ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে বর্ষবরণের আয়োজন

প্রকৃতিতে বৈশাখের পদধ্বনি

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ৯ এপ্রিল ২০১৮

প্রকৃতিতে বৈশাখের পদধ্বনি

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ চৈত্রের শেষপ্রান্তে এসে যথারীতি প্রকৃতিতে বাজতে শুরু করেছে বৈশাখের পদধ্বনি। আর কদিন পরেই নতুন বছরের দিন শুরু হবে। বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ বরণ করতে তাই কতইনা আয়োজন চলছে। রাজশাহীতেও কমতি নেই এ আয়োজনের। বৈশাখে বর্ণিল আয়োজনে শামিল হতে উৎসব প্রিয় বাঙ্গালীর যেন ইচ্ছের শেষ নেই। রাজশাহী অঞ্চলের সবখানে চলছে বর্ণিল বর্ষবরণের বহুমাত্রিক আয়োজন। সার্বজনিন এ উৎসবকে ঘিরে বিপণি বিতানে যেমন শুরু হয়েছে কেনাকাটার ধুম তেমনি গ্রামের ঘরে ঘরে ও পাড়া-মহল্লার ছোট ছোট দোকানপাট ও দর্জিপাড়ায় লেগেছে বৈশাখ বরণের প্রস্তুতি। নতুন নতুন জামা কাপড় তৈরির হিড়িক সবখানে। দুয়ারে বৈশাখ তাই এখন শহরের মার্কেটে বিপণি বিতানে এখন বৈশাখী আমেজ। কেনাকাটার ধুম। বাংলার ঐতিহ্যকে ধারণ করে পোশাকে বসান হচ্ছে গ্রামীণ ছাপ। শহর জীবনের পাশাপাশি গ্রামের পাড়া মহল্লাতেও বৈশাখী প্রস্ততির কমতি নেই। উৎসব পালনের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন তারা। প্রতি বছরের মতো এবারও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন বিপণি বিতানগুলো বেচা-বিক্রি জমে উঠছে। পহেলা বৈশাখ বাঙালীর ঐতিহ্য ধরেই সামনে এগুবে আর সে জন্যে আজ বাঙ্গালীর আপন অস্তিত্বকে তুলে ধরার এত ব্যাকুলতা। মাটি ও কাঠের তৈরি বিভিন্ন ধরনের গহনা, চুরি, মাটির তৈজসপত্র, গৃহসজ্জা ও হস্তজাত শিল্প সামগ্রী। পহেলা বৈশাখে মিষ্টির দোকানে নানা ধরনের মিষ্টান্ন আর দইয়ের কেনাবেচার প্রচলন বহু পুরনো হলেও বৈশাখের বর্ষবরণ উৎসবের অন্যতম উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মিষ্টি, দই আর ইলিশ। রাজশাহীর বিভিন্নস্থানে ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে রাজশাহী নগরীর নিউমার্কেট সংলগ্ন থিম ওমর প্লাজায় শুরু হচ্ছে ৫ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। এরই মধ্যে বৈশাখী দোলায় বাঙ্গালীর চিরাচরিত উৎসব উদ্যাপন করতে কেনা-কাটায় এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ছুটে চলেছেন ক্রেতারা। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাধ্যমত কেনাকাটায় মেতেছেন বাঙালী ললনা, শিশু ও গৃহবধূসহ আবালবৃদ্ধ। রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার, আরডিএ মার্কেট, নিউমার্কেট ও অন্যান্য বিপণি বিতানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চলছে কোনাকাটা। সন্ধ্যার পর সাহেব বাজারে ক্রেতার উপচেপড়া ভিড়ে পা রাখার জায়গা থাকছে না। শিশু-কিশোর-কিশোরী, গৃহবধূ, বয়স্ক সবাই ব্যস্ত কেনাকাটায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বৈশাখী বেচাকেনা শুরু হয়েছে এপ্রিলের শুরু থেকেই। গত শুক্রবার থেকে বেচা বিক্রি বেড়েছে বলে জানান তারা। নগরীর সাহেব বাজার আরডিএ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, বৈশাখ উপলক্ষে দোকানে বিভিন্ন ধরনের পোশাক আয়োজন করা হয়েছে। সাধ্যর মধ্যে সবকিছু পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তিনি। দেশীও ঐতিহ্য নিয়ে বৈশাখ উপলক্ষে তৈরি করা হয়েছে শিশু, কিশোর, কিশোরীসহ সবধরনের ব্যক্তির জন্য রুচিশীল পোশাক। তিনশত থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত পোশাক রয়েছে তার দোকানে। এ দিকে শাড়ির দোকানগুলোতে নারী ও কিশোরী ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। ওই মার্কেটের ‘মনে রেখো’ ফ্যাশানের এক কর্মচারী জানান, ঈদের মতো কেনাকাটা হচ্ছে। বৈশাখ উপলক্ষে দোকানে দেশীয় শাড়ির ওপরে নিজ ব্যবস্থা নক্সার কাজ করা শাড়ি রয়েছে। শিশুদের পোশাকের দোকানেও বিভিন্ন ধরনের বৈশাখী পোশাকের সাজসজ্জা লক্ষ্য করা গেছে। শিশুদের পোশাকের মধ্যে রয়েছে সাদা ফতুয়া ও লাল ধুতির সঙ্গে ফতুয়ার ওপরে একতারা, ডুবি তবলা, একতারা দো-তারা ছাপান পোশাক। নিউমার্কেটে কথা হয় সরকারী কর্মকর্তা জাফর আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, নিজের জন্য পোশাক না কিনলেও স্ত্রী, সন্তানদের জন্য পোশাক কিনেছেন। অটোরিক্সা চালক সেলিম রেজা আরডিএ মার্কেটে এসছেন দুই ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে। তিনি বলেন নববর্ষ উপলক্ষে ছেলের জন্য বৈশাখী ফতুয়া এবং মেয়ের জন্য বৈশাখী শাড়ি কিনেছেন তিনি। এ দিকে বৈশাখের আয়োজন চলছে ঘরেবাইরে সবখানে। যে যার মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন নববর্ষ উদ্যাপনের। পাড়া-মহল্লার টেলারিংয়ের দোকানগুলোতে এখন চোখে পড়ার মতো ব্যস্ততা। এ দিকে বৈশাখ উপলক্ষে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ও বিভিন্ন বিভাগে চলছে নানা আয়োজন। নগরের খাবার হোটেল রেস্তরাঁ ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো সাজান হচ্ছে বৈশাখের আবহে। সবখানে একটি উৎসব উৎসব ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। গ্রামের বিভিন্ন স্থানেও বৈশাখী মেলার আয়োজন শুরু হয়েছে, চলছে প্রস্তুতি। এ ছাড়া ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী কলেজেও এবার ভিন্ন মাত্রায় বৈশাখ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহা. হবিবুর রহমান বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনাই এবার ব্যতিক্রমী আয়োজনে এ কলেজে বৈশাখ উৎসবের প্রস্তুতি চলছে।
×