ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অবশেষে জেলা ফুটবল লীগ শুরুর উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ৮ এপ্রিল ২০১৮

অবশেষে জেলা ফুটবল লীগ শুরুর উদ্যোগ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ যেদিন থেকে বাংলাদেশের ফুটবল ঢাকা কেন্দ্রিক হয়ে যায়, সেদিন থেকেই আসলে ফুটবলটা মরে যেতে শুরু করে। ফুটবলার তৈরির পাইপলাইন ছিল জেলা ফুটবল, স্কুল ফুটবল, শেরেবাংলা ও সোহরাওয়ার্দী ফুটবল... এগুলো যখন অনিয়মিত হয়ে পড়ে (সেই সঙ্গে চালু হয়েও বন্ধ হয়ে যায় বাফুফের ফুটবল একাডেমি), তখন এর ধাক্কাটা গিয়ে লাগে জাতীয় দলের পারফর্মেন্সে। ১৭ মাস আগে ভুটানের কাছে লজ্জাজনক ৩-১ গোলের হার সেই পারফর্মেন্সেরই প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) চেষ্টা করে যাচ্ছে দেশের সর্বস্তরে ফুটবলকে জাগিয়ে তোলার। কিন্তু অতীতে পারেনি। এ জন্য তাদের শুধু ঢাকার প্রিমিয়ার লীগ ও অন্য লীগগুলো নিয়মিত চালু রেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। কিন্তু ফুটবলের মান এতটাই নিচে নেমে গিয়েছিল এবং কোন ফুটবলারের ‘স্টার-ইমেজ’ না থাকায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে বলতে গেলে দর্শকই আসেনি। অথচ ঢাকার বাইরে সিলেট, চট্টগ্রামে, যশোরে বা রাজশাহীতে কোন আন্তর্জাতিক বা লীগ ম্যাচ হলে ঠিকই গ্যালারিতে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে ফুটবল অনুরাগীদের। তার মানেই ফুটবলের জনপ্রিয়তা এখনও আছে, তবে সেটা সন্দেহাতীতভাবে ঢাকার বাইরে। বাফুফের জেলা ফুটবল লীগ (ডিএফএ) নিয়মিতকরণের চেষ্টা পুরোপুরি সফল হয়েছে, এমনটা অবশ্য জোর দিয়ে বলা যাবে না। কারণ জেলা ফুটবলে নানাবিধ সমস্যা আছে। সময় মতো মাঠ পাওয়ার সমস্যা, আর্থিক সঙ্কট, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে বিরোধ, ক্লাব স্বল্পতা, ক্লাবগুলোর স্থানীয় রেফারিদের প্রতি অবিশ্বাস... ইত্যাদি। এমনও দেখা গেছে, মাত্র ৪-৫টি ক্লাব নিয়েই নামকাওয়াস্তে লীগ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। তাছাড়া মনজুর কাদেরের মতো ‘ফুটবলপাগল’ ক্রীড়া সংগঠকেরও প্রচুর অভাব। যিনি একসময় ৬৪ জেলা ফুটবল সংস্থাকে মোট ৬৪ লাখ টাকা ও ১০টি করে ফুটবল দিয়ে উৎসাহ দান করেছিলেন। বাফুফে দেশের ফুটবলের উন্নয়নকল্পে বাফুফের আওতাধীন দেশের ৬৪টি জেলায় ‘জেলা ফুটবল লীগ ২০১৮’ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে শনিবার বাফুফে ভবনে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় বাফুফের সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন, নির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ ও জেলা ফুটবল লীগ কমিটির সদস্যরা জেলা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় প্রতিটি জেলাকে ফুটবল লীগ আয়োজনের জন্য তিনলাখ টাকা করে অনুদান প্রদান করা হবে মর্মে ঘোষণা করা হয়, যার মধ্যে সভা শেষে প্রাথমিকভাবে একলাখ টাকার চেক প্রদান করা হয় এবং অবশিষ্ট অর্থ পর্যায়ক্রমে প্রদান করা হবে। এছাড়াও খেলোয়াড়দের উন্নতমানের প্রশিক্ষণের জন্য বাফুফে হতে ফুটবল প্রশিক্ষক প্রেরণসহ ফুটবলের উন্নয়নে সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করা হয়। ডিএফএগুলোকে অচিরেই জানাতে বলা হয়েছে লীগ শুরুর সম্ভাব্য তারিখ। ২০০৮ সাল থেকে গঠিত জেলা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন (ডিএফএ) নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছেই। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার (ডিএসএ) অসহযোগিতায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি ডিএফএ। ফুটবলের জন্য চাহিদামতো স্টেডিয়াম দেয়নি ডিএসএ। অর্থ সঙ্কটও মারাত্মক ছিল ডিএফএ’র। ফিফা প্রতিনিধির কাছে এ নিয়ে অভিযোগও করা হয়েছে অতীতে। বাফুফে ডিএফএ’র বিষয়ে তিনটি পথে সমাধান খুঁজেছে। এমনও ভাবা হয়েছিল ডিএফএ বিলুপ্ত করা হবে। জেলার ফুটবলের ওপর বাফুফের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা, জেলাগুলোকে বাফুফের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা এবং সর্বোপরি জেলার ফুটবলে সরকারী নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতেই ডিএসএ থেকে আলাদা হয়ে ডিএফএ গঠনের নির্দেশনা দিয়েছিল ফিফা। ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত এ দেশের ফুটবল কর্মকর্তারা ফিফা-এএফসির কাছে এত বেশি অভিযোগ করেছিল যে, ফিফাও কঠোর হয় বাফুফের ওপর। তাছাড়া সে সময়কার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণেই বাফুফে কর্মকর্তারা বাধ্য হয়েছিলেন ফিফার নির্দেশনা মেনে নিতে। তখন থেকেই বাফুফে কর্মকর্তারা বলে আসছিলেন সরকারী প্রভাবমুক্ত ডিএফএ গঠিত হলেও এর উপদেষ্টা কমিটিতে থাকবেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপাররা, যাতে জেলা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন জেলায় লীগ চালাতে প্রশাসনের সহায়তা পায়। কিন্তু শুরু থেকেই তখনকার বাফুফে কমিটির বিরোধী একটি পক্ষ কানভারি করে জেলা স্টেডিয়ামের মালিক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের। ডিএসএ থেকে ডিএফএ আলাদা হয়ে যাওয়ার পর তারা আর এনএসসির অধীনে থাকেনি। এখন দেখার বিষয় জেলা ফুটবলের মাধ্যমে বাংলাদেশের ফুটবলের হারানো গৌরব আবারও ফিরে আসে কি না।
×