ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অনু গল্প ॥ সাবান -রাব্বী আহমেদ

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ৬ এপ্রিল ২০১৮

অনু গল্প ॥  সাবান -রাব্বী আহমেদ

কলিং বেলের শব্দে বিরক্ত হয় শারমিন। আজ শনিবার। ছুটির দিন। ছুটির দিনে সাধারণত বাসায় অপরিচিত কেউ আসে না। পারভেজ এই দিন বাসায় থাকে। সারাদিন পারভেজকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়। ঘর গোছানো, টুকটাক রান্না বান্না করা, এছাড়া ইদানীং আরও একটা কাজ বেড়েছে। ছোট কাঁথা সেলাই করা। অসময়ে মাথা ব্যথা আর বমি বমি ভাব জানান দিচ্ছে ভালোবাসাবাসির প্রথম ফুল ফুটতে বেশি দেরি নেই। শারমিন বিরক্তি নিয়েই দরজা খুলল। তুমি? কিছুটা অবাক হয়ে শারমিন প্রশ্ন করে। ফরহাদ হাসছে। সেই ভুবন বিখ্যাত হাসি। চারুকলার বকুলতলায় বসে যে হাসি হাসতো তেমন হাসি। যে হাসির কারণে গোছালো শারমিন খুব সহজেই অগোছালো ফরহাদকে ভালোবেসেছিল সেই হাসি। শারমিন ধমকের সুরে বলল, হাসি থামাও। বল ঠিকানা কোথায় পেলে? কেন এসেছ? ফরহাদ শান্ত কণ্ঠে বলল, এখনো অগাধ অধিকার নিয়ে ধমকের সুরে কথা বলো। একবার কাউকে কোন অধিকার দিলে তা কখনো তুলে নেয়া যায় না। যাহোক এতদিন পরে কেন এসেছ বল? শারমিন শান্ত কন্ঠে বলল। তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করলো। ইদানীং খুব দেখতে ইচ্ছে করে। মনকে আটকাতে পারি না। ফরহাদ বলে। অনেকদিন পর ফরহাদকে দেখে শারমিন কিছুটা এলোমেলো হয়ে যায়। সেই ফরহাদ, একসময় কি ভয়ানক পাগলামি করতো। ক্যাম্পাস জীবনের অনেকটা সময় দু’জন একসাথে ছিল। বেশ জনপ্রিয় জুটি ছিল বন্ধু মহলে। সবাই জানতো ওদের বিয়ে হবে। কিন্তু হয়নি। হয়েছে অনাকাক্সিক্ষত বিচ্ছেদ। এরপর যে যার নিজের পথে হাঁটা। স্মৃতিকাতরতা শারমিনকে কাবু করে দেয়। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, বিয়ে করনি? ফরহাদ চুপ থাকে। ওর নীরবতা শারমিনকে আরও বেশি দুর্বল করে দেয়। একসময় নিজেই বলে, করনি তাহলে। ঐ যে শান্তা না কি একটা মেয়ে তোমার খোঁজ খবর নিত। ওকে বিয়ে করতে পারতে। -শান্তার কথা জানতে তুমি? তোমাকে কখনো বলেছি? -খোঁজতো ঠিকই রাখতাম। যাকে ভালোবাসি তাঁকে আর কে কে ভালোবাসে খোঁজ রাখবো না? ফরহাদ হাসলো। আগের মতো প্রাঞ্জল হাসি নয় মলিন হাসি। এই সংসারটা শারমিন আর ফরহাদের হবার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। পৃথিবীতে অনেক কিছুই হবার কথা থাকে। হয় না। বাইরেই দাঁড় করিয়ে রাখবে? ভেতরে ঢুকতে বলবে না? ফরহাদ শান্ত কণ্ঠে বলে। -আজ না ফরহাদ। অন্যদিন। বাসায় পারভেজ আছে। -কই? ভেতরে তো কাউকেই দেখছি না। -ও একটু বাইরে। এখনই এসে পড়বে। -বেশিক্ষণ থাকবো না। তিনদিন ধরে ঠিকভাবে খাওয়া দাওয়া হয়নি। গোসলও করিনি। একটা লুঙ্গি দাও। গোসল করবো। ততক্ষণে একটা ডিম ভাজো। খেয়ে চলে যাবো। -পিজ ফরহাদ, পাগলামি করো না। বোঝার চেষ্টা করো, আমি এখন তোমার প্রেমিকা নই। একজনের বিবাহিতা স্ত্রী। আমি তোমাকে কিছু টাকা দিচ্ছি। বাইরে থেকে খেয়ে নিও। -খাওয়ার চেয়েও গোসল করাটা জরুরী। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। পারভেজ সাহেবকে আমি চিনি। আমাদের প্রোজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার। আমাকে দেখে অবাক হবেন না। অনেকদিন বাসায় দাওয়াতও দিয়েছেন। আসিনি। আজ আমাকে দেখে নিশ্চয়ই খুশি হবেন। শারমিনের মাথা ঝিম ধরে আসে। কিছুক্ষণ ভেবে চাপা কণ্ঠে বলে, ভেতরে আসো লুঙ্গি দিচ্ছি। ফরহাদ ভেতরে ঠোকে। গোছানো সংসার। ফরহাদের সঙ্গে বিয়ে না হওয়াতে বোধহয় ভালোই হয়েছে। ফরহাদ নিশ্চয়ই শারমিনকে এত ভালো রাখতে পারতো না। খারাপ লাগে ওর। শারমিন রান্নাঘর থেকে ফিরে দেখে ফরহাদ নেই। বিছানার ওপর ভেজা তোয়ালে আর লুঙ্গি রাখা। ভাতের প্লেটটা হঠাৎ করেই হাত থেকে পড়ে যায় ওর। আহারে বেচারা। কতদিন ঠিকভাবে খায়নি। হয়তো হাতে টাকা নেই। কিংবা ইচ্ছা করেই খামখেয়ালি করছে। শারমিন ভাবে। পারভেজ এসে দেখে মেঝেতে ছড়ানো ছিটানো ভাত। কিছুটা অবাক হয়। কৌতূহলী কণ্ঠে শারমিনকে বলে, বউ তোমার শরীর কি আবার খারাপ করলো? শারমিন বললো, না। হাত থেকে ফসকে পড়ে গেল। তুমি কখন এলে? -এই তো এলাম। যাও গোসল করে এসো। একসঙ্গে খাবো। শারমিন ওয়াশরুমে ঢোকে। ঝরনার নিচে নিজের শরীরটাকে ছেড়ে দেয়। অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে ওর। সাবান হাতে নিয়ে আলতো করে সমস্ত শরীরে মেখে নেয়। হঠাৎ মনে পড়ে একটু আগেই ফরহাদ এখানে গোসল করেছে। শুধু তাই নয় এই সাবানটা একটু আগেই ফরহাদের শরীর প্রদক্ষিণ করেছে। এখন শারমিনের। শারমিন আর কিছুই ভাবতে পারে না। সাবানের গন্ধ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। মনে হয় ওর সারা শরীর জুড়ে ফরহাদ লেগে আছে। শারমিনের পৃথিবী অন্ধকার হয়ে আসে। চারদিকে প্রবল অন্ধকার। প্রচন্ড ঘোরের মাঝে ডুবে যাওয়ার আগ মুহূর্তে শারমিন বুঝতে পারে কেউ একজন ওর অর্ধনগ্ন আধভেজা শরীর ধরে আছে। আবছায়া আলো আঁধারে মানুষটাকে ফরহাদ মনে হয়।
×