ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোরসালিন মিজান

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৬ এপ্রিল ২০১৮

বায়ান্ন বাজার  তিপ্পান্ন গলি

বর্ষবরণ উৎসবের অপেক্ষা। বাংলা নববর্ষ। এবার ১৪২৫ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নেবে বাঙালী। বছরের প্রথম দিনটি ঘিরে কত যে আবেগ উচ্ছ্বাস! সার্বজনীন উৎসবে এবারও সকল ধর্ম বর্ণের মানুষ যোগ দেবে। এখন চলছে প্রস্তুতি। সারাদেশের মতো রাজধানী ঢাকায়ও বৈশাখের আমেজ। মার্কেট শপিংমলে জমে উঠেছে কেনাকাটা। বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। রাজধানীর প্রতি প্রান্তেই কোন না কোন আয়োজন থাকবে। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো রিহার্সালে ব্যস্ত। কিন্তু সব ছাপিয়ে সামনে চলে এসেছে বর্ষবরণ উৎসবে বিধিনিষেধ আরোপ করার বিষয়টি। গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গম্ভীর মুখ করে বলেছেন, বিকেল ৫টার মধ্যে উন্মুক্ত স্থানে পহেলা বৈশাখের সব অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রার সময় মুখে মুখোশ পরা যাবে না। এবং একই সময় তিনি বলেছেন, পহেলা বৈশাখে নিরাপত্তা বিঘœ ঘটানোর কোন ধরনের আশঙ্কা নেই। মন্ত্রী মহোদয় স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছেন বটে। বাঙালীর সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংগ্রামে অহর্নিশ থাকা মানুষেরা তার বক্তব্য মানতে নারাজ। তারা বলছেন, ‘ফতোয়া’ দিয়ে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হচ্ছে। বাঙালী কখন কীভাবে কতসময় নববর্ষ উৎসব উদ্যাপন করবে সেটা নতুন করে বলে দেয়ার কিছু নেই। মৌলবাদীরা সব বন্ধ করে দিতে চায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছেন সংক্ষিপ্ত করতে। একই তো কথা হলো। মুখোশ প্রসঙ্গে কথা বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তারা জানাচ্ছেন, মঙ্গল শোভাযাত্রায় মুখোশ পরা হয় না বললেই চলে। হাতে বহন করা হয়। গত বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এমন নিয়ন্ত্রণ উৎসবের আনন্দ ম্লান করে দেয় বলে মনে করেন তারা। সংবাদ সম্মেলন করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। বিশিষ্টজনরা বলেছেন, বিকেল ৫টার আগে অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে বলার মধ্য দিয়ে এক ধরনের ভীতি ছড়িয়ে দেয়া হলো। আর বিকেল ৫টা পর্যন্ত সারাদেশে যেসব উৎসব অনুষ্ঠান হবে সেগুলোর একশ’ ভাগ নিরাপত্তা, নিশ্চিত গ্যারান্টি কি তারা দিতে পারবেন? তাহলে বিকেল সন্ধ্যার কথা আসছে কেন? বিধিনিষেধ আরোপ না করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাঙালিত্বের জাগরণে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তারা। এমনকি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরও নববর্ষ উদযাপনে সময় বেঁধে দেয়ার পক্ষে নন। মন্ত্রীর এমন বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছে উৎসবপ্রিয় বাঙালী। ইলিশের কথায় আসা যাক। বৈশাখের আলোচনা থেকে বাদ পড়েছে ইলিশ। বাদ পড়েছে বললেই চলে। বাংলা নববর্ষ বরণের আলোচনায় ইলিশের কোন অস্তিত্ব নেই। তেমন কিছু এখনও দৃশ্যমান হচ্ছে না। রাজধানী ঢাকায় মাছটির জন্য ছোটাছুটি কমেছে। পহেলা বৈশাখের আগে ফ্রিজ ভর্তি করার খবর খুব একটা কানে আসছে না। হ্যাঁ, গত দুই বছরে বৈশাখে ইলিশ খাওয়ার রীতিটি মোটামুটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যায়। পান্তা-ইলিশ পহেলা বৈশাখের খাদ্য তালিকার প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে উঠলেও সুস্বাদু এই মাছকে বেড়ে উঠার সুযোগ দিতে ইলিশের বদলে সবজি, মরিচ পোড়া ও ডিম ভাজি খাওয়ার পরামর্শ দেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারী বাসভবন গণভবনে গত দুই বছর পহেলা বৈশাখের আয়োজনে ইলিশ ছিল না। সেই প্রভাব পড়েছে এবারের উৎসবে। অন্যান্য বছর একই সময়ে ঢাকার বাজারে যত ইলিশ দেখা যেত, তার তুলনায় অনেক কম দেখা যাচ্ছে এবার। অলিতে গলিতে মাছটি নিয়ে ডাকাডাকি কমেছে। বৃহস্পতিবার খামারবাড়ি এলাকার ফুটপাথে ঝুড়ি ভর্তি ইলিশ নিয়ে বসেছিলেন দুই বিক্রেতা। উঁকি দিয়ে দেখা গেল, ছোট মাছ। বরফ দেয়া মাছের রংটাও রোদে পুড়ে কেমন যেন হয়ে গেছে। দামও খুব বেশি হাঁকতে দেখা গেল না। এক হালি ৮০০ টাকা। অপেক্ষাকৃত বড় ইলিশের হালি ২০০০ টাকা। কিন্তু কেনার লোক তেমন দেখা গেল না। বিক্রেতা সোহাগ বললেন, এবার বাজার ভালো না। বিক্রি খারাপ। তবে আরেক বিক্রেতা মিয়া হোসেন খুব আশাবাদী। বললেন, ইলিশ তো ইলিশ-ই। বৈশাখে সবাই এই মাছ খাবে। এই তো কয়েকদিন। এর পরই মাছটি কিনতে সবাই দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দেবে বলে আশা করছেন তিনি।
×