ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শহীদ মিনারে বিড়ি শ্রমিকদের সমাবেশ

বিড়িকে কুটির শিল্প ঘোষণার দাবি

প্রকাশিত: ০৪:২০, ৮ এপ্রিল ২০১৮

বিড়িকে কুটির শিল্প ঘোষণার দাবি

বিশ^বিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ বিড়ি শিল্প দেশের প্রাচীন শিল্প। হাজার বছর ধরে এ শিল্প চলে আসছে। এ শিল্পে কাজ করে ২০ লাখের মতো মানুষের পেটে ভাত জোটে। তাই বিড়ির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার করে এ শিল্পকে কুটির শিল্প হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে। শনিবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক সমাবেশে বিড়ি শ্রমিকরা এসব দাবির কথা জানান সরকারের কাছে। ‘শুল্কনীতির বৈষম্য : বিড়ি শ্রমিক এবং বিড়ি শিল্প’ প্রতিপাদ্যে সমাবেশের যৌথভাবে আয়োজন করেন বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশন এবং গবেষণা ও উন্নয়ন কালেকটিভ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতে বিড়িশিল্পকে কুটির শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং বিড়িশিল্পকে রক্ষার জন্য সরকার নানা ধরনের কল্যাণমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে বিড়ির ওপর অতিরিক্ত শুল্কারোপ করে এবং তিন বছরের মধ্যে বিড়ি বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছে। বিড়ি শিল্পকে বন্ধ ঘোষণা করা মানেই হচ্ছে ২০ লাখ মানুষকে বেকার করে দেয়া। তাই বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে বিড়ি শিল্প নিষিদ্ধ করা যাবে না। বক্তারা বলেন, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে বিড়ির ওপর শুল্ক ১৮ গুণ বেশি। ভারতে যেখানে এক হাজার বিড়িতে শুল্ক মাত্র ১৪ টাকা সেখানে বাংলাদেশে এক হাজার বিড়িতে শুল্ক ২৪৭.৫০ টাকা। এছাড়া ভারতে যেসব কারখানা বছরে ২০ লাখ স্টিকের নিচে বিড়ি তৈরি করে তাদের কোন শুল্ক দিতে হয় না অপরদিকে বাংলাদেশে যে কোন পরিমাণ বিড়ি তৈরির জন্য শুল্ক দিতে হয়। ভারতে যেখানে বিড়ি শিল্পকে কুটির শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে বাংলাদেশে বিড়ির ওপর দফায় দফায় শুল্কারোপ করে এ শিল্পকে ধ্বংসের পাঁয়তারা চলছে। বক্তারা আরও বলেন, সরকার দফায় দফায় শুল্ক বাড়িয়ে বিড়ি শিল্প বন্ধ করার পাঁয়তারা করছে অথচ কোন সরকারী কর্মকর্তা কখনও কোনদিন বিড়ি শ্রমিকের কাছে যায়নি। তারা কত কষ্ট করে দিনযাপন করে সে খোঁজ কেউ নেয়নি। আমরা তো আর কোন কাজ জানি না। কিন্তু বিড়ি শিল্প বন্ধ করা হলে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত লাখ লাখ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশন সভাপতি আমিন উদ্দীনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান, বিড়ি শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি বিজয় কৃষণ দে, গবেষণা ও উন্নয়ন কালেকটিভের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল ও সাধারণ সম্পাদক জান্নাত-এ-ফেরদৌসী, বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এম. কে বাঙালী, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমানসহ বিড়ি শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক হ্যারিক হোসেন। ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বিড়ি শ্রমিকরা বিড়ির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তারা সরকারকে কর দিচ্ছেন। দেশের উন্নয়নে তারা অবদান রাখছেন। কিন্তু এই শিল্পকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। বিড়ি শ্রমিকদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে এই শিল্পকে ধ্বংস করা যাবে না। তিনি বলেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে বিড়ি শিল্পকে এবং ২২ বছরের মধ্যে সিগারের বন্ধের প্রস্তাব করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই প্রস্তাবের দুর্নীতির গন্ধ পাই। গতবারও এই প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিড়ি শ্রমিকদের মুখের দিকে তাকিয়ে তা বাতিল করেছিলেন। এবার আবারও একই প্রস্তাব করা হয়েছে। একই প্রস্তাব বারবার করা মানে এর সঙ্গে দুর্নীতি যুক্ত আছে। তিনি বলেন, আমরা শোষিত আর মেহনতি মানুষের পক্ষে। বিড়িশ্রমিকদের সঙ্গে এ ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ মেনে নেয়া হবে না। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে কোন বৈষম্যমূলক সীদ্ধান্ত নেয়া হলে বিড়ি শ্রমিকরা এর দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবে। অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, বাংলাদেশে যেসব এলাকাতে বিড়ি শিল্প আছে, সেসব এলাকায় বিকল্প শিল্প তৈরি না করে, বিড়ি শিল্প বন্ধ করা যাবে না । কারণ এ শিল্পের সঙ্গে হাজার হাজার মানুষের জীবিকা জড়িত রয়েছে। আগামী বাজেটের পূর্বে অর্থমন্ত্রীকে বিড়ি শিল্প বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যত্থায় ঢাকায় বৃহৎ শ্রমিক সমাবেশ করা হবে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। সমাবেশে বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশন সভাপতি আমিন উদ্দিন বলেন, দেশকে তামাক মুক্ত করতে হলে শুধু বিড়ি কেন ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর সিগেরেটকেও বন্ধ করতে হবে আগে। তারা কর ফাঁকি দিয়ে দেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করছে। অথচ অর্থমন্ত্রী ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে গরিবের পেটে লাথি দেয়ার চেষ্টা করছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নাসির বিড়ি, রশিদা বিড়ি, বিউটি বিড়ি, কারিকর বিড়ি, আনছার বিড়ি, বেঙ্গল বিড়ি, আবুল বিড়ি, আকিজ বিড়িসহ বিভিন্ন বিড়ি কোম্পানির অন্তত দুই হাজার শ্রমিক এই মহাসমাবেশে অংশ নেন। সকাল থেকেই ঢাকায় আসতে থাকেন তারা।
×