ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডিভাইস ব্যবহার করে ‘চুক্তিবদ্ধ’ ব্যক্তিদের কাছে পরীক্ষা শুরুর ৫ মিনিটের মধ্যে প্রশ্নপত্র বাইরে বের করে দেয়া হয়- এক্সপার্টদের মাধ্যমে ডিভাইসের সঙ্গে সংযুক্ত কানে লাগানো খুদে হেডফোনে এমসিকিউ ভরাট করে শুনে শুনে উত্তর লেখেন পরীক্ষার্থীরা ;###;তিন ব্যাংক কর্মক

প্রশ্নফাঁস হয় যে কৌশলে ॥ চক্রের হোতাসহ ডিবির হাতে আটক ১০ পরিচালক

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৮ এপ্রিল ২০১৮

প্রশ্নফাঁস হয় যে কৌশলে ॥ চক্রের হোতাসহ ডিবির হাতে আটক ১০ পরিচালক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিসিএস মেডিক্যাল ও ব্যাংক পরীক্ষাসহ সরকারী চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় ডিভাইস ব্যবহার করছে জালিয়াত চক্র। পরীক্ষার দিন তারা চুক্তিবদ্ধ হওয়া ব্যক্তিদের কাছে ডিভাইস সরবরাহ করে। পরীক্ষা শুরুর ৫ মিনিটের মধ্যে ওই ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র বাইরে ফাঁস করে দেয়া হয়। এরপর বাইরে থাকা প্রশ্ন এক্সপার্টদের মাধ্যমে ডিভাইসের সঙ্গে সংযুক্ত কানে লাগানো খুদে হেডফোনে এমসিকিউ বৃত্ত ভরাট করেন চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীরা। শনিবার দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন ফাঁসচক্রের এসব তথ্য প্রকাশ করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যাংক, সরকারী চাকরি এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত একটি প্রভাবশালী চক্রের ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার রাতে রাজধানীর মিরপুর, নিউমার্কেট ও ফার্মগেট এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে খুদে ব্যাটারি, ইয়ারফোন, মোবাইলফোনের ন্যায় কথা বলার সিমযুক্ত মাস্টারকার্ড জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের নিয়েই শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে ডিবি। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে তিন ব্যাংক কর্মকর্তাও আছেন। তারা হলেন, সোনালী ব্যাংকের আইটি অফিসার অসিম কুমার দাস, পূবালী ব্যাংকের প্রবেশনারি অফিসার মনিরুল ইসলাম ওরফে সুমন এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রবেশনারি অফিসার সোহেল আকন্দ। অন্যরা হলেন, জহিরুল ইসলাম, সাদ্দাতুর রহমান ওরফে সোহান, নাদিমুল ইসলাম, এনামুল হক ওরফে শিশির, শেখ তারিকুজ্জামান, অর্নব চক্রবর্তী ও আরিফুর রহমান ওরফে শাহিন। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার বলেন, পুলকেশ দাস ওরফে বচ্চু এই চক্রের মূল হোতা। তার বিশ্বস্ত সহযোগী কার্জন। কার্জন পরীক্ষায় জালিয়াতির জন্য বিশেষ ডিভাইসগুলো সরবরাহ করে। চক্রের সদস্যরা তিনভাগে বিভক্ত হয়ে তিন কাজ করে থাকে। কয়েকজন পরীক্ষায় পাস করানোর জন্য মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হতে আগ্রহী পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি বলেন, চক্রের আরেক অংশ পরীক্ষা শুরুর পর কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য ডিভাইস ব্যবহার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আরেকটি অংশ ডিভাইস সরবরাহে সহযোগিতা করে। কল রিসিভ করা গেলেও ওই ডিভাইসে কল করা যায় না। তবে ডিভাইসে ইনকামিং কল অটো রিসিভ হয়। ওপার থেকে উত্তর শুনে সেট কোড মিলিয়ে চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়। আব্দুল বাতেন আরও বলেন, পলাতক অপরাধীদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে এ আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে। এদিকে র‌্যাব জানিয়েছে, এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া প্রশ্নপত্র ছড়ানোর অভিযোগে একজনকে আটক করেছে র‌্যাব। আটককৃতের নাম ইয়াছিন আরাফাত (২০)। শনিবার দুপুরে এ তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাব-৪ এর সহকারী পরিচালক মোঃ সোলায়মান মিয়া। তিনি বলেন, পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্নপত্র দেয়া হবে বলে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছিল ইয়াছিন। আমাদের কাছে এ ধরনের একাধিক অভিযোগ আসার পর আমরা শুক্রবার সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে ইয়াসিনকে আটক করি। এ সময় তার কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, একটি ফোন, একটি মডেম, পেনড্রাইভ ও ৯টি বিভিন্ন কোম্পানির সিম উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ডিভাইসে মেসেজ আদান প্রদান করার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। আটক ইয়াসিন কোন প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে পারে না। ভুয়া প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে উপার্জন করতে চেয়েছিল। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার চতুর্থ দিনে বহিষ্কার ১৬৭, অনুপস্থিত ১২ হাজার শনিবার পরীক্ষার চতুর্থ দিন ইংরেজী দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষা শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ৭৪, রাজশাহীতে ১২, কুমিল্লায় ১৫, যশোর ১৬, চট্টগ্রামে ৮, সিলেটে ১২ বরিশালে ১৫ এবং দিনাজপুরে ১৫ শিক্ষার্থীসহ বহিষ্কার হয়েছে ১৬৭ জন। এছাড়া ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে অনুপস্থিত ছিল ৪ হাজার ৯৫ জন, রাজশাহী বোর্ডে এক হাজার ১৯২ জন, কুমিল্লা বোর্ডে এক হাজার ১৬৫ জন, যশোর বোর্ডে এক হাজার ৪৫২ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে এক হাজার ১৯২ জন, সিলেট বোর্ডে ৮৫৪ জন, বরিশাল বোর্ডে ৮২৮ জন, দিনাজপুর বোর্ডে এক হাজার ২৮৪ জন এবং ডিআইবিএস এ ২১ জন পরীক্ষার্থী।
×