ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইলিশের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ৮ এপ্রিল ২০১৮

ইলিশের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও জাটকা রক্ষার জন্য অভয়াশ্রমগুলোতে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের মাছের মোকামগুলো প্রায় ইলিশ শূন্য। একদিকে ইলিশের আমদানি কম, অন্যদিকে সামনে বৈশাখীর হাতছানি, তাই ক্রমেই বাড়ছে এ রূপালি মাছের দাম। ব্যবসায়ীরা আরও জানান, পদ্মা ও মেঘনায় ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ইলিশ শিকার বন্ধ থাকে। এ সময়ে ইলিশের আমদানি অনেকটা কমে যায়। নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকা নদীগুলো থেকে যে ইলিশ আমদানি হচ্ছে তা দিয়ে বরিশালের চাহিদার এক-তৃতীয়াংশও পূরণ হচ্ছে না। কিছু ইলিশ আসছে, তবে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সারাদেশে ইলিশের চাহিদা থাকায় তার দামও অনেক বেশি। গত ৩-৪ দিনেই সব ধরনের ইলিশের দাম বেড়েছে সাইজভেদে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ। জানা যায়, নববর্ষ যত এগিয়ে আসছে ও ইলিশের চাহিদা ততই বেড়ে যাচ্ছে। যে পরিমাণ ইলিশ বাজারে আসছে, তার দুই-তৃতীয়াংশই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন আড়তদাররা। ৩০ চৈত্র পর্যন্ত এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন ইলিশ ব্যবসায়ী ও মৎস্য শ্রমিকরা। সামুদ্রিক ইলিশ লবণাক্ত হওয়ায় বরিশাল অঞ্চলের মিঠা পানির ইলিশের কদর বেশি বলেও জানান তারা। নগরীর পোর্ট রোড মোকামে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার সময়ে বরিশালের ইলিশ মোকামগুলোতে জীবিকার তাগিদে মাছের পাশাপাশি মৌসুমি ফল বিক্রি করেছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে নগরীর পোর্ট রোড মোকামের ইলিশের আড়তদার আবুল কালাম আজাদ জানান, এক সপ্তাহ আগেও ৪০০ মণ ইলিশের আমদানি হয়েছে বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড মোকামে। তবে গত দু’তিন দিন ধরে মোকামে ইলিশের আমদানি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ মণ। এ কারণে দাম বৃদ্ধির দিকে। বরিশালের পোর্ট রোডের ইলিশ ব্যবসায়ী ইউনুস বেপারী জানান, মোকামে শুক্রবার পাইকারি দর ছিল সোয়া কেজি থেকে দেড় কেজির বড় সাইজের ইলিশের মণ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ৩ দিন আগে এই ইলিশের মণ ছিল ৮০-৮৫ হাজার টাকা। তবে এ সাইজের ইলিশের আমদানি খুব কম। যে পরিমাণ আসে তা প্যাকেটজাত করে ঢাকায় পাঠানো হয়।’ তিনি জানান, এক কেজি থেকে সোয়া কেজি সাইজের ইলিশের মণ এখন ৮০ হাজার হতে এক লাখ টাকা। ৩ দিন আগে এই ইলিশের মণ ছিল ৬৫ হাজার টাকা। ৯০০ গ্রাম হতে এক কেজি সাইজের ইলিশের মণ এখন ৭০ হাজার টাকা। অথচ ৩ দিন আগেও এই ইলিশের মণ ছিল ৫২ হাজার টাকা। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কাছে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে ৭শ’ থেকে ৮শ’ গ্রাম ওজনের এলসি সাইজ ইলিশের। ৩ দিন আগেও এ মাছের মণ ছিল ২৮ হাজার টাকার মধ্যে। শুক্রবার মোকামে মণ বিক্রি হয়েছে ৩৮ হাজার টাকায়। মফস্বল শহরে নববর্ষ উৎসবে পান্তার সঙ্গে ভরসা হচ্ছে ৪শ’ থেকে ৫শ’ গ্রাম ওজনের ভ্যালকা ইলিশ। তিন দিন আগেও এই ভ্যালকার মণ ছিল ১৮ হাজার টাকার মধ্যে। শুক্রবার সেই ভ্যালকার মণ উঠেছে ২৪ হাজার টাকায়। বরিশালের পোর্ট রোডের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের নিয়মিত ক্রেতা আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমদানি কম। তারপরও ইলিশের দাম যা হওয়া উচিত, তার চেয়ে অনেক বেশি। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী নিষেধাজ্ঞা শব্দটিকে পুঁজি করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাছের দাম বাড়িয়েছে।’ হঠাৎ ইলিশের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে নগরীর পোর্ট রোড মৎস্য আড়তদার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অজিৎ কুমার দাস মনু বলেন, ‘বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে ইলিশের চাহিদা ১০ শতাংশ বেড়ে গেলেও মাছের আমদানি কমেছে। ঢাকা থেকে পাইকাররা এসে সমানে মাছ কিনছেন। এসব কারণে ইলিশের দাম উর্ধমুখী।’ তবে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর অভিযোগটি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন অজিৎ কুমার দাস মনু। তিনি বলেন, ‘বরিশালে ফিশ প্রসেসিং সেন্টার বা হিমাগার নেই। তাই ইলিশ মজুদের প্রশ্নই উঠে না।’ অজিৎ কুমার দাস মনু আরও জানান, সরকারের কঠোর নজরদারির কারণে জাটকা শিকারের পরিমাণ কমছে। মৎস্য ব্যবসায়ীরা নিষেধাজ্ঞার সময়ে অলস সময় কাটায়, নয়তো অন্য ব্যবসায় পুঁজি খাটান। বরিশালের ইলিশ ব্যবসায়ীরা বিগত কয়েকবছর ধরে এ সময় মোকামে তরমুজের ব্যবসা করেছেন বলেও জানান তিনি। এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল দাস জানান, অভয়াশ্রমগুলোতে জেলেরা মাছ শিকার করতে না পারায় বাজারে ইলিশের সরবরাহ কিছুটা কম। তবে মে মাসের শুরু থেকেই ইলিশের বাজার স্বাভাবিক হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। ইলিশ মজুদের প্রসঙ্গে বিমল দাস বলেন, ‘কোন ব্যবসায়ী মজুদ করছেন কিনা, তা আমার জানা নেই। মজুদের বিষয়ে সরকারেরও কোন বিধি-নিষেধ নেই।’ তবে ইলিশের উৎপাদন বাড়ানো এবং সংরক্ষণে নানা পদক্ষেপ নিলেও দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে মৎস্য বিভাগের কোন ভূমিকা নেই বলেও জানিয়েছেন এ মৎস্য কর্মকর্তা।
×