ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হংকংয়ে অনুষ্ঠিত জকি ক্লাব গার্লস টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৫ নারী ফুটবল দলকে সংবর্ধনা

‘এই প্রথম শেষ ম্যাচের আগে রাতে ভাল ঘুমিয়েছিলাম’

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৬ এপ্রিল ২০১৮

‘এই প্রথম শেষ ম্যাচের আগে রাতে ভাল ঘুমিয়েছিলাম’

রুমেল খান ॥ বিদেশের মাটিতে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো শিরোপা জিতলো বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল। এর আগের দুটি জিতেছে অ-১৪ দল, শেষেরটি অ-১৫ দল (সার্বিকভাবে মেয়েরা জিতেছে পাঁচটি শিরোপা, অ-১৬ দল একটি, অ-১৫ দল আরেকটি, দুটিই দেশে)। প্রতিটি দলেরই কোচ ছিলেন গোলাম রব্বানী ছোটন। তার অধীনে প্রথম দুটি শিরোপা জিতেছিল অ-১৪ নারী দল। দুটিই এএফসি অ-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ আসরে। প্রথমটি নেপালে, ২০১৫ সালে। দ্বিতীয়টি তাজিকিস্তানে, ২০১৬ সালে। জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় প্রতিবারই দেশে ফিরে বাংলাদেশ দলের এই দ্রোণাচার্য জানিয়েছিলেন ফাইনালের আগের রাতটি টেনশনের চোটে তিনি একটুও ঘুমাতে পারেননি। স্বভাবতই জানার ইচ্ছা হয়েছিল এবার হংকংয়ে অনুষ্ঠিত চার জাতি আমন্ত্রণমূলক আন্তর্জাতিক যুব ফুটবল টুর্নামেন্টে ‘অঘোষিত’ ফাইনালের (টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয় সিঙ্গেল লীগ পদ্ধতিতে, কাজেই ফাইনাল বলে কিছু ছিল না) আগের রাতেও একই সমস্যা হয়েছিল কি না ছোটনের? অবাক করে দিয়ে সহাস্যে বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের কিংবদন্তিতুল্য এই কোচ জানান, ‘মোটেও না। এবার বরং ভীষণ ভাল ঘুম হয়েছে।’ কিভাবে? ‘কারণ আমার আত্মবিশ্বাস ছিল আমার মেয়েরাই জিততে যাচ্ছে। কেননা পুরো টুর্নামেন্টে তারা যেভাবে আগ্রাসী এবং আধিপত্য বিস্তার করে ফুটবল খেলেছে, শেষ খেলায় হংকংয়ের বিরুদ্ধেও ঠিক সেভাবেই খেলতে পারবে এবং ফলে আমরাই চ্যাম্পিয়ন হব।’ ছোটনের ব্যাখ্যা। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সম্মেলন কক্ষে হংকং ফেরত অপরাজিত বাংলাদেশ অ-১৫ দলকে দেয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এমনটাই বলেন ছোটন। তবে ছোটন বুঝে উঠতে পারেননি তার দল এতটা ভাল খেলবে, ‘হংকংয়ের সঙ্গে মেয়েরা এতটাই ভাল খেলেছে এবং এতগুলো গোল করবে, এতটা আশা আমি করিনি। তারা আমার প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে। সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আমরা অনুশীলন শুরু করি। কঠোর অনুশীলনের মধ্যে মেয়েরা ছিল। আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল আমরা ভাল খেলব। কিন্তু আমাদের অচেনা প্রতিপক্ষ ছিল হংকং এবং মালয়েশিয়া। ওইখানে আমাদের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে মেয়েদের ফিটনেস লেভেল।’ ছোটন আরও বলেন, ‘কঠোর অনুশীলন করার পর মেয়েদের ফিটনেস লেভেল এতটাই উন্নতি করেছে যে প্রতিপক্ষরা পাত্তাই পায়নি। এটা খুব ভাল একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। আসিয়ান অঞ্চলে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল না। এই টুর্নামেন্টে জয়লাভ করার মাধ্যমে সেন্ট্রাল এবং আসিয়ান অঞ্চলে আমরা আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করলাম।’ এই টিম নিয়ে পরবর্তী লক্ষ্যটা কী? ‘আমাদের লক্ষ্য ২০২০ সাল পর্যন্ত এই মেয়েদের এক সঙ্গে ধরে রাখা। টুর্নামেন্ট বাই টুর্নামেন্ট খেলব। ২০২০ সালে ফিফা অ-১৯’র যে কোয়ালিফিকেশন রাউন্ড আছে সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এগোচ্ছি। আমি মনে করি যে মেয়েরা সঠিক পথেই আছে। শুধু এদের এক সঙ্গে ধরে রাখা এটাই হচ্ছে মূল কাজ।’ দলের অধিনায়ক মারিয়া মান্দার ভাষ্য, ‘আমরা যেভাবে অনুশীলন ও পরিশ্রম করেছি, তাতে একটা আত্মবিশ্বাস ছিল মাঠে সঠিক খেলাটা খেলতে পারলে অবশ্যই জিততে পারব এবং সেটাই হয়েছে। ফলে আমাদের কঠোর পরিশ্রম সার্থক। ঘরের মাঠে সাফ অ-১৫ আসরে যেভাবে খেলেছিলাম এবার হংকংয়ে গিয়ে তারচেয়েও ভাল খেলার চেষ্টা করেছি। সফল হতে পারায় অধিনায়ক হিসেবে খুবই ভাল লাগছে। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে কনকাকাফ অ-১৫ ফুটবলে খেলার সম্ভাবনা আছে আমাদের। সেখানে ভাল করতে হলে আমাদের এখনকার চেয়ে আরও বেশি পরিশ্রম করতে হবে।’ দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় তহুরা খাতুনের অনুভূতি, ‘টুর্নামেন্ট খেলার আগে আমরা যে কঠোর পরিশ্রম করেছিলাম, সেটার ফল পেয়েছি চ্যাম্পিয়ন হয়ে। লক্ষ্য ছিল দেশবাসীর জন্য কিছু নিয়ে আসব। সেটা (চ্যাম্পিয়ন ট্রফি) আনতে পেরে খুবই আনন্দিত।’ টুর্নামেন্টের সর্বাধিক গোল (৮টি) এবং সর্বাধিক হ্যাটিট্রকও (২টি) তহুরার। কোন হ্যাটট্রিক বেশি স্মরণীয়? ‘শেষ খেলায় স্বাগতিক দলের (হংকং) বিপক্ষে হ্যাটট্রিকটি বেশি মনে থাকবে আমার। ছয় গোলে হারলেও ওরা কিন্তু অনেক ভাল দল। সতীর্থদের সাহায্য ছাড়া আমার হ্যাটট্রিক হতো না। তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই।’ দিনে দিনে নিজেদেরই ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল। যে টুর্নামেন্টেই অংশ নিচ্ছে তারা সাফল্য পাচ্ছে। হংকংয়ে জকি কাপে বাংলাদেশ অ-১৫ নারী ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসার পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের পক্ষ থেকে সংবর্ধনার জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। অথচ যে কোচের হাত ধরে আসছে এই সাফল্য সেই গোলাম রব্বানী ছোটন এবং তার সহকর্মীরাই তিন মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না বাফুফের কাছ থেকে। খুবই ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে ছোটন বিষয়টি এড়িয়ে যান। অনেক চেষ্টাতেও তার মুখ খোলানো সম্ভব হয়নি। আগামী ২ থেকে ১২ মে থাইল্যান্ডে ফুটসাল খেলবে বাংলাদেশ অ-১৫ দল। এ ধরনের আসরে প্রথমবারের মতো খেলবে বাংলাদেশ। খেলা হবে ঘাসে বা টার্ফে নয় ম্যাটে। দ্রুতগতির ম্যাচে খেলবে পাঁচজন করে ফুটবলার। ইতোমধ্যেই বুধবার থেকেই পল্টনের এম মনসুর আলী হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামের ম্যাটে অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে ছোটনের শিষ্যারা। এ প্রসঙ্গে ছোটনের ভাষ্য, ‘এই আসরে খেলে আমাদের অভিজ্ঞতা হবে। আমার সম্বল হচ্ছে দলের মেয়েদের ফিটনেস, দম এবং স্কিল। দেখা যাক, কি হয়।’ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্য, এএফসি নির্বাহী সদস্য, ফিফা কাউন্সিল মেম্বার ও বাফুফে মহিলা ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ, বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মহিলা ফুটবল কমিটির সদস্য আমিরুল ইসলাম বাবু, ওয়ালটন গ্রুপের অপারেটিভ ডিরেক্টর (স্পোর্টস এ্যান্ড ওয়েলফেয়ার) এফএম ইকবাল বিন আনোয়ার (ডন), বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ প্রমুখ।
×