ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এক পরিবারে পাঁচ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ৭ এপ্রিল ২০১৮

এক পরিবারে পাঁচ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী

কুড়িগ্রামে একই পরিবারে ৫জন সদস্য দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ায় অভাব-অনটনে দিনাপাতি করছে একটি পরিবার। জন্মগতভাবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে অন্ধত্ববরণ করেছে। প্রতিবেশীদের সাহায্য সহযোগিতায় খেয়ে না খেয়ে দিনাপাতিত করলেও জনপ্রতিনিধিদের থেকে বঞ্চিত পরিবারটি। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকা চর সুভারকুটি গ্রামের বাসিন্দা শহিদার রহমান (৫৫)। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ৭ জনের সংসার। এর মধ্যে ৪ মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে ছাবেরা সিদ্দিকা (৯) বিয়ে হয়ে গেছে গত বছর। ধারদেনা আর অন্যের সাহায্য সহযোগিতায় মেয়ের বিয়েতে যৌতুক হিসেবে ৪০হাজার টাকা আর একটি বাইসাইকেল দেয়। বর্তমানে ৬জনের সংসার। শহিদার, স্ত্রী আসমা বেগম (৪০) শফিকা (১৪), মাসুম (১১) শরিফা (৯) এই ৫জনই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। দীর্ঘ ২৩বছর ধরে শহিদার রহমান চর সুভারকুটি মসজিদে মোয়াজ্জিন ছিলেন তিনি। সেখানে ৩শ’ টাকা দিয়ে শুরু করে ২হাজার টাকা বেতন পেলেও ২১মার্চ সেই কাজটিও শেষ হয়ে যায় তার। এখন সংসারের আয় বলতে শুধু প্রতিবন্ধী ৭শ’ টাকার ভাতা কার্ডটি সম্বল। জায়গা জমি ১০শতক বাড়িভিটে টুকুই। দ্বিতীয় মেয়ে সাইয়েদা সিদ্দিকা (১৬) চর সুভার হলোখানা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী। বাকি ছেলেমেয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ায় প্রাইমারী স্কুলেও বেশি দিন পড়তে পাড়েনি। এখন মাদ্রাসায় পড়ছে তারা। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিসহ ৫জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ায় একমাত্র পড়ুয়া মেয়েটিরও পড়াশোনা বন্ধ হবার উপক্রম বলে জানালেন অশ্রুসিক্ত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শহিদার রহমান। শহিদারের স্ত্রী আসমা বেগম বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে আমার টাইফয়েড জ্বর হয়েছিল। জ্বরে ভালভাবে চিকিৎসা না করার কারণে তারও একটি চোখ প্রায় অন্ধ হয়ে গেছে। অপর চোখ দিয়ে ঝাপসা দেখে কোন রকম সংসারের ঘানি টানছেন তিনি। অর্থাভাবের জন্য কারোই চোখের চিকিৎসা করাতে পারছেন না তারা। স্বামীর একমাত্র কর্ম মোয়াজ্জিনের কাজটিও নেই এতে করে সংসারে দেখা দিয়েছে আরও অভাব। সিভিল সার্জন ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম জানান, জন্মগতভাবে একই পরিবারের ৫জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হবার বিষয়টি তার নজরে এসেছে। তিনি বলেন, সম্ভবত কনজানিটাল এ্যাব নরমাল থেকে এটি হয়েছে। আক্রান্তদের কর্ণিয়া সংযোজনের মাধ্যমে এটি নিরাময় করা যায়। যা আমাদের দেশেই করা সম্ভব তবে তা ব্যয়বহুল। তিনি আরও বলেন, তাদের সঙ্গে রেফারেল লিংকেজের মাধ্যমে যোগাযোগ করে পর্যায়ক্রমে তাদের চিকিৎসা করার ব্যবস্থা নেবার উদ্যোগ নেবেন। -রাজুমোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম থেকে
×