ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ষাটনলে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পে ৫ শতাধিক রোগীকে বিনামূল্যে ওষুধ দেয়া হয়

এবার ইলিশ উৎপাদন আরও বাড়বে ॥ কোস্টগার্ড ডিজি

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৮ এপ্রিল ২০১৮

এবার ইলিশ উৎপাদন আরও বাড়বে ॥ কোস্টগার্ড ডিজি

গাফফার খান চৌধুরী, চাঁদপুরের উত্তর মতলব থেকে ফিরে ॥ এবার রূপালী ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়বে। যা দেশের মানুষের মাছের চাহিদার অনেকটাই পূরণ হবে। পাশাপাশি বাড়তি ইলিশ রফতানি করে দেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে। ইলিশের উৎপাদন বাড়ার পেছনে কোস্টগার্ডের পাশাপাশি বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন জেলেসহ সংশ্লিষ্টরা। ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় জেলেদের প্রতি মাসে চল্লিশ কেজির পরিবর্তে ৮০ কেজি করে চাল দেয়া হচ্ছে। এ কারণে জেলেরা আর চুরি করে জাটকা ধরছেন না। কোস্টগার্ডের তৎপরতার কারণে মা ইলিশ যেমন রক্ষা পাচ্ছে, তেমনি নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ডাকাতদের উৎপাত কমে গেছে। জেলেসহ স্থানীয়রা রীতিমত নিরাপদে রয়েছেন। শনিবার চাঁদপুর জেলার উত্তর মতলব থানাধীন ১ নং ষাটনল ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে কোস্টগার্ড কর্তৃক বিশ্বস্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিনামূলে চিকিৎসা সেবার উদ্বোধন শেষে এমনটাই জানালেন বাহিনীর মহাপরিচালক রিয়ার এ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী। ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের আয়োজন করেন তার স্ত্রী বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের সভানেত্রী বিশিষ্ট গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাঃ আফরোজা আওরঙ্গজেবের নেতৃত্বে একটি চিকিৎসক দল। দলটি পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুকে চিকিৎসা সেবা দেন। রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ দেন। ইউনিয়ন চত্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কোস্টগার্ড মহাপরিচালক রিয়ার এ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী ৫০ প্রান্তিক জেলের মধ্যে বিনামূল্যে লাইফ জ্যাকেট বিতরণ করেন। বিতরণ শেষে তিনি বলেন, এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়বে। কারণ আমরা জেলেদের জাটকা ধরলে দেশের কি ক্ষতি হয়, তা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। জেলেরাও আর জাটকা ধরবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন। জেলেরা তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করে চলেছেন। পাশাপাশি কোস্টগার্ড নিয়মিত ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে খ্যাত এলাকাটিতে জোরালো টহল দিয়ে যাচ্ছে। তাতে মা ইলিশ রক্ষা হচ্ছে। জাটকা ধরা বন্ধ হয়েছে। কোস্টগার্ডের টহলের ফলে নদীর পাড় ঘেঁষা এলাকাটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও উন্নয়ন ঘটেছে। ডাকাতদের উৎপাত নেই। কোস্টগার্ডের ধারাবাহিক অভিযানে এখন পর্যন্ত ২৬৩ ডাকাত অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়েছে। জানা গেছে, ষাটনল ইউনিয়নটি ১৫ গ্রাম নিয়ে গঠিত। পনেরোটি গ্রামের মধ্যে নদী পাড়ে গড়ে ওঠা তিনটি গ্রামের মানুষের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন মাছ শিকার। পনেরো গ্রামে প্রায় ১৯ হাজার জনগণ রয়েছে। যার মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি পুরুষ। পুরুষদের রোজগারের অন্যতম উৎস মৎস্য শিকার। মাছ ধরে তা বিক্রি করেই তাদের জীবিকা চলে। এছাড়া যৎসামান্য কৃষি কাজ থেকে আয় হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা উত্তর মতলবের ইউএনও শারমীন জাহান জানান, বর্তমানে দুই মাস ইলিশ ধরা বন্ধ আছে। এই মৌসুমে জেলেদের ৪০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন জানান, উপজেলায় প্রায় নয় হাজার তালিকাভুক্ত মৎস্যজীবী আছে। প্রথম দিকে ইলিশ ধরা বন্ধ মৌসুমে তাদের মাঝে মাথা পিছু ১০ কেজি করে চাল দেয়া হতো। পরে সরকার তা বাড়িয়ে ২০ কেজি করে। পরবর্তীতে তা আরও বাড়িয়ে ৪০ কেজি করা হয়। বর্তমানে প্রতি পনেরো দিন পর পর প্রতি জেলেকে ৪০ কেজি অর্থাৎ মাসে প্রতি জেলেকে ৮০ কেজি চাল দেয়া হচ্ছে। এছাড়া জেলেদের পরিবারের মধ্যে ছাগল, হাঁস-মুরগি, গরুসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে। জেলেদের সঙ্গে কথা বলেও জানা গেছে, তারা কোস্টগার্ডের তৎপরতায় খুশি। তাদের তৎপরতার কারণে ডাকাতদের উৎপাত কমেছে। এলাকায় রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ঘটেছে। আগামী ৩০ এপ্রিল ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে। সরকার চাল দিয়ে সহায়তা করায় তারা জাটকা ধরা বন্ধ করেছেন। আহমেদ আলী (৬০) নামের এক জেলে বলছিলেন, জাটকা ধরে কোন লাভ নেই। কারণ জাটকা ধরতে যে পরিশ্রম হয়, বড় ইলিশ ধরতে তার চেয়ে পরিশ্রম অনেক কম হয়। জাটকা বিক্রি করা কঠিন। বড় ইলিশ ধরা সহজ। দামও বেশি। স্বল্প সময়ের মধ্যেই বেশি ইলিশ পাওয়া যায়। দামও বেশি। তাই পুষিয়ে যায়। এসব চিন্তাভাবনা করে জেলেরা জাটকা প্রায় ছেড়েই দিয়েছে। অনুষ্ঠানে কোস্টগার্ডের সহকারী গোয়েন্দা পরিচালক লেফটেনেন্ট কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মারুফসহ কোস্টগার্ডের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×