ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের বিতর্ক প্রতিযোগিতা

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৮ এপ্রিল ২০১৮

প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের বিতর্ক প্রতিযোগিতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের অংশগ্রহণে বিতর্ক প্রতিযোগিতা। ‘যুক্তির আলোয় দেখি’ শিরোনামে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত বিতর্ক প্রতিযোগিতার স্লোগান থাকবে ‘দৃষ্টিতে আমার পৃথিবী’। আগামী ২১ এপ্রিল এফডিসিতে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন হবে। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরন। সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের পরিচালক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, জাহিদ রহমান, ড. এসএম মোর্শেদ এবং মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান খান। সংবাদ সম্মেলনে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, পিছিয়ে থাকা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মাঝেও রয়েছে অফুরন্ত প্রতিভা। সুযোগ পেলে তারা নিজেদের অমিত প্রতিভা তুলে ধরতে পারেন। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা ও সচেনতার অভাবে জাতীয় উন্নয়নের মূল ¯্রােতে এখন পর্যন্ত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পুরোপুরি সম্পৃক্ত করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষা, সংস্কৃতিতে বরাবর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা অবদান রাখলেও প্রয়োজনীয় সরকারী-বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা তাদের মেধার পরিপূর্ণ প্রকাশ করতে পারছে না। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য আমরা এখনও প্রয়োজনীয় শিক্ষার পরিবেশ ও অবকাঠামো নিশ্চিত করতে পারিনি। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধীর জন্য নেই উঠানামার র‌্যামপ। সরকারীভাবে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ব্রেইল পদ্ধতিতে বই পাওয়া গেলেও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষাগ্রহণে এখনও ব্রেইল বই বা বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। ট্রেনস্টেশনে সিনিয়র সিটিজেন ও নারীদের সঙ্গে প্রতিবন্ধীদের আলাদা লাইনে টিকেট কাটার সুযোগ থাকলেও বাস ও লঞ্চে প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা কোন সুযোগ নেই। নেই প্রতিবন্ধীবান্ধব ফুটপাথ, ট্রাফিক সিগন্যাল। আমরা এখনও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারিনি। চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের জন্য নন-গেজেটেড ৩ শতাংশ এবং গেজেটেড ১ শতাংশ কোটা রয়েছে যা অপর্যাপ্ত। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের বাজারে প্রতিবন্ধী ভাতা মাত্র ৭০০ টাকা, যা অত্যন্ত অপ্রতুল। এ ছাড়াও দেশের সকল প্রতিবন্ধীকে এই ভাতার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। তবে সরকার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের কল্যাণে বিভিন্নভাবে কাজ করছে। সমাজসেবা অধিদফতর ৬৪টি জেলায় ৬৪টি সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আবাসিক ও অনাবাসিক সুবিধাসহ এসব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসমূহে ব্রেইল পদ্ধতিতে শিক্ষাপ্রদান, বিনামূল্যে ব্রেইল বই বিতরণ, শিক্ষা উপকরণ প্রদান, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের হোস্টেল সুবিধাসহ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে সরকার। এ ছাড়াও সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ প্রণয়ন, ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবাকেন্দ্র স্থাপন, ৩২টি ভ্রাম্যমাণ থেরাপি ভ্যানের মাধ্যমে বিনামূল্যে সেবাপ্রদান, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রায় ৭৩টি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুল চালু করেছে। হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ জানান, এই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রতিবন্ধীদের নানাবিধ সমস্যা, তাদের নিয়ে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, পরিবার ও রাষ্ট্রের দায়িত্বÑ এসব বিষয়সমূহ স্থান পাবে। প্রত্যেক দলে ৫ শিক্ষার্থী ছায়া সংসদের আদলে এ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে। প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে প্রতিবন্ধীদের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, ব্যথা-বেদনার গল্প গাঁথা তুলে ধরা হবে। মূলত প্রতিবন্ধীদের প্রতি পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়াস হিসেবেই এ আয়োজন। এতে করে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের মূল ধারায় আনয়নের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
×