ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হবিগঞ্জের স্কুলছাত্রী বিউটি ধর্ষণ ও হত্যার মোটিভ উদঘাটিত

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৮ এপ্রিল ২০১৮

হবিগঞ্জের স্কুলছাত্রী বিউটি ধর্ষণ ও হত্যার মোটিভ উদঘাটিত

নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ, ৭ এপ্রিল ॥ ইউপি নির্বাচনে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে স্কুলছাত্রী বিউটি আক্তার হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত প্রধান আসামি বাবুলের মা বিজয়ী ইউপি সদস্য কলম চাঁন বিবির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আসমা আক্তারের স্বামী ময়না মিয়াই পরিকল্পিতভাবে এই নিষ্ঠুর হত্যাকা- ত্বরান্বিত করেছে। ময়না মিয়ার এমন ফাঁদে পা দিয়ে পিতা সায়েদ আলীই ভাড়াটে কিলারসহ ময়না মিয়া ও কামাল এবং আরও কয়েক সহযোগীকে দিয়ে নিজ সন্তান বিউটিকে নির্মমভাবে হত্যা করায়। শনিবার সন্ধ্যায় হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এমনই বিস্তারিত তথ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট ওই আলোচিত হত্যাকা-ের প্রকৃত মোটিভ পুলিশ উদঘাটন করতে পেরেছে বলে দাবি করলেন এসপি বিধান ত্রিপুরা পিপিএম। এদিকে একই দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে সায়েদ আলী একই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে ওই সন্তান হত্যায় তার সম্পৃক্ততা থাকার কথা অকপটে স্বীকার করে। তার আগে ময়না মিয়াসহ আরও একজনের ১৬৪ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে বিউটি হত্যায় তাদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার এবং ভাড়াটে খুনীর নাম বলেছে। প্রেস ব্রিফিংকালে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন এডিশনাল এসপি আ স ম সামছুর রহমান ভূইয়া, এডিশনাল এসপি রবিউল আলম, এএসপি হেডকোয়ার্টার মোঃ নাজিম উদ্দিন, ডিআইও ওয়ান মোঃ মাহবুবুর, ডিবির ওসি শাহ আলম ও সদর থানার ওসি ইয়াসিনুল হক প্রমুখ পুলিশ কর্মকর্তারা। গত ২১ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৭টার দিকে স্কুলছাত্রী বিউটি আক্তারকে (১৪) হবিগঞ্জ জেলার নবগঠিত উপজেলা শায়েস্তাগঞ্জের ব্রাহ্মণডোরা গ্রাম থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বাবুলসহ তার কয়েক সহযোগীরা। পরবর্তীতে ওরা বিউটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। তবে ঘটনার অন্তত ২০ দিন পর খোঁজ পেয়ে মা হোসনে আরা তার মেয়ে বিউটিকে প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল লোকা থেকে নিয়ে যায় সূচীউরা গ্রামের জনৈক জালালের বাড়িতে। সেখানেই তাকে রেখে চলে যায় তার মা। এদিকে ঘটনা জানাজানি হলে বিউটিকে সেখান থেকে নিয়ে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে তার মেডিক্যাল টেস্ট করায় তার পরিবার। ৪/৫ দিন পর বিউটিকে বাড়িতে নিয়ে এসে সালিশ বিচারের মাধ্যমে বাবুল কর্তৃক অপহরণ ও ধর্ষণের বিচার চাইলে তাতে কেউ এগিয়ে আসেনি। ফলে গেল ১৪ ফেব্রুয়ারি বিউটির বাবা কন্যা অপহরণ ও ধর্ষণের বিচার চেয়ে কোর্টে একটি পিটিশন মামলা করেন। অথচ শায়েস্তাগঞ্জ থানায় মামলাটি ৪ মার্চ রেকর্ড হয়। এতে আসামি করা হয় বাবুল, তার মা ইউপি সদস্য কলম চাঁন ওরফে আবুনী ও বাবুলের চাচাতো শ্যালিকা সাথীকে। এমতাবস্থায় বিউটির বাবা সায়েদ মিয়া আবারও ওই বিষয়টি নিয়ে সালিশের মাধ্যমে বিচার প্রার্থী হন। ফলে ১১ মার্চ এ নিয়ে সালিশ-বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু তাতে কোন সিদ্ধান্ত বা সমাধান আসেনি। এদিকে ১২ মার্চ বিউটিকে নিয়ে আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দী করান আইও। পরে বিউটিকে আইও নিজ বাড়িতে দিয়ে আসেন। পরবর্তীতে বাবুল কর্তৃক ভয়ভীতি প্রদর্শনের কারণে বিউটিকে তার নানার বাড়ি জেলার লাখাই উপজেলাদীন গুনিপুর গ্রামে নিয়ে যায় তার পরিবার। আর সেখান থেকে চলে আসার পর মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়া বিউটির বাবা সায়েদ আলীকে উৎসাহিত করেই ইউপি নির্বাচনে স্ত্রী আছমা আক্তারের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই ময়না মিয়া বিউটির বাবা সায়েদ মিয়া, কামাল ও ভাড়াটে খুনীকে নিয়ে গুনিপুরস্থ তার নানার গত ১৬ মার্চ আনুমানিক রাত ১২টার দিকে পৌঁছে এবং সায়েদ মিয়াই বিউটির নানীর নিকট থেকে চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বের করে অজ্ঞাত স্থানে উদ্দেশে রওনা হন। পরদিন ১৭ মার্চ ভোর রাত আনুমানিক ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যকার সময়ে সায়েদ মিয়ার সঙ্গে থাকা ময়না মিয়া, কামালসহ ভাড়াটে খুনী পথিমধ্যে হরিনাকোনা নামক স্থানে বিউটির ওপর চালায় একের পর ছুরিকাঘাত। এতে বিউটির পেটের নাড়ি-ভূঁড়ি বের হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। যা দূর থেকে প্রত্যক্ষ করে নিজ জন্মদাতা পিতা সায়েদ আলী।
×