ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এবার পা বাড়াই পারকী সমুদ্র সৈকতের পথে। গাড়ি চলছে এক শ’ এক শ’। পৌঁছি সাঁজ বেলায়। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে কিছুটা সময় চেয়ে নিয়ে, নোনা জলে হাবুডুবুতে মেতে উঠি। এক চক্করে অনেক কিছু দেখে বন্ধুরা তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে

গন্ডামারার পথে...

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ৬ এপ্রিল ২০১৮

গন্ডামারার পথে...

মোঃ জাভেদ হাকিম গিয়েছিলাম গন্ডামারা। নামের মধ্যেই কেমন যেন এক আদিমতা। দে ছুট ভ্রমণ সংঘ সংগঠনের বন্ধুরা ২৮ সেপ্টেম্বর সুপার মুন উপভোগ করার জন্য গন্ডামারা সাদা বালুর সৈকতকে বেছে নিয়েছিলাম কিন্তু তা আর কপালে হয় নাই- তাই বলে হাল না ছেড়ে গত ২১ অক্টোবর, রাতে মাইক্রোতে ছুটে ছিলাম গ-ামারার পথে। এবার জন সংখ্যায় ছিলাম কম তাই বাড়তি মানসিক প্রেশান ছিল না, গাড়ির সিটে আয়েশ করে বসতে না পারার জন্য ছিল না কোন বন্ধুর গোমড়া মুখের অভিযোগ। রাত ৯টায় ধানমন্ডি থেকে গাড়ি স্টার্টের সঙ্গে সঙ্গে যেন আমাদের নির্ভেজাল আনন্দের মাত্রাও বাড়তে ছিল।সারা পথেই যেখানে খুশি থেমে পথের পাশে ঝুপড়ি কিংবা আলিশান রেস্তরাঁয় চা নাস্তা খেয়ে এগিয়েছি সামনের দিকে, পেছন থেকে কারো হারাবার ভয় ছিল না কিংবা কোন সদস্যকে ওয়াশ রুমে রেখেই গাড়ি চলে যায়নি বহুদূর। গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে। ঘড়ির কাটা ৫টা ২০ মিনিট। ফজরের নামাজ আদায়ের জন্য সিতাকুন্ড ব্রেক দেই। নামাজ শেষে ভোরের হিমেল হাওয়া গায়ে জড়িয়ে শাহ আমানাত সেতু পার হয়ে যাই বাঁশখালী উপজেলার বাণী গ্রাম বাজারে। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিল সংগঠনের নবীন সদস্য সোহাইল। ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই বাজারে পৌঁছাই। সকালের নাস্তা পর্ব শেষে গিয়ে উঠি মাদ্রাসা কনজুল উলুমের মেহমান খানায়। খানিকটা সময় বিশ্রাম নিয়ে ছুটি শঙ্খ নদীর তীরে। এর পরে যাই বাহার ছড়া সমুদ্র সৈকতে। তখন ছিল ভাটা, আমরা হেঁটে এগিয়ে যাই অনেক দূর, যা জোয়ারের সময় কল্পনাও করা যাবে না। প্যাচপ্যেচে কাদার মধ্যে হাঁটার মাঝে যেন- আনন্দ ছিল অন্যরকম। পুরো সমুদ্র সৈকতটাই যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা কোন ক্যানভ্যাস। হৈ-হুল্লোড় আর ফটো সেশনের ফাঁকে কিনে নেই বেশকিছু তাজা সামুদ্রিক মাছ, বাড়তি আনন্দরে মাত্রা যোগ হয়েছিল যখন আমরা নিজেরাও একটি মাছ কাদা পানি থেকে ধরেছিলাম। আহ সে কি আনন্দ বুঝাতে পারব না। মাছ ধরার পর দে- ছুটের পোলাপানদের সঙ্গে সঙ্গে পুরো বাহার ছড়ার মায়াবী প্রকৃতিও যেন আনন্দে নেচে উঠে। শুরু হয় রান্নার আয়োজন। সমুদ্র সৈকতেই ত্রীপাল বিছিয়ে চলে ভুঁড়িভোজ অতঃপর ঝাউতলার ঝিরি ঝিরি বাতাসে সটান হয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম। এবার ছুটছি গন্ডামারার পথে। চল্লিশ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাই গন্ডামারা। গাড়ি রেখে লবণের ক্ষেত মাড়িয়ে যাচ্ছি সৈকতের ধারে। প্রায় সন্ধ্যা, রক্তিম আকাশ, দূরের গাছগুলো দিগন্ত ছুঁয়ে ঠাঁয় দড়িয়ে আছে। সে এক অন্যরকম ভাললাগা মনের ভেতর অজানা শিহরণ। প্রায় দশ মিনিট হেটেই আলিঙ্গন করি বিসৃত সাদা বালির সৈকত আর আছড়ে পড়া শুভ্র ফেনা তোলা ঢেউয়ের সঙ্গে। পুরো সৈকতজুড়েই শুধু দে ছুটের দুরন্ত দুর্বার ভ্রমণে দুর্নিবান আকর্ষণ বোধ করা অদম্য দামালের দল। এখনও অনেক ভ্রমণপিপাসুদের নিকট গন্ডামারা সৌন্দর্য রয়েছে অজানা। বাঁকা চাঁদের মায়াবী আলো, গর্জন তুলে আছড়ে পড়া ঠেউয়ের শব্দ আর সাদা বালিয়াড়ির মাঝে জম্পেশ আড্ডা জমানোর মজাই অন্যরকম। এবারের ভ্রমণ সঙ্গী ছিল টাইগার জসিম, আরাফাত, ইউশা ও গোয়েন্দা রনী। তাদের আনন্দের বাঁধ ভেঙ্গে যেন পুরো গন্ডামারা সৈকতে ছড়িয়ে পরেছিল। টনক ফিরে যখন ঘড়ির কাটায় চোখ আটকায়। এবার সরল গ্রামের পথে ছুট। রাতের আপ্যায়ন ও আশ্রয় মিলে ফেসবুক বন্ধু সোহাইলের বাড়িতে। শুরু হয় বার বি কিউ পার্টি- অতপর মজাদার খাবার দিয়ে রাতের ভুঁড়িভোজ। পরেরদিন সকালে বাড়ির বাবা-মা ভাবি আর পরিচয় করিয়ে না দেয়া বিয়াইন সাহেবা থেকে বিদায় নিয়ে ছুটি বাঁশখালী ইকো পার্কের পথে। ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই জলদি বাজার পেরিয়ে ঢুকে যাই নিরিবিলি প্রাকৃতিক প্রাচুর্যতায় ভরপুর- ইকোপার্কের সরু পথে। দুপাশের নয়নজুড়ানো প্রকৃতির লুটপুটি মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকি। গাড়ি থামে ইকোপার্কের গেটে। জনপ্রতি দশ টাকা টিকেট কেটে প্রবেশ করি সবুজের স্বর্গ বাঁশখালী ইকোপার্কের ভেতরে। সিড়ি বেয়ে উঠি উপরে, বসি ছাতার নিচে। চোখ আটকালো কিছু বিশ্রি শব্দের লেখার প্রতি। মনে মনে ভাবলাম কতটা রুচিবান অক্ষর জ্ঞান ওয়ালা মানুষ। শিক্ষার হার এতটাই বেড়েছে যে এখন তা জাহীর করতে সর্বোচ্চ রুচিহীনতার পরিচয় দিতেও দ্বিধা করে না। এবার জুম্মা আদায়ের জন্য পার্কের ভেতরের মসজিদের উদ্দেশে গমন করি। নামাজিদের জন্য অজু এস্তেন্জার অব্যবস্থাপনা সত্যিই পিড়াদায়ক। পার্ক থেকে অনেক দূরেও গাড়ি পার্কিং করলে গুনতে হয় অকারণেই এক শ’ টাকা অথচ দূর-দূরান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীদের জন্য নেই কোন ভাল শৌচাগারের ব্যবস্থা। এ যেন উদার করা প্রকৃতির ভিড়ে দায়িত্বপ্রাপ্তরা সাক্ষাত এক রুক্ষ মানবতা। নামাজ শেষে কিছুটা সময় চলে, আমাদের বেলজ্জা সর্ট ফ্লিমের অভিনয়ের মহড়া। কান ধরে উঠ বসের অভিনয় সবাই বেশ ভাল করেছে। এর পরে গিয়ে উঠি শত ফিট উচ্চতার ওয়াচ টাওয়ারে, সেখান থেকে পূর্ব পাশে তাকালে এক অসাধারণ সৌন্দর্যে দু’নয়ন জুড়িয়ে যাবে। হেমন্তেও যেন বর্ষার মতো চারপাশটা সবুজ গালিচায় মোড়ানো। মোট এক হাজার হেক্টর জায়গাজুড়ে এই বাঁশখালী ইকোপার্ক। একটি ঝুলন্ত ব্রিজসহ দুটো ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। এক কথায় ইকোপার্কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কোন ভ্রমণপিপাসুকে তুষ্ট করবে নিঃসন্দেহে। এবার পা বাড়াই পারকী সমুদ্র সৈকতের পথে। গাড়ি চলছে এক শ’ এক শ’। পৌঁছি সাঁজ বেলায়। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে কিছুটা সময় চেয়ে নিয়ে, নোনা জলে হাবুডুবুতে মেতে উঠি। এক চক্করে অনেক কিছু দেখে বন্ধুরা তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে। এবার কচি ডাবের নুনা পানিতে গলা ভিজিয়ে- ছুটি আমার চিরচেনা ঢাকার পথে। কয়েকদিনের জন্য দূরে কোথাও গেলে মনে হয় নেই যেন কত বছর ধরে, আমার এই ইট কংক্রিটের আবরণে ঘেরা ঢাকা নগরে। হোক না যত যান্ত্রিক আর ঘিঞ্জি, তবুও তো আমার জন্মভূমি। যাতায়াত : ঢাকা থেকে রিজার্ভ মাইক্রো নিলে সবচেয়ে ভাল হবে। এছাড়া বাসে গিয়ে চট্টগাম জেইসি মোড়ে নেমে সিএনজি নিয়ে কিংবা বদ্বারহাট বাসটার্মিনাল হতে বাসে বাঁশখালী। সেখান থেকে সিএনজি নিয়ে ঘুরে বেড়ানো যাবে। থাকা-খাওয়া : জলদি বাজার এলাকায় মোটামুটি মানের আবাসিক হোটেল ও খাবারের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। খরচপাতি : দু’দিনের জন্য জনপ্রতি ৫০০০ টাকা হলেই হবে, তবে খরচ নির্ভর করে নিজেদের আয়োজনের উপরে।
×