ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধান শিক্ষকের যৌন হয়রানি ॥ ছাত্রীর স্কুল বন্ধ

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ৮ এপ্রিল ২০১৮

প্রধান শিক্ষকের যৌন হয়রানি ॥ ছাত্রীর স্কুল বন্ধ

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর, ৭ এপ্রিল ॥ প্রধান শিক্ষকের যৌন হয়রানির শিকার হয়ে নাটোরের রূয়েরভাগ শংকর গোবিন্দ চৌধুরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেল। অপরদিকে, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র কর্মকারের এমন আচরণে নিরাপত্তাহীনতায় অন্যত্র বাচ্চাদের সরিয়ে নিচ্ছেন অভিভাবকরা। ঘটনার তদন্তে নেমে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির সত্যতা পেয়েছে জেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন। ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি একটি অঙ্কের উত্তর ভুল লিখলে প্রধান শিক্ষক তাকে মারতে চায়। তখন সে শিক্ষককে মারতে বলে পিঠ এগিয়ে দিলে শিক্ষক তাকে মারার বদলে শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়। পরে সে শিক্ষকদের জানালে শিক্ষকরা তাদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে তাকে তার অভিভাবককে অবহিত করতে বলেন। ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা বলেন, আমার মেয়ে বিদ্যালয় থেকে ফিরে এসে আমাকে কাঁদতে কাঁদতে বলে যে সে আর বিদ্যালয়ে যাবে না। কারণ জানতে চাইলে সে জানায়, প্রধান শিক্ষক নারায়ণ স্যার তার গায়ে হাত দিয়েছে। পরে এলাকার মুরব্বিদের নিয়ে তিনি বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। আর অন্যান্য শিক্ষকরা বলেন এই শিক্ষক আগেও অনেকের সঙ্গে এমন ব্যবহার করেছে। সতর্ক করে কোন লাভ হয় না। পরবর্তীতে মেয়েকে নিয়ে ৪ মার্চ তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনজের আলী বলেন, এর আগেও এই ধরনের অভিযোগ উঠেছিল। পরে তিনি প্রধান শিক্ষককে নিষেধ করেছেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণ না করতে। কিন্তু তিনি কখনই কর্ণপাত করেননি। এমনকী বিদ্যালয়ের অন্য মহিলা শিক্ষকরা অফিস কক্ষে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে একা একা থাকতে ভয় পান। যতক্ষণ প্রধান শিক্ষক অফিস কক্ষে একা একা থাকেন সহকারীরা বাইরে দাঁড়িয়ে পায়চারী করে সময় পার করেন। শাহিনুর রহমান নামে এক অভিভাবক বলেন, এমন ঘটনার পরও প্রধান শিক্ষক বহাল তবিয়তে বিদ্যালয়ে আছেন। সে কারণে তিনি তার মেয়েকে অন্য বিদ্যালয়ে নিয়ে পড়াতে চান। তার মত আরও অভিভাবক আমিরুল ইসলাম, ওয়াসিম আলী, মিলন হোসেন এবং সাকলাইম হোসেনও একই কথা বলেন। শাহিনুর বলেন, শিক্ষকের কাছেই যদি ছাত্র-ছাত্রীরা নিরাপদ না হয় তবে কোথায় যাবে তারা। এমন শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন তিনি। ওই বিদ্যালয়ের সাবেক বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন নারায়ণ মাস্টার তাদের সঙ্গেও একই ধরনের ব্যবহার করেছিল। কিন্তু সম্মানের ভয়ে তারা কাউকে কিছু বলেনি। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র কর্মকার বলেন, তিনি শিক্ষার্থীকে হাত দিয়ে মেরেছেন। তবে যৌন হয়রানির মতো কিছু তিনি করেননি। তদন্ত কর্মকর্তা নাটোর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বানু বলেন, তদন্তে তিনি ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। সেই মোতাবেক জেলা প্রশাসনকে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন ২৭ মার্চ। জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বলেন, তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ার অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশসহ জেলা শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×