ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বসন্ত উৎসবে মাতোয়ারা গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লী

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ৮ এপ্রিল ২০১৮

বসন্ত উৎসবে মাতোয়ারা গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লী

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ৭ এপ্রিল ॥ গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল সম্প্রদায় শনিবার নিজস্ব কৃষ্টি ও ঐতিহ্যে নেচে-গেয়ে আনন্দে বরণ করে নিল ঋতুরাজ বসন্তকে। সাঁওতাল পল্লী বাগদাবাজার কাটাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন মাঠে আদিবাসী সাঁওতালরা বাহা পরব বা বসন্ত উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। দিনভর ধর্মীয় পূজা-অর্চনা এবং মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক সাঁওতাল নারী-পুরুষ-কিশোরী অংশ নেন। বিভিন্ন বর্ণের আদিবাসী-বাঙালীদের আগমনে অনুষ্ঠান স্থলটি মিলন মেলায় পরিণত হয়। স্থানীয় আদিবাসী শিল্পীদের পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সাঁওতাল সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধ করেন। এ অনুষ্ঠানে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর ৬টি ইউনিয়নের ৮টি সংস্কৃতিক দল অংশ নেয়। বিগত ২০১৬ সালের ৬ নবেম্বর গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ৩ সাঁওতাল নিহত ও তাদের বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদের দেড় বছর পর এ উৎসব আবার অনুষ্ঠিত হলো। দীর্ঘদিন পর এ ধরনের উৎসবের সুযোগ পেয়ে সাঁওতালরা আনন্দে মেতে ওঠে। উৎসবের জন্য কেনা হয় নতুন কাপড়-চোপড়। ঘরে ঘরে চলে নানা আয়োজন। উৎসবস্থল আদিবাসীদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া সংবলিত ফেস্টুনে সুসজ্জিত করা হয়। সকালে পূজা-অর্চনার পর বাহা পরবের প্রথম অংশে আলোচনা সভা ও পরে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল। বাহা পরব উদ্্যাপন কমিটি আহ্বায়ক ফিলিমন বাস্কের সভাপতিত্বে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র পাঠ করে আদিবাসী যুবক আন্দ্রিয়াস মুরমু ও মানবাধিকার সনদ পাঠ করেন প্রিসিলা মুরমু। বক্তব্য রাখেন, গোবিন্দগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার রাফিউল আলম, গাইবান্ধা জেলা উদীচীর সভাপতি অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম, আদিবাসী বাঙালী সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু, কাটাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রফিক, এনডিএফের নির্বাহী পরিচালক ভিক্টর লাকরা, বেসরকারী সংগঠন অবলম্বনের নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী, পারগানা পরিষদের সভাপতি রুসন কিসকু, আদিবাসী গবেষক কেরিনা হাসদা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল বলেন, আদিবাসীরা আমাদের এ দেশেরই নাগরিক। তাদের কৃষ্টি ও ঐতিহ্য এ দেশের সংস্কৃতিরই অংশ। তাদের বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। আজকের এ উৎসবে অংশ নিতে পেরে আমিও আনন্দিত। উল্লেখ্য, বসন্ত ঋতু আসলেই গাছে গাছে নতুন ফুলের সমারোহ প্রকৃতি প্রিয় মানুষের দৃষ্টি কাড়ে। শিমুল, পলাশে শোভায় প্রকৃতি নিজেকে নতুন রূপে প্রকাশ করে। আদিবাসী সাঁওতালরাও বসন্তকে বরণ করে নেয় তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য দিয়ে। এ সময় সাঁওতাল তরুণীরা নতুন নতুন ফুল তাদের খোঁপায় গেঁথে আনন্দে নাচে-গানে মেতে ওঠে। সাঁওতাল গ্রামে গ্রামে চলে আনন্দ উৎসব।
×