ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস আজ

গড়ে ওঠেনি ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা’র পূর্ণাঙ্গ কাঠামো

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ৭ এপ্রিল ২০১৮

গড়ে ওঠেনি ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা’র পূর্ণাঙ্গ কাঠামো

নিখিল মানখিন ॥ স্বাস্থ্য বিষয়ক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের বেশ অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামগ্রিক বিবেচনায় দেশে এখনও ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ ধারণার পূর্ণাঙ্গ কাঠামো গড়ে ওঠেনি। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু চিত্র দৃশ্যমান হলেও সেগুলো ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ কাঠামোর কার্যকর উপাদান হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারছে না। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে গিয়ে কোন রোগীর পরিবার আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে গেলে, অসহনীয় মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণার শিকার হলে সেখানে ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ ধারণা আর কার্যকর থাকে না। দেশের মোট জনসংখ্যার বড় অংশ এখনও বিভিন্ন জটিল রোগের উন্নত চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারে না। উন্নত স্বাস্থ্যসেবা এখনও অনেকটাই জেলা ও বিভাগ কেন্দ্রিক। উপজেলা পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নাই। জটিল জটিল অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের মাত্রাও অনেকগুণ বেড়েছে। চিকিৎসা ব্যয় ও ওষুধের দামও অনেক বেড়েছে। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তি ও ভোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণীর জনগোষ্ঠীর মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। কিছু কিছু অসমতা এতটাই তীব্র ও প্রতিকূল যে, সমষ্টিগতভাবে তা দেশের অগ্রগতির অন্তরায়। কোন কোন ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতে অর্জিত সাফল্য টিকিয়ে রাখাই কষ্টকর। আবার কিছু ক্ষেত্রে স্থবিরতার লক্ষণ দৃশ্যমান। সুস্বাস্থ্য এখনও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিশেষ করে বস্তিবাসীদের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। বেসরকারী হাসপাতালের ব্যয়বহুল চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারে না অধিকাংশ সাধারণ মানুষ। সরকারী স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা প্রদানকারীদের বড় অংশের দায়িত্ব পালনে অবহেলার বিষয়টি দীর্ঘ বছর ধরে বেশ আলোচিত হয়ে আসছে। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ শনিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। স্বাস্থ্য সেক্টরে বাংলাদেশের অগ্রগতির বেশ কিছু দিক তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, স্বাস্থ্য খাতে যুগান্তকারী সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রশংসিত হয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে। স্বাস্থ্য বিষয়ক সহস্রাব্দ অর্জনের পর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। দেশের সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার নেটওয়ার্ক। এমন মজবুত অবকাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মাত্রার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে জনবল বৃদ্ধি, অবকাঠামোর উন্নয়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যু হ্রাস, ওষুধের সরবরাহ বৃদ্ধি, কমিউনিটি ক্লিনিক চালু, স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম ইত্যাদি উন্নয়নমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। দেশের ৯৯ ভাগ উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে রয়েছে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিসেবার ব্যবস্থা। বর্তমানে প্রতিমাসে ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা নেন। দেশে অনুর্ধ ১২ মাস বয়সের শিশুদের সব টিকা প্রাপ্তির হার ৮১ ভাগ। হ্রাস পেয়েছে মাতৃ ও শিশুর মৃত্যুহার। পোলিও ও ধনুষ্টংকারমুক্ত হয়েছে দেশ। বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি উপ-খাতসমূহের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই সব কর্মসূচীর মূল লক্ষ্য হলো জনগণের বিশেষ করে মহিলা, শিশু এবং সুবিধাবঞ্চিতদের স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেবাপ্রাপ্তির চাহিদা বৃদ্ধি, কার্যকর সেবাপ্রাপ্তি সহজলভ্য এবং স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেবাসমূহের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস, রোগের প্রাদুর্ভাব ও মৃত্যুর হার হ্রাস এবং পুষ্টিমান বৃদ্ধি করা। দেশব্যাপী একটি ব্যাপকভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানান মোহাম্মদ নাসিম। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে জানান, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষের অতি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুবিধা গ্রহণের সুযোগ নেই। দেশে স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় এর ৬৭ শতাংশই রোগীকে বহন করতে হয়। এই খরচের ৪০ শতাংশেরও বেশি অর্থ ব্যয় হয় ওষুধ ক্রয়ে। স্বাস্থ্য ব্যয় কমিয়ে আনতে ওষুধের মূল্য নির্ধারণ জরুরী। রোগী এবং চিকিৎসকের স্বার্থ সুরক্ষায় সরকার ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ করছে। যা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যেই আইনটি কেবিনেটে উঠবে। দেশে ১৮ থেকে ২২ শতাংশ মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বাস করে। দরিদ্র সীমার এই তারতম্যের অন্যতম কারণ স্বাস্থ্য সেবায় ব্যয় বৃদ্ধি। স্বাস্থ্য ব্যয় কমিয়ে আনা সম্ভব হলে দেশে দরিদ্র সীমার মাত্রা কমে আসবে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা : সবার জন্য, সর্বত্র’। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা এমন একটি বিষয় যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি সর্বত্র প্রয়োজনীয় মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পাবে এবং এই স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার জন্য তাকে কোন আর্থিক ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হবে না। এর মূল লক্ষ্য হলোÑ চিকিৎসা ব্যয় সমন্বয়ের মাধ্যমে রোগীর নিজস্ব পকেট থেকে খরচের পরিমাণ কমানো। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ২০২৩ সালের মধ্যে পৃথিবীর আরও ১০০ কোটি মানুষকে অতি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুবিধার আওতায় নিয়ে আসতে হবে এবং চিকিৎসাসেবার ব্যয় বহন করতে গিয়ে বছরে যে প্রায় ১০ কোটি মানুষ অতি দরিদ্র হয়ে পরছে তার সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি দক্ষ জনবল তৈরির জন্যও সরকার কাজ করছে। তারই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, নতুন নতুন মেডিক্যাল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউটসহ অন্যান্য চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদে ১৩ হাজার ডাক্তার, ১৫ হাজার নার্স এবং ১৬ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ বছরেই নতুন ১০ হাজার চিকিৎসক, ৫ হাজার নার্স এবং ৪০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠী বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী, নারী ও শিশুদের জন্য উন্নত ও সহজলভ্য মানসম্মত সেবা প্রদান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশে একটি কার্যকর এবং গ্রহণযোগ্য সেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। সরকারের স্বাস্থ্য খাতের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছেÑ মাতৃ মৃত্যুহার, শিশু মৃত্যুহার, সংক্রামক ও অসংক্রামক ব্যাধির বিস্তার, সার্বিক প্রজনন হার ও অনাকাক্সিক্ষত প্রজনন হার হ্রাসকরণ এবং মহিলা ও পুরুষের গড় আয়ু, প্রথম সন্তান জন্মের সময় মায়ের বয়স, পুষ্টিরমান ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিকরণ। এসব উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে প্রতি ৬০০০ জনগোষ্ঠীর জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বর্তমানে প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে জনগণ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। সরকার উন্নত ও বিশেষায়িত চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন নতুন হাসপাতাল নির্মাণের পাশপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যাবৃদ্ধি এবং আধুনিক সুযোগ সুবিধা প্রদানের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ খন্দকার মোঃ সিফায়েত উল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে জনবল বৃদ্ধি, অবকাঠামোর উন্নয়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যু হ্রাস, ওষুধের সরবরাহ বৃদ্ধি, কমিউনিটি ক্লিনিক চালু, স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম ইত্যাদি উন্নয়নমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। কিন্তু থানা ও জেলা পর্যায়ে কম খরচে জটিল রোগের চিকিৎসার সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে দরিদ্র মানুষ উপকৃত হতো। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার জন্য ব্যয় করতে হতো না। মানসম্মত স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সেবাদানকারীদের মন-মানসিকতার ওপর নির্ভর করে। মানসম্মত সেবাদানের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা না থাকলে ভাল স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব না বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সরকারী স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোর দক্ষ ও ফলপ্রসূ ব্যবহারের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয়, সংগ্রহ, রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত এবং সংস্কার করার জন্যে প্রচলিত সরকারী নীতিমালা সময়সাপেক্ষ ও জটিল হওয়ায় সেটি প্রায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে অন্তরায় হয়ে উঠে। পর্যাপ্ত জনবল, আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাসহ প্রয়োগধর্মী জাতীয় স্বাস্থ্য গবেষণা ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। এতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও কর্মসূচী, সেবা প্রদান ও গরিববান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন এবং গবেষণার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন বিঘিœত হয়। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যবস্থাপনা উন্নত করার উদ্দেশ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার এখনও যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য জনশক্তির আগ্রহ ও দক্ষতার অভাব এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অপ্রতুলতা বেশ দৃশ্যমান। সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সরবরাহকৃত ওষুধ বিতরণে কার্যকর মনিটরিংয়ের অভাব, দক্ষ ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জনবলের অভাব, যন্ত্রপাতি ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্থাপনায় রক্ষণাবেক্ষণের দুর্বলতা ও প্রশাসনের জটিলতা এবং সুসংগঠিত রেডারেল পদ্ধতি না থাকায় স্বাস্থ্য অবকাঠামোর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা যাচ্ছে না। দেশে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সৃষ্ট বর্জ্যরে ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ, পেশাগত স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার দিক দিয়ে সন্তোষজনক নয়। স্বাস্থ্যসেবার পূর্ণতা অর্জনের জন্য সরকারী এবং বেসরকারী খাতে অর্থের সংকুলান ও ব্যবস্থাপনা অপর্যাপ্ত। স্বাস্থ্য খাতে বাজেটের স্বল্পতাও রয়েছে। এভাবে স্বাস্থ্য খাতের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করেছে। সেগুলো হচ্ছে, সেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে অনেকাংশেই দুর্বল ব্যবস্থাপনা, সম্পদের সীমাবদ্ধতা ও সেবার দুর্বল গুণগতমান। আর সেবা গ্রহীতার তথা চাহিদার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের অসামর্থ্যতা, জ্ঞান ও স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ না করা। সুস্বাস্থ্য এখনও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিশেষ করে বস্তিবাসীদের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার বিভাগের সক্ষমতা এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের ভূমিকা এখনও পর্যাপ্ত নয়। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট জনশক্তির দক্ষতা সংমিশ্রণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভারসাম্যহীনতা স্বাস্থ্য সেবা কাঠামোর বিভিন্ন স্তরে মানসম্মত প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানে অন্তরায় হয়ে উঠছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক ডাঃ মুস্তাক হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও স্বাস্থ্য সেক্টরে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশে মারাত্মক পানিজনিত সমস্যা বিদ্যমান। আর জলবায়ুর পরিবর্তন এ সমস্যাকে আরও ঘনীভূত করেছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে রক্ষার জন্য দারিদ্র্যের সঙ্গে সম্পর্কিত রোগসমূহ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী। গ্রীন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমানোর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কমানো এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট প্রায় সকল পরিবেশগত ও সামাজিক বিপর্যয় চূড়ান্তভাবে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। জলবায়ু পরিবর্তন এ অঞ্চলের সব দেশের উপর প্রভাব ফেলবে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিদ্যমান অসমতার কারণে সৃষ্ট ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যথেষ্ট সক্ষম নয়। নগর পরিকল্পনা, পরিবহন ব্যবস্থা এবং খাদ্য উৎপাদন ও মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে আন্তঃসেক্টর পরিকল্পনার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানো সম্ভব।
×