ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুই বাংলার সংস্কৃতির সেতুবন্ধন ॥ রাবিতে মৈত্রী নাট্যোৎসবের সমাপনী

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ৮ এপ্রিল ২০১৮

দুই বাংলার সংস্কৃতির সেতুবন্ধন ॥ রাবিতে মৈত্রী নাট্যোৎসবের সমাপনী

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ, জ্বলন্ত চারমিনার হাতে অস্থির পায়চারি করছে গোয়েন্দা দীপক চট্টোপাধ্যায়। হঠাৎ বীভৎস শব্দে লাল টেলিফোনটা বেজে উঠলো। ফোন ধরতে ওপাশ থেকে কর্কশ শব্দে বলে উঠলো, আমি বাজপাখি বলছি। পরিচিত কণ্ঠস্বরটা শুনেই যেন দীপকের মেরুদ- বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল। প্রত্যত্তরে চিৎকার করে দীপক বলল, কী! তুমি আবার পালিয়েছ! তোমাকে আমি ছাড়ব না, আবার ধরব। ওপাশ থেকে অট্টহেসে বাজপাখি বলল, আমি তো তাই চাই বন্ধু। শুরু হলো দস্যু বাজপাখি আর তুখোড় গোয়েন্দা দীপকের ইঁদুর-বেড়াল খেলা। চরম থ্রিলার, ধুন্ধুমার এ্যাকশন। কখনও বাজপাখি চাল চালছে, কখনও গোয়েন্দা দীপক চাল মাত করছে। বাজপাখির সঙ্গে লড়তে লড়তে দীপকের শত্রুশিবিরে এসে জুটলো আরও দুই ভয়ঙ্কর শত্রুÑকালনাগিনী ও ড্রাগন। শেষতক সব অপরাধীকে ঘায়েল করে গোয়েন্দা দীপক যেন মানবতারই জয় দেখালো। না, এটি কোন সিনেমা বা রোমাঞ্চকর থ্রিলার উপন্যাস নয়। ভারতের অশোকনগর নাট্যদলের পাল্প ফিকশন ঘরানার নাটক ‘রাত বিরাতের রক্তপিচাশ’ এর কাহিনী এটি। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সপ্তাহব্যাপী ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী নাট্যোৎসবে’ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। প্রথমবারের মতো নাট্যদলটি ভারতের বাহিরে রাবির শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (টিএসসিসি) এ নাটক প্রদর্শন করল। চমৎকার মঞ্চসজ্জা, দৃষ্টিজুড়ানো আলোর ব্যবহার, চরম উত্তেজনাপূর্ণ গল্পের গাঁথুনি আর সাবলীল অভিনয় দিয়ে টিএসসিসির কয়েক শত দর্শকের মন মাতিয়ে দিয়েছে। ‘রাত বিরাতের রক্তপিচাশ’ তো বটে, নাট্যোৎসবে অংশ নেয়া প্রতিটি নাটকই বেশ দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। রসায়ন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হাসান তারিক পরশ বলেন, নাটকগুলো দেখতে বেশ ভাল লাগছে। উৎসবে দুই দেশের সংস্কৃতির মিলন দেখার সুযোগ পাচ্ছি। এমন ধরনের আয়োজন যত বেশি হবে ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক চর্চাটা আরও বেশি গতিশীল হবে। নাট্যোৎসবকে ঘিরে গোটা ক্যাম্পাসে উৎসবের ছোঁয়া লাগে। সংস্কৃতিকর্মী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলেই দুই দেশের থিয়েটারকে একত্রে দেখতে পাওয়ায় বেশ রোমাঞ্চিত। এমন উদ্যোগ যেমন ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে গতি সঞ্চার করবে বলে সংশ্লিষ্টদের মত, বৈশ্বিক নাট্য সংস্কৃতির মেলবন্ধনে কাজ করবে। ভারতের অশোকনগর নাট্যদলের প্রধান অভি চট্টোপাধ্যায় বলেন, দুই দেশেই বাংলা আছে, কিন্তু মাঝখানে কাঁটাতার দুই বাংলাকে এক হতে দিচ্ছে না। তবে এই ধরনের উৎসবে সংস্কৃতির আদান-প্রদানের মাধ্যমে দুই দেশের দূরত্বটা ঘুচবে। আমরা আরও বেশি এ দেশে নাটক করতে চাই, এ দেশের নাটককে আমাদের ওখানে নিয়ে যেতে চাই। নাট্যকলা বিভাগের সভাপতি ড. মোঃ আতাউর রহমান বলেন, একটা জাতির পরিচয় জড়িয়ে থাকে তার সংস্কৃতির সঙ্গে। সংস্কৃতির যত উন্নয়ন হবে, জাতি হিসেবে তত উন্নতি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের উৎসবের ফলে একাডেমিক ও গ্রুপ থিয়েটার চর্চা আরও বেগবান হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, থিয়েটার চর্চায় সকলের একটা সমন্বয় ও সম্প্রীতি দরকার। এই সম্প্রীতির মেল বন্ধনই সংস্কৃতি চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সে লক্ষ্যেই দুই দেশের নাটককে এক করার একটা প্রয়াস এই উৎসব। নাট্যোৎসবের দুই দেশের নাটক এক হয়ে দর্শকের সামনে হাজির হয়ে সংস্কৃতির একটা সেতু নির্মাণ করেছে। প্রসঙ্গত গত ১ এপ্রিল রবিবার সপ্তাহব্যাপী এই নাট্যোৎসবের উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার জয়ী নাট্যজন মলয় ভৌমিক। নাট্যোৎসবে বাংলাদেশ ও ভারতের ১০টি নাট্যদলের মোট ১৩টি নাটক প্রদর্শিত হয়। শনিবার ছিল নাট্যোৎসবের শেষ দিন।
×