচক। সার্বিকভাবে চুক্তিটিতে জলবায়ু তহবিলে অর্থায়নের বিষয়টি অস্পষ্ট থাকলেও এবং কিছু বিষয় দুর্বলভাবে উপস্থাপিত হলেও বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনমত ও সচেতনতা সৃষ্টিতে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিশ্বের ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রপ্রধানদের বোধোদয়সহ দায়িত্বশীল ভূমিকা এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রত্যাশিত। তবে শেষ পর্যন্ত উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলার পথ বাংলাদেশকে নিজ উদ্যোগেই খুঁজে নিতে হবে।
×