ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ সেলিনা পারভিন একজন কৃতী চিকিৎসক

প্রকাশিত: ০৭:০১, ৬ এপ্রিল ২০১৮

ডাঃ সেলিনা পারভিন একজন কৃতী চিকিৎসক

বাগেরহাট জেলার বৈটপুর গ্রামের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মরহুম সামসুদ্দিন আহমেদ এবং সাতক্ষীরার রেসাতুন্নাহারের আট সন্তানের মধ্যে সেলিনা পারভিন পঞ্চম। শিক্ষক পিতা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বদলি হয়ে তার পেশাগত জীবন অতিবাহিত করেন। শেষ অবধি তিনি ঢাকা জেলার মোহাম্মদপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অবসরে যান। পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এ্যান্ড কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে শিক্ষকতার আরও কিছু সময় পার করেন। সুতরাং সেলিনা পারভিনের শিক্ষার্থী জীবনের সুবর্ণ সময় কাটে শিক্ষক পিতার ঘনিষ্ঠ সাহচর্যেই শুধু নয় ঢাকার বিখ্যাত স্কুল ও কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম পার করার মধ্যেও। আজিমপুর গার্লস হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং হলিক্রস কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তির প্রস্তুতি নিতে থাকেন। সৎ এবং আদর্শনিষ্ঠ পিতার সান্নিধ্যে অতি শৈশব থেকেই জীবনকে দেখেছেন বৈষয়িক সম্পদে প্রলুব্ধ হওয়া নয় মানবিক ও মায়াঘনবোধে আত্মিক আর মানসিক গড়ন তৈরি করাও। সেই চেতনায় নিজেকে লালন করেছেন, লক্ষ্যে এগিয়েই শুধু যাননি সর্বশেষ অর্জন বলতে যা বোঝায় সবটাই পেয়েছেন। ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় ১২০তম হলেও সেটা ছিল নিতান্ত শখের বিষয়। অর্থাৎ প্রকৌশলী হতে চাননি। এসব টানাপোড়েনে পরবর্তী বছর বরিশাল মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। মা-বাবা, ভাই-বোন অন্তঃপ্রাণ স্নেহময়ী পারভিনের অনেক কষ্ট হয়েছে সবাইকে ছেড়ে নদী স্রোত বরিশালে চিকিৎসা শাস্ত্র অর্জনের প্রয়োজনীয় সময়গুলো শেষ করতে। নিষ্ঠাবান এবং নিবেদিত ছাত্রীকে পরবর্তী সময়ে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। রাজনৈতিক সচেতন এই নারী শিক্ষার্থী জীবনে ছাত্র সংসদে নিজের প্রতিনিধিত্বও বজায় রাখেন। কোন মানুষের মানবিক মূল্যবোধ যদি তাকে চালিত করে সেখানে সাধারণ মানুষের পক্ষে কাজ করত তার কোন অসুবিধাই হয় না। এই সফল নারীর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। একজন অভিজ্ঞ এবং সুচিকিৎসক হতে গেলে প্রাতিষ্ঠানিক অর্জনগুলো যেমন নিজের আয়ত্তে আনতে হয় পাশাপাশি সততা, দক্ষতা আর নিষ্ঠাকেও সম্বল করে সামনে এগিয়ে চলতে হয়। চিকিৎসক হওয়ার পর সহপাঠী শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ আমিনুল হকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ফলে বিশেষজ্ঞ হওয়ার শিক্ষার্জনের সাময়িক বিরতি ঘটে। ইতোমধ্যে দুই সন্তানের জননী হয়ে যান। মেয়ে পরমা আমিনুল এবং ছেলে প্রমিত আমিনুল। এরপর আরও উচ্চতর ডিগ্রী নেয়ার অদম্য ইচ্ছা থেকে ১৯৯০ সালে এমসিপিএস, ডিজিও ডিগ্রী অর্জন করেন। ইতোমধ্যে ছোট ছেলে অপার আমিনুলের জন্ম। ফলে এফসিপিএস করতেও একটু দেরি হয়ে যায়। ২০০২ সালে স্ত্রীরোগও প্রসূতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের এই ডিগ্রী তার পেশাগত জীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখে। বরিশাল মেডিক্যালের স্ত্রীরোগও প্রসূতি বিভাগে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে (২০০৭-১৬) অবসরে যান। সরকারী চাকরি থেকে ছুটি মিললেও হাজার হাজার অসুস্থ ও অসহায় নারীর কাছ থেকে তিনি কখনও দূরে সরে সরে যাননি। এখনও তার অবসর কাটে দুস্থ, অনেকটা নির্বিত্ত, হতদরিদ্র গর্ভবতী নারীদের নিবিড় সান্নিধ্যে। গল্প করতে করতে বলছিলেন আমাদের দেশের মেয়েরা যে কত পেছনে পড়ে আছে বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা গর্ভবতী নারীরা সঠিক সময়ে তাদের রোগ চিনতেও ভুল করে। এসব মেয়ের শারীরিক যন্ত্রণাও অনেক সময় চিকিৎসার বাইরে চলে যায়। ছাত্র বয়স থেকে রবীন্দ্রনাথ পড়া এই চিকিৎসকের মতে মৃত্যুশয্যায় কবির শেষ অপারেশনে কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি ছিল। এখনও রবীন্দ্রসঙ্গীতে বিভোর হয়ে যান। রবীন্দ্রপ্রেমিক পারভিন এখনও কবির কত কবিতা যে তার স্মরণ চেতনায় অম্লান করে রেখেছেন সত্যিই বিমুগ্ধ হওয়ার মতোই। তার মতে রবীন্দ্র্র শূন্য হলে আমাদের আর বাঁচারও পথ থাকবে না, বরিশাল মেডিক্যালের স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি একজন জনপ্রিয় শিক্ষক হিসেবেও নিজের অবস্থানকে শক্ত করেছেন। পেশাগত জীবনের সর্বোচ্চ পদবি পূর্ণ অধ্যাপকের মর্যাদায়ও সাবলীলভাবে বিচরণ করেছেন। এসব করতে গিয়ে কোন ধরনের অন্যায় অবিচারকে আমলে নিতে দেখা যায়নি। তার নিজের ব্যক্তিগত রোগী আর চিকিৎসালয়ের রোগীর মধ্যে কখনও ফাঁরাক করেননি। ছাত্রছাত্রীর অতিপ্রিয় শিক্ষক অধ্যাপক ডাঃ সেলিনা পারভিন আজও তাদের কাছে এক আদর্শনিষ্ঠ চিকিৎসক। হাজার হাজার গর্ভকালীন মায়ের চিকিৎসা সেবা দেয়া এই কৃতী অনন্য নারী একজন সফল মাও বটে। বড় মেয়ে পরমা আমিনুল চিকিৎসাবিদ্যা শেষ করে পিজিতে এমডি কোর্সের উচ্চতর গবেষণায় নিয়োজিত। শুধু তাই নয়, প্রথমবারেই এফসিপিএসের ভর্তি পরীক্ষায় সফলকাম হওয়াও। বড় ছেলে প্রমিত আমিনুল আইনশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করে আরও উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিদেশ গমনের অপেক্ষায়। ছোট ছেলে অপার বরিশাল মেডিক্যালের শেষ বর্ষের ছাত্র।
×