ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজীব এখনও বুঝতে পারছে না তার একটা হাত নেই

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ৭ এপ্রিল ২০১৮

রাজীব এখনও বুঝতে পারছে  না তার একটা হাত নেই

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ বাস দুর্ঘটনায় ডান হাত হারানো সরকারী তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হোসেন (২১) মস্তিষ্কের সামনের অংশের দু’পাশে বেশ আঘাত লেগেছে। মাথার পেছনে আঘাত পেয়েছেন। এতে ব্রেনে সামান্য রক্তক্ষরণের পাশাপাশি পানিও জমেছে। যা এখন শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাথায় অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য তাকে হাই-কেয়ারের জন্য আইসিইউতে রাখা হয়েছে। এদিকে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাজীবকে দেখতে গিয়েছিলেন জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ ও পটুয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য এ এস এম ফিরোজ। তিনি রাজীবকে আশ্বস্ত করে বলেন, চিন্তা করো না। আমরা তোমার পাশে আছি। প্রধানমন্ত্রীও তোমার পাশে আছেন। শুক্রবার রাজীবের চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ শামসুজ্জামান বলেন, রাজীবের মাথার সামনে ও পেছনের হাড় ভেঙ্গে গেছে, ব্রেনের সামনের দিকেও আঘাত পেয়েছে। আপাতত মাথার সার্জারি লাগবে না জানিয়ে তিনি বলেন, হাতের আঘাতের জায়গায় আরও কয়েকটা সার্জারি করতে হবে। তিনি জানান, মাথায় আঘাতের এসব রোগীর দ্রুত অবনতি হয়। তাই রাজীবকে হাই-কেয়ারের জন্য আইসিইউতে রাখা হয়েছে। যে কারণে রাজীবকে আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। দুপুরে রাজীবের মামা জাহিদুল ইসলাম জানান, রাজীবের উন্নতির কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আইসিইউতে রাজীবের সঙ্গে দেখা করেছি। কিন্তু সে এতোটাই মানসিক শকে রয়েছে যে, মাঝে মাঝে আমাদের চিনতে পারছে না। তিনি আরও বলেন, সরকারের কাছে বিনয়ভাবে অনুরোধ করছি, রাজীবকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়া হোক। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ শিক্ষার্থী ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউর ৩০ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রাজীবের সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটান। তিনি তার সঙ্গে কথা বলেন। রাজীব আমি চীফ হুইপ ফিরোজ, চিনতে পারছ? চোখ বন্ধ রেখে ‘হুম’ বলে সাড়া দেন রাজীব। পরে চীফ হুইপ বলেন, চিন্তা করো না, আমরা আছি তোমার পাশে। প্রধানমন্ত্রী আছেন তোমার পাশে। এ সময় রাজীব মাথা নেড়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করেন। তবে তিনি বলতে পারেননি। শুধু মাথা নাড়েন। রাজীবের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে তার চিকিৎসা সম্পর্কে চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে কথা বলেন চীফ হুইপ। কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক চীফ হুইপকে জানান, রাজীবের শুধু হাত ডেমারেজ হলে হয়তো তেমন শঙ্কা থাকত না। কিন্তু তার মাথার সামনের অংশের দু’পাশের মস্তিষ্কে আঘাত রয়েছে। এটিই এখন সবচেয়ে বড় শঙ্কা। পরে চীফ হুইপ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, রাজীবের চিকিৎসায় সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ ও সরকার। সেই সঙ্গে তার ক্ষতিপূরণে আদালত যে রায় দিয়েছে তা পরিশোধের অনুরোধ জানান তিনি। এদিকে প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, রাজীব হোসেন হয়তো শুধু হাতই হারিয়েছেন। কিন্তু সিটি স্ক্যান ও এমআরআই করার পর চিকিৎসকরা বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, রাজীবের মাথার খুলিতেও চির ধরেছে। মস্তিষ্কেও তার আঘাত লেগেছে, রক্ত জমেছে। জ্ঞান ফিরলেও কথা বলছেন না, খাবারও মুখে তুলছেন না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও বৃহস্পতিবার রাজীবকে হাসপাতালে দেখে এসে চাকরির ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন। আর হাইকোর্ট বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনকে রাজীবের চিকিৎসার ব্যয় বহনের পাশাপাশি কৃত্রিম হাত সংযোজনের খরচ দিতে নির্দেশ দিয়েছে। রাজীবের খালা খাদিজা বেগম লিপি জানান, রাজীব এখনও বুঝতে পারছে না যে দুই বাসের চাপায় ওর একটা হাত নেই। ও হাসপাতালে আছে নাকি বাসায় সেটাও বুঝতে পারছে না। তিনি জানান, ওকে যখন রাজীব বলে ডাক দেই। ও শুধু ‘হ্যাঁ’ বলে, আর কোন কথা বলে না। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামের রাজীব তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় মা এবং অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় বাবাকে হারান। ঢাকার মতিঝিলে খালার বাসায় থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে তিনি ভর্তি হন তিতুমীর কলেজে। বাসে করে কলেজে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার দুপুরে সার্ক ফোয়ারার কাছে দুই বাসের মাঝে চাপা পড়ে রাজীবের ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দুর্ঘটনায় পড়ার পর রাজীবকে প্রথম পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে আইসিইউতে রাখা হয়েছে তাকে। খাদিজা বেগম জানান, তিতুমীর কলেজে স্নাতকে ভর্তি হওয়ার পর রাজীব যাত্রাবাড়ীতে একটি মেসে থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি কম্পিউটারের দোকানে কাজ নিয়েছিলেন। কম্পিউটারের দোকানে কাজ করে রাজীব নিজের পড়াশোনা আর ছোট দুই ভাইয়ের খরচ চালাতেন। রাজীবের ছোট দুই ভাই যাত্রাবাড়ীর তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসায় ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে বলে জানান খাদিজা।
×