ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে স্বাধীন বাংলার প্রথম সচিবালয় চালু হয়েছিল

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৮ এপ্রিল ২০১৮

বরিশালে স্বাধীন বাংলার প্রথম সচিবালয় চালু হয়েছিল

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বরিশালে চালু করা হয় ‘স্বাধীন বাংলার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রথম সচিবালয়’। যা এক মাস কার্যকর ছিল। সেখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো। যুদ্ধও পরিচালিত হয়েছে সেখান থেকে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সামরিক সরঞ্জাম, খাদ্য-অর্থ সংগ্রহ ও সরবরাহ করা হতো ওই সচিবালয়ের মাধ্যমে। বরিশালের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন লেখায়, বইয়ে বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। বরিশাল অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের মূল সংগঠক ও তৎকালীন এমএনএ নুরুল ইসলাম মনজুরের আত্মজীবনীমূলক বইয়ে এ তথ্য তুলে ধরে উল্লেখ করা হয় স্বাধীন বাংলার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রথম সচিবালয়ের কথা। এটি স্থাপন করা হয়েছিল বর্তমানের বরিশাল সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে পরে স্থাপন করা হয় ‘স্বাধীন বাংলার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রথম সচিবালয়’এর একটি স্মারক। এমএনএ ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম মনজুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন। তার প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে দক্ষিণাঞ্চল’ বইয়ে তিনি উল্লেখ করেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ৭ মার্চের ভাষণের শেষদিকে যা বলেছেন, এর নিরপেক্ষ বিচার-বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট করেই বোঝা যাবে, ওইদিনই (৭ মার্চ) তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। নুরুল ইসলাম মনজুর জানান, ৭ মার্চের পরই শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ প্রস্তুতি। বরিশালে স্থায়ী মঞ্চ করে প্রতিদিন চলতে থাকে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গণসঙ্গীত। একদিন উজিরপুর থেকে এসে এক লোক জানান, তার নাম এমএ জলিল। তিনি পাকিস্তানী সেনাবাহিনীতে মেজর ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তান বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে জানতে পেরে তিনি চাকরি ছেড়ে পালিয়ে বাড়িতে চলে এসেছেন। প্রয়োজনে তাকে কোন কাজে লাগাতে চাইলে তিনি প্রস্তুত রয়েছেন। আলাপ-আলোচনার পর তার নাম, ঠিকানা রেখে বাড়ি চলে যেতে বলা হয়। প্রয়োজনে তাকে ডাকা হবে বলেও জানানো হয়। মনজুর তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ২৪ মার্চ বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে মেজর জলিলের দেয়া পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর প্রস্তুতিমূলক কিছু তথ্য জানিয়ে ওইদিনই আবার বরিশালের উদ্দেশে রওনা হই। বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ওইসময় কর্নেল ওসমানী ও ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হকের সঙ্গেও মনজুরের দেখা হয়। বরিশাল ফিরে ২৫ মার্চ দিনভর আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিয়ে নানা কাজ করেছিলাম। ২৫ মার্চ রাত এগারোটার দিকে আকস্মিকভাবে ট্রাঙ্কলযোগে ছাত্রলীগ নেতা খালেদ মোহাম্মদ আলী জানান, রাজধানী ঢাকায় হানাদার বাহিনী হিং¯্র হায়েনার মতো রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স, পিলখানা ইপিআরের হেডকোয়ার্টারসহ নিরস্ত্র বাঙালীদের নির্বিচারে হত্যা করতে শুরু করেছে। তাৎক্ষণিক আমার বাসভবনে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও নির্বাচিত জাতীয় প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের মধ্যে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত (শহীদ), মহিউদ্দিন আহম্মেদ, আমির হোসেন আমু (বর্তমান শিল্পমন্ত্রী) এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মালেক খানসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে জরুরী সভা করি।
×