ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নতুন জঞ্জাল ই-বর্জ্য চলতি শতকে জনস্বাস্থ্যের বড় হুমকি

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ৭ এপ্রিল ২০১৮

নতুন জঞ্জাল ই-বর্জ্য  চলতি শতকে জনস্বাস্থ্যের বড় হুমকি

নতুন জঞ্জাল ই-বর্জ্য। আপনার কাছেও থাকতে পারে। হয়তো ফেলে দেননি। ঘরেই আছে, পরিত্যক্ত জিনিসপত্রের মধ্যে। হয়তো ফেলে দিয়েছেন বাড়ির বাইরে। কখনও কোন ডাস্টবিনে। হতে পারে কোথাও না ফেলে ভাসমান ভাংড়ি ক্রেতার কাছে বিক্রি করেছেন। ফেলে দেয়া জিনিস যা পাওয়া যায় এই ভেবে। এই পণ্যই আপনি ব্যবহার করেছেন প্রয়োজনের জন্য। এক সময় নষ্ট হয়ে যায়। তারপর- এই বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট কোন ডাস্টবিন ও ভাগাড় নেই। দেশের প্রতিটি এলাকায় এই বর্জ্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। এই বর্জ্যরে নামকরণ হয়েছে ই-ওয়েস্ট বা ই-বর্জ্য। বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদ ও সুধীজন বলছেন, ই বর্জ্য একবিংশ শতকে জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। ই-বর্জ্য হলো : বাতিল ও পরিত্যক্ত মোবাইল ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ কম্পিউটার, বিদ্যুত সাশ্রয়ী বাতি, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন, এয়ার কন্ডিশনার, ওভেন, টোস্টার ইত্যাদি। দেশে সেল বা মোবাইল ফোন (মুঠো ফোন) ব্যবহারকারীর সংখ্যা অন্তত ১৩ কোটি। অনেকের কাছে একাধিক সাব্সক্রাইবার আইডেন্টিটি মডিউল (সিম) কার্ড আছে। এ জন্য কেউ ব্যবহার করেন একাধিক সেট। ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য ভাল কোন এ্যান্ডরয়েড বা আই ফোন সেট ব্যবহার করেন। মোবাইল ফোন সেট ব্যবসায়ী সমিতির এক তথ্যে বলা হয়, প্রতি বছর মোবাইল ফোন সেট আমদানি হচ্ছে অন্তত ৩ কোটি পিস। এর বাইরে অবৈধ পথে আসছে ৫০ লাখেরও বেশি। স্মার্ট ফোনগুলোর (এ্যান্ডরয়েড ও আই ফোন) মধ্যেও ব্র্যান্ড কোম্পানি ছাড়াও অন্যগুলো বেশিদিন টেকসই হচ্ছে না। এই সেটগুলো একসময় ই-বর্জ্য হয়ে যায়। ফেলে দেয়া হয় ঘরের বাইরে। বিশ্বের নামকরা ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে দেশে ইলেকট্রনিকস পণ্য টিভি ফ্রিজ কম্পিউটার ও অন্যান্য সামগ্রী রফতানি করে। একাধিক সূত্র জানায়, এক ধরনের চতুর ব্যবসায়ী বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ‘এ্যাকসেসরিজ’ বাইরে থেকে কিনে এনে দেশের মধ্যে এ্যাসেম্বেল করে ব্র্যান্ড কোম্পানির নামে বিক্রি করে। কখনও মনগড়া নাম দেয়। ক্রেতারা সহজেই প্রতারিত হয়ে কম দামে এইসব পণ্য কেনে। দেখা যায় কিছুদিন ব্যবহারের পর তা অকেজো হয়ে পড়ছে। মেরামতকারীদের কাছে নিয়ে গেলে তারা এক পার্টস খুলে আরেক পার্টস লাগিয়ে দিয়ে যেমন তেমন করে সারিয়ে দিচ্ছেন। এই পার্টসগুলো একসময় ই-বর্জ্য হচ্ছে। অকেজো ইলেকট্রনিক্স পণ্যটি এক সময় ভাংড়ি মালের দোকানে যাচ্ছে। পরিবেশবিদগণ বলছেন, এইসব ই-বর্জ্যে থাকে ক্ষতিকর ও বিষাক্ত ধাতু, নানা ধরনের রাসায়নিক যৌগ, সিসা, সিলিকন, টিন, রেজিন ফাইবার, ক্যাডমিয়াম, মারকারি, ক্রোমিয়াম, নাইট্রাস অক্সাইড, এক ধরনের গ্যাস ইত্যাদি। ফেলে দেয়া ই-বর্জ্যরে মধ্যে অনেক বিষাক্ত পদার্থ ও রাসায়নিক যৌগ আছে যা রোদে ও তাপমাত্রায় নানাভাবে বিক্রিয়া করে। অনেক সময় রোদে ফেলে দেয়া ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আইসি) থেকে নির্গত হয় ক্ষতিকর বিকিরণ। এই ই-বর্জ্য পানিতে ফেলে দিলে ও মাটিতে পুঁতে রেখে দেয়ার পরও বিষাক্ত থাবা বন্ধ থাকে না। যা মাটি, মানুষ ও প্রকৃতির জন্য বিপজ্জনক। উন্নত দেশগুলো ই-বর্জ্যরে প্লাস্টিকের অংশটি আলাদা করে রিসাইক্লিং করছে। বাকি বর্জ্য বিশেষায়িত ভাগাড়ে ফেলে দিচ্ছে। তা ছাড়া উন্নত বিশ্বে কোন ইলেকট্রনিক্স পণ্য সামান্য নষ্ট হলে বাড়ির বাইরে কোন নিদিষ্ট স্থানে ফেলে রাখে। প্রবাসীরা তা সংগ্রহ করে তাদের দেশে পাঠায়। এভাবেও উন্নত বিশ্বের লোকজন ই-বর্জ্য কৌশলে পার করে দিচ্ছে। কিছু ফেলা হচ্ছে মহাসাগরে। বাংলাদেশে এ ধরনের ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি। ই-বর্জ্য নিয়ে সরকারী-বেসরকারী কোন সংস্থারই মাথা ব্যথা নেই। একজন পরিবেশবিদ বলেন, ইলেকট্রনিক্স কিছু পণ্যের মধ্যে এক ধরনের রাসায়নিক ক্লোরো ফ্লুরো কার্বন (সিএফসি) পাওয়া যাচ্ছে। শ্বাসকষ্ট নিরাময়ের ইনহেলারেও সিএফসি মিলছে। পণ্যে সিএফসি ব্যবহার নিষেধ। এটা এক ধরনের গ্যাস। ই-বর্জ্যে কত ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ আছে এই বিষয়ে তিনি বলেন, এভাবে এর হিসাব হয় না। তারপরও বলা যায় এই সংখ্যা অন্তত এক হাজার। একটি বেসরকারী সংস্থার জরিপে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে ই বর্জ্যরে পরিমাণ ছিল ৫১ লাখ মে.টন। পরবর্তী বছরেই তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ১০ লাখ টনে। বর্তমানে এই পরিমাণ অন্তত ৮ লাখ টন। যার বেশিরভাগই আসছে মোবাইল ফোন ও ট্যাব থেকে। এই পরিমাণ বর্জ্য সারা দেশের কোন না কোন জনবহুল স্থানে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। নগরী ও জেলা শহরগুলোরে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের মেরামতকারীদের দোকানে ও ভাংড়ির দোকানে গেলে দেখা যায় ই-বর্জ্য স্তুপ হয়ে আছে। ই-বর্জ্য হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে। -সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×