ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এল নিনোর প্রভাব

এ বছর বিশ্বের তাপমাত্রা হবে সর্বোচ্চ, খরায় পুড়বে ভারত-বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ৭ এপ্রিল ২০১৮

 এ বছর বিশ্বের তাপমাত্রা হবে সর্বোচ্চ, খরায় পুড়বে ভারত-বাংলাদেশ

সমুদ্র হক ॥ এক তৃষ্ণার্ত শালিক মাটির পাত্রে রাখা জল পান করছে। ইন্টারনেটে এই ছবির নিচে হৃদয়স্পর্শী একটি বার্তা- এবারের গ্রীষ্মে দাবদাহ ৪৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে। পানির অভাবে অনেক পাখি মারা যাবে। মানবকূলে পাখিদের আহ্বান, আপনার বাড়ির ব্যালকনিতে একটি মাটির পাত্র কিছু পানি রাখুন। যাতে তৃষ্ণার্ত পাখি উড়ে এসে আপনার রাখা সেই পানি পান করে জীবন বাঁচাতে পারে। হয়ত এই মেসেজ কেউ ফরোয়ার্ড করবে না। আপনিও কি তাই করবেন! পাখিদের বাঁচান- প্রকৃতিকে রক্ষা করুন। আগামীর বিশ্ব উষ্ণ হয়ে উঠছে। যে থাবার মধ্যে বাংলাদেশও আছে- এই প্রতিবেদন তার ওপর ভিত্তি করেই। এই সময়টায় আকাশে মেঘ দেখে কিছু বলা যায় না। চৈত্রের শেষ ভাগে ক’দিন আগে শিলাপাত, বজ্রপাত ঝড়ে অনেক ক্ষতি হলো। এরপর বেড়ে গেল তাপমাত্রা। তারপর দিনে তাপ, রাতে কিছুটা শীতল। কখনও বর্ষার মেঘ। কখনও আবার কুয়াশা। ফের সাদা মেঘে গরমের হাওয়া। এর মধ্যেই ঠা-া। যা চৈত্রের চির চেনা পরিচিতি দেয় না। আবহাওয়াবিদগণের কথা : এর কারণ বিকিরণজনিত ঠা-া। আসছে উত্তর-পশ্চিম কোন থেকে। ঠা-া হলেও তা অনেক শুষ্ক। এ দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট এক অশনি সঙ্কেত দিয়েছে : এই বছর হবে বিশ্বের সর্বোচ্চ উষ্ণায়নের বছর। যার বড় প্রভাব পড়বে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। বাংলাদেশ ও ভারতে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহ বইতে থাকবে। ভারতের আবহাওয়া গবেষণা বিভাগ ইতোমধ্যে তীব্র দাবদাহের সতর্কতা দিয়েছে। যা ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে। বাংলাদেশেও দাবদাহের সঙ্গে দেখা দেবে তীব্র খরা। কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের আবহাওয়া অনেকটাই মরু অঞ্চলের মতো। তারপর বৈশ্বিক উষ্ণতার আভাস আরও খানিকটা ভাবিয়ে তুলেছে। দেশে বর্তমানে কোন ঋতুই ঠিকমতো চেনা যায় না। চৈত্রের মাঝপথে ঝড় বাদল। গত ক’বছর ধরেই বর্ষার প্রাণ নেই। শরত হেমন্ত ঋতু শুধু কাব্যে। গ্রীষ্মটা একটু জানান দেয়। এবারের গ্রীষ্মের দাবদাহ কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে তা ভাবছেন জলবায়ুর বিজ্ঞানীগণ। প্রকৃতির স্বাভাবিক চিত্র ক্রমেই সরে যাচ্ছে। দিনে দিনে উষ্ণ হচ্ছে বায়ুম-ল। যত দ্রুত উষ্ণতা বাড়ছে গত হাজার বছরেও তা বাড়েনি। বিজ্ঞানীগণ যে ভয়ঙ্কর তথ্য দিয়েছেন তা হলো : গ্রীষ্ম ম-লীয় পর্যায়বৃত্ত পরিবর্তনে (যাকে বলা হয় এল নিনো) সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অন্তত এক মিটার বেড়ে তাপমাত্রা বিশ্বের বিপজ্জনক মাত্রার কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। যা ডেকে আনবে বড় ধরনের বিপর্যয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট এ্যান্ড সোসাইটির ক্লাইমেট প্রেডিকশন সেন্টার এবং এ ধরনের ভারতের কয়েকটি কেন্দ্র জানাচ্ছে, চলতি বছর হবে উষ্ণতম বছর। এদিকে জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার খবর : চলতি বছর পূর্বের সকল সময়েরে চেয়ে তাপমাত্রা গড়ে ১ দশমিক ২ ডিগ্রি বেড়ে যেতে পারে। সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার মাত্রা প্রতিবছর একটু করে বাড়ছে। এমন অবস্থা থাকলে নিকট দিনে অনেক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে। যা হতে পারে ভয়াবহ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এ্যারোনটিকস এ্যান্ড স্পেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) ও ন্যাশনাল ওসেনিক এ্যান্ড এটমোসফেরিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নোয়া) ক্লাইমেট ডাটা সেন্টার চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রার আভাস দিয়েছে। যার প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কায় কৃষি ভূমি, জীববৈচিত্র, রোগব্যাধিসহ নানা বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। দীর্ঘ খরার কবলে পড়ে ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সেচের পানি উত্তোলন সহজ হবে না। পানির স্তর যার পর নেই নিচে চলে যাবে। প্রভাব পড়বে আবাদ কার্যক্রমে। ভূগর্ভ থেকে সুপেয় পানি প্রাপ্তি স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকবে না। এই অবস্থায় ভয়াবহ সঙ্কটে পড়বে রাজধানী ঢাকা মহানগরীসহ দেশের প্রতিটি অঞ্চল। ভয়াবহ খরার কবলে পড়তে পারে উত্তরাঞ্চল। উত্তরাঞ্চলের বৈশিষ্ট্য হলো শীতের সময় যেমন শীত গ্রীস্মে তেমনই গরম। বিজ্ঞানীগণ বলছেন, উষ্ণতার সবচেয়ে বড় কারণ বিশ্বজুড়ে বায়ুম-লে কার্বন নিঃসরণ, তা যে শুধু জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহার এবং বনভূমি কমে যাওয়া, গ্রীনহাউস ইফেক্টের কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে তা নয়। গ্রীষ্মম-লীয় এল নিনোর প্রভাবও এমনটি হচ্ছে। আর লা নিনা হলো তার উল্টোটা। চলতি বছর বৈশ্বিক আবহাওয়ার তীব্র উষ্ণতার চরম বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হলো এল নিনো। এই এল নিনোর প্রভাবে প্রশান্ত মহাসাগর ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের পানি বর্তমানের চেয়ে এক ডিগ্রী সেলসিয়াসেরও বেশি গরম হয়ে উঠবে।
×