ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পুঁজিবাজারে ফিরছে বিনিয়োগকারীরা

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ৮ এপ্রিল ২০১৮

পুঁজিবাজারে ফিরছে বিনিয়োগকারীরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পতনের রেশ কাটিয়ে আবারও পুঁজিবাজারে ফিরতে শুরু“ করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বাজার স্থিতিশিল হবে এই প্রত্যাশা নিয়ে ফিরে আসছেন তারা। যে কারণে বদলে গেছে ব্রোকারেজ হাউসের চিত্র। কয়েকদিন আগের হাউসগুলোতে ছিল সুনসান নীরবতা। গতকাল হাউসগুলোতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। মূলত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হয়েছে বলে বাজারের চেহরা বদলে গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। গত বৃহস্পতিবার মতিঝিলের ব্রোকারেজ হাউস ঘুরে দেখা যায়, হাউসগুলোতে সন্তোষজনক উপস্থিতি। অথচ কিছুদিন আগে বেশির ভাগ হাউসে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি লক্ষ করা যেত না। এসব হাউসের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, স্থিতিশিল পরিবেশ ফিরে আসায় তারাও পুঁজিবাজার মুখি হচ্ছেন। তবে এটা দীর্ঘমেয়াদী হবে কিনা তা নিয়ে দোলা চলে রয়েছেন তারা। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ব্রোকারেজ হাউসে ফিরলেও তাদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা কাজ করছে। তারা জানান পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ালেও তা স্থিতিশিল হবে কি না এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে। তারা একটি দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশিল পুঁজিবাজার চান। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন এখন পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয়। আইসিবি, লংকাবাংলা, আইডিএলসিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বাজারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তারা সক্রিয় থাকলে বাজার আরও ভাল হবে মনে করেন বিশ্লেষকরা। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বর্তমান বিনিয়োগের খবর জানতে যোগাযোগ করা হলে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হক শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের জায়গা থেকে পুঁজিবাজারকে সার্পোট দিয়ে যাচ্ছি। বাজার পতনের সময়ই আমরা বাজারের সঙ্গে ছিলাম এখনও আছি। আশা করছি ভবিষ্যতে আমরা পুঁজিবাজারের জন্য আরও ভাল কিছু করতে পারব। গত বছরের শেষদিক থেকে অবিরাম দরপতন শুরু হয়। প্রতিদিনই পোর্টফোলিও থেকে পুঁজি উধাও হতে থাকে গত ২৮ মার্চ পর্যন্ত নতুন বছরে ডিএসইর প্রধান সূচকের পতন হয়েছে ৭৫৬ পয়েন্ট। আর বাজার মূলধন কমেছে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। সকল খাতের শেয়ারের এক যোগে দরপতন হয়ে বাজার পরিস্থিতি নাজুক হয়। এরপর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাজার। এরপর পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে একদিন সূচক ৩৭ পয়েন্ট পতন হয়। বাকি চার কার্যদিবসে সূচক বাড়ে ৩৪০ পয়েন্ট। বর্তমানে ডিএসইর প্রধান সূচক অবস্থান করছে ৫ হাজার ৭৯৩ পয়েন্টে। অন্যদিকে হাউস কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান দীর্ঘদিন পরে বিনিয়োগকারীরা হাউসে ফিরে আসতে শুরু করেছে। পুরুষের পাশাপাশি সচল হচ্ছে নারীদের বিও। এটাকে বাজারের শুভ লক্ষণ বলে মনে করছেন ব্রোকাজের হাউসের মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলে। ২০১০ সালে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি যখন খুবই ভাল ছিল তখন ডিএসই’র দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার কোটি টাকা। সে সময় ঢাকার প্রতিটি হাউসে গড়ে ৩০ কোটি টাকা লেনদেন হতো। পরবর্তীতে বাজার মন্দা যাওয়ায় তা অনেক নিচে নেমে যায়। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে ব্রোকারেজ ব্যবসায়। হাউস মালিকেরা বলছেন এখন বাজার ঘুরে না দাঁড়ালে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করা কষ্টকর হয়ে পড়বে। জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বিনিয়োগকারীরা লেনদেন না করলে আমাদের ব্যবসা চালিয়ে নিতে আমাদের খুব বেশি বেগ পেতে হয়। সেই সময় আমরা বাধ্য হয়েই কর্মী ছাটাই করি। তিনি বলেন এক সময় আমাদের হাউসে লেনদেন হতো ১০০ কোটি টাকা। পরে তা অস্বাভাবিক হারে কমে যায়। এখন বাজার ভালোর দিকে যাচ্ছে। আশা করছি আমাদেরও সুদিন ফিরে আসবে। তবে এর জন্য দরকার ধারাবাহিক স্থিতিশীলতা। জানা যায়, ২০১০-২০১১ সালে পুঁজিবাজার যখন উর্ধমুখী ছিল তখন হাউসগুলো বিভাগীয় শহর ও জেলা পর্যায়ে তাদের শাখা খোলেন। কিন্তু বাজারে ধস নামার পর থেকে কমতে থাকে সিকিউরিটিজ হাউসগুলোর আয়। কর্মী ছাঁটাই করে ব্যয় কমিয়ে এনে ব্যয় কমায় হাউসগুলো। এই সময় কয়েকটি হাউস বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে এই পরিস্থিতি নেই। ডিএসইর দেয়া তথ্য মতে বর্তমানে ২৫০টি ব্রোকারেজ হাউসের মধ্যে ২৩৪টি হাউস তাদের কর্মকা- অব্যাহত রেখেছে।
×