ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুর ও খুলনা সিটিতে জয় পেতে কৌশলী বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:১০, ৭ এপ্রিল ২০১৮

গাজীপুর ও খুলনা সিটিতে জয় পেতে কৌশলী বিএনপি

শরীফুল ইসলাম ॥ আসন্ন গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয় পেতে নানামুখী কৌশল গ্রহণ করছে বিএনপি। এ দুই সিটি নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে জনপ্রিয়তা যাচাই করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হতে চায় দলটি। ইতোমধ্যেই কেন্দ্র থেকে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রচারে সরব হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে নির্বাচনী প্রচারে সক্রিয় করা হচ্ছে। মেয়র পদে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন জোরদার করতে প্রভাবশালী শরিক দলগুলোকে কাউন্সিলর পদে ছাড় দেয়া হচ্ছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এখন কারাবন্দী থাকায় বিএনপি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবে কি নেবে না এমন জল্পনা কল্পনার মধ্যেই ৩১ জানুয়ারি গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি এ বিষয়ে নড়েচড়ে বসে। পরদিন ১ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন দলের সিনিয়র নেতারা। বৈঠকের পর অনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের কাছে দুই সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মূলত এরপর থেকেই বিএনপি এ নির্বাচন নিয়ে তৎপর হয়। সূত্রমতে, বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে চরম বেকায়দায় থাকা বিএনপি গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চায়। তাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের চ্যালেঞ্জ হিসেবে এ দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থীসহ অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থী যাতে বিজয়ী হন সেভাবেই প্রস্তুতি জোরদার করছে। তবে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হলে এ ইস্যুতে রাজপথ উত্তপ্ত করার মাধ্যমে সরকার বিরোধী আন্দোলন গতিশীল করার কৌশল নেবে বিএনপি। অভিজ্ঞ মহলের মতে, গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হতে চায় বিএনপি। আর এ জন্যই এ নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে দলটি। বিগত দিনের সরকার বিরোধী আন্দোলন ব্যার্থ হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বেকায়দায় থাকা বিএনপি এ দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিকভাবেও এগিয়ে যেতে চায়। আর এ জন্যই নানামুখী কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দলটি। গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যেই সিনিয়র নেতাদের নিয়ে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ সমন্বয় কমিটিতে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন ও খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ আরও ক’জন। স্থানীয় বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদেরও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয় থাকতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ের টার্গেট নিয়ে শতাধিক কেন্দ্রীয় নেতাকে ইতোমধ্যেই প্রচারণায় অংশ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর মধ্যে কোন কোন কেন্দ্রীয় নেতা ইতোমধ্যেই স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। কারাগার থেকে মাঝে মধ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। জানা যায়, গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ের লক্ষ্যেই এবারও মেয়র পদে বর্তমান মেয়রদেরই মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। যদিও এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের নাম ঘোষণা করা হয়নি। তবে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বর্তমান মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানের জায়গায় মনোনয়ন পেতে দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাসান উদ্দিন সরকার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন মাধ্যমে লন্ডনে অবস্থান করা তারেক রহমানের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন। তাই শেষ মুহূর্তে গিয়ে প্রার্থী পরিবর্তন হয় কি না তা এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে খুলনা সিটি কর্পোরেশনে বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জানের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি ইতোমধ্যেই দলীয় হাইকমান্ড থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। এবার গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদেও ভাল প্রার্থী দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে। সেইসঙ্গে যাদের মনোনয়ন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না তাদেরও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। ইতোমধ্যেই গণসংযোগসহ মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে শুরু হয়েছে প্রচার। তবে দলের অনেক নেতার নামে মামলা থাকায় বেশি হাঁকডাক না করে গোপনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি এবার প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে কেন্দ্রীয় নেতাকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে সক্রিয় থাকার দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। প্রসঙ্গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের ৬ জুলাই। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী বর্তমানে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ মান্নান আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। ওই বছরই ১৫ জুন খুলনা সিটি কর্পোরেশন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেককে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনিরুজ্জামান। জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় থাকা বিএনপি গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করে আন্দোলন ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার করতে চাচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের মতে এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও এ নির্বাচনের ঢেউ জাতীয় নির্বাচনে গিয়ে গড়াবে। নির্বাচন কমিশন প্রদত্ত তফসিল অনুসারে ১৫ মে গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। ১২ এপ্রিল পর্যন্ত মেয়র ও কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে। ১৫ ও ১৬ এপ্রিল বাছাই, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত এবং ২৪ এপ্রিল প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার শুরু করা যাবে প্রতীক বরাদ্দের দিন থেকেই। বিএনপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের কাছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কমিশনের সহযোগিতা চেয়েছেন। ১ এপ্রিল রাতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের এক বৈঠকে বিএনপি গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা এ দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমরা দেখতে চাই এ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয় কি না। এ নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু হবে তা নিয়ে সংশয় থাকলেও এ নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনও ত্বরান্বিত করতে চাই। এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা সবগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও আমরা অংশ নেব। দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মাঠে সক্রিয় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করব নির্বাচন কমিশন ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এ দুই সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।
×