ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলা নববর্ষ ও ইরানী নওরোজের আনন্দময় উদযাপন একসঙ্গে

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ৭ এপ্রিল ২০১৮

বাংলা নববর্ষ ও ইরানী নওরোজের আনন্দময় উদযাপন একসঙ্গে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছে পয়লা বৈশাখ। দুয়ারে কড়া নাড়ছে নববর্ষ। আর আনন্দময় সময়ে একসঙ্গে উদ্্যাপিত হলো ইরানী নববর্ষ নওরোজ ও বাংলা নববর্ষ। গানের সুরে, কবিতার ছন্দে কিংবা বক্তার আলোচনায় এক আয়োজনে আবাহন করা হলো উভয় দেশের নববর্ষকে। শুক্রবার ছুটির দিনের বিকেলে নববর্ষ আবাহনের এ অনুষ্ঠানের আয়োজনটি হয় শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে। দুই দেশের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। দুইপর্বে বিভক্ত আয়োজনে ছিল আলোচনা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। প্রথমপর্বে ছিল আলোচনাসভা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিটিভির সাবেক মহাপরিচালক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবুল কালাম সরকার। শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা বিভাগের পরিচালক বদরুল আনাম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সিলর সাইয়্যেদ মুসা হোসেইনী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে গওহর রিজভী বলেন, ইরানের নববর্ষ নওরোজের দিনটি দারুণ আনন্দের। এটি পাঁচ হাজার বছরের পুরনো এক উৎসব। ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও এটি মূলত অসাম্প্রদায়িকতার বার্তা বহন করে। ইরানের পাশাপাশি এশিয়ার অনেক দেশেই প্রচলিত রয়েছে এই উৎসব। বক্তব্যের এ পর্যায়ে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশে কোন নতুন জিনিস নয়। এটি ৫০০ বছর ধরে ঢাকায় উদ্যাপিত হচ্ছে। আমার ছোটবেলায় পুরনো ঢাকার সাড়ম্বরে এই উৎসবের উদ্যাপন দেখেছি। এ উৎসবের ভেতর থাকতো সাত ধরনের খাবার। সেসব খাবারের বিষয়ে কোন রংকে প্রাধান্য দেয়া হতো। এমনকি পোশাকেও উঠে আসতো সেই রংটি। আমাদের এখানে নওরোজ উদ্্যাপনের মূল কারণটি হচ্ছে আমরা ইন্দো-পার্সিয়ান সভ্যতার অংশ। সে কারণেই পারস্যের প্রভাব আমাদের ভাষা-সাহিত্য ও জীবনযাপনে নানাভাবে বিরাজমান। এমনকি বাংলা সাহিত্যের ভেতরে রয়েছে অনেক ফারসি শব্দের ব্যবহার। বিশেষ করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ফারসি শব্দের প্রয়োগে অসংখ্য গান-কবিতা সৃষ্টি করেছেন। ম. হামিদ বলেন, ইরানে বসন্তের প্রথমদিন হিসেবে গণ্য করা হয় ২১ মার্চকে। আর সেটাই হচ্ছে ইরানের নওরোজ বা নববর্ষ। আমাদের নববর্ষ ও বসন্ত উদ্যাপনের মতোই নানা বর্ণিল অনুষঙ্গ রয়েছে তাদের এ আয়োজনে। বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এই উৎসবটি তারা দুই সপ্তাহ ধরে উদ্যাপন করে। এ উৎসব তাদের পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও বেশি রঙিন করে তোলে। তাদের মতো আমাদের নববর্ষও এখন দারুণ বর্ণময়। এটি গ্রাম পেরিয়ে বর্তমানে ছড়িয়ে গেছে নগরে। হয়ে উঠেছে আমাদের সংস্কৃতির অপরিহার্য অংশ। সাইয়্যেদ মুসা হোসেন বলেন, ইরানী নববর্ষ নওরোজ ও বাংলা নববর্ষ নওরোজ উদ্যাপনের বাংলাদেশ ও ইরান এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। নওরোজ শব্দের মানে নতুন। এর মাঝে লুকিয়ে আছে নববর্ষের নতুন দিনের আগমনী বার্তা। প্রাচীন এই উৎসবের ভেতরে রয়েছে অনেক অর্থপূর্ণ বারতা। এটা ইরানের জাতীয় উৎসব। আর এটা শুধু নতুন বছরের উদ্যাপন নয়, বহন করে মানবিক ও চারিত্রিক মূল্যবোধ। এর মাধ্যমে নতুন দিনের আগমনীর সঙ্গে প্রকৃতির পুনর্জাগরণ ও নতুন জীবনের যাত্রা শুরু হয়। ইরানের বাইরেও পৃথিবীর নানা দেশে এ উৎসব উদ্্যাপিত হয়। নতুন বছরের এ আয়োজন ইরানের মানুষের কাছে যেন ঈদের আনন্দ হয়ে ধরা দেয়। নতুন বছরে পুরনো সব মান-অভিমান ভুলে মানুষ মিলে যায় আনন্দ আবাহনে। আলোচনা শেষে শুরু হয় বাংলা এবং ফারসি ভাষার গান-কবিতায় সজ্জিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ফকির লালন সাঁই ও শাহ আবদুল করিমের বাণীকে কণ্ঠে ধারণ করে মঞ্চে আসেন সমির বাউল। গেয়ে শোনান, ‘আমি অপার হয়ে বসে আছি’, ‘জাত গেল জাত গেল বলে’ ও ‘কোন মিস্ত্রী নাও বানাইছে’। এই শিল্পীর ছেলে আবির শুনিয়েছেন ‘ধন্য ধন্য বলি তারে’। গণগ্রন্থাগারে আবৃত্তিসন্ধ্যা ‘ধারা নিরন্তর’ ॥ কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে সাজানো ছিল আয়োজনটি। তাই কবিতাপ্রেমীদের কাছে সন্ধ্যাটি হয়ে ওঠে প্রশান্তিময়। মুক্তধারা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র শুক্রবার সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজন করে ‘ধারা নিরন্তর’ শীর্ষক আবৃত্তি অনুষ্ঠান। এতে কবিতা পাঠ করেন আবৃত্তিশিল্পী কাজী মদিনা, নিরঞ্জন অধিকারী, ডালিয়া আহমেদ, হাসান আরিফ ও তামান্না সারোয়ার নীপা।
×