ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্প খাতই প্রবৃদ্ধি বাড়াচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ৬ এপ্রিল ২০১৮

শিল্প খাতই প্রবৃদ্ধি বাড়াচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শিল্পখাতের ওপর ভর করে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে নতুন রেকর্ড হতে যাচ্ছে চলমান ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, এই অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। যদিও এ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৪০ প্রাক্কলন করা হয়েছিল। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, এই অর্থবছরে জিডিপিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে শিল্পখাত। গত মঙ্গলবার পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় যে তথ্য উপস্থাপন করেছেন, তাতে এ অর্থবছরে শিল্পখাতে ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। এই হিসেবে গত অর্থবছরের চেয়ে জিডিপিতে শিল্পখাতের অংশ বেড়েছে প্রায় ২ শতাংশ। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। জানা গেছে, জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান এখন ৩২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। দেশে প্রায় ১০ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে উঠেছে। এসব এসএমই শিল্প জিডিপিতে শতকরা ২৩ ভাগ এবং মোট শিল্প কর্মসংস্থানে শতকরা ৮০ ভাগ অবদান রাখছে। এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো যে হিসাব দিয়েছে, তাতে জিডিপিতে বড় ভূমিকা রাখছে শিল্পখাত। বৃহৎ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি- এই তিন ধরনের শিল্পেরই আগের বছরের চেয়ে প্রবৃদ্ধি ভাল। সেখানে রফতানিমুখী খাত ও অভ্যন্তরীণ শিল্পখাত দুটোই এগিয়েছে।’ তবে বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, সেবাখাতে শ্লথ প্রবৃদ্ধি লক্ষ করা যাচ্ছে। এতে কর্মসংস্থান বেড়েছে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘কৃষিখাতের প্রবৃদ্ধির যে তথ্য দেয়া হয়েছে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, এই অর্থবছরেই বন্যা হয়েছে। এই বন্যার কারণে ফসলের বিশেষ করে আমনের ক্ষতি হয়। যার ফলে চালের দামও বেড়েছে। যে কারণে খাদ্যশস্য আমদানি বেড়ে যায়। উৎপাদন যথেষ্ট না হওয়াতেই এমনটি হয়েছে। কদিন আগেও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। তাতেও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে কৃষিখাতে যে প্রবৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে, তাতে কিছুটা সংশয় তৈরি হয়েছে।’ অবশ্য পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, এই অর্থবছরে আউশ ও পাটের উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। মাছের উৎপাদনও বেড়েছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ায় শিল্পখাতেও মোট উৎপাদন বেড়েছে। গার্মেন্টস, ওষুধ, সিমেন্ট ও পশুখাদ্যের উৎপাদন বেড়েছে। পাশাপাশি সেবাখাতে বিশেষ করে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে লেনদেন আগের অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘নির্মাণ খাতেও কার্যক্রম অনেক বেড়েছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ, ঢাকা বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ইত্যাদি বাস্তবায়নে উন্নয়ন কর্মকা- ত্বরান্বিত হয়েছে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতেও ব্যয় বেড়েছে অনেক। যার পরিপ্রেক্ষিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাজেটের প্রাক্কলনের তুলনায় বেশি হয়েছে।’ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখতও মনে করেন, জিডিপিতে বড় ভূমিকা রাখছে শিল্পখাত। তিনি বলেন, ‘এই অর্থবছরে সরকারী বিনিয়োগ বেড়েছে। এর ফলে বেসরকারী বিনিয়োগও কিছুটা বেড়েছে। শিল্পখাতের মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বেড়েছে। কাঁচামালের আমদানিও বেড়েছে। এগুলো প্রবৃদ্ধির জন্য সহায়ক।’ পরিকল্পনামন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এই অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এরমধ্যে কৃষিখাতে ৩ দশমিক ০৬, শিল্পখাতে ১১ দশমিক ৯৯ এবং সেবাখাতে ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে কৃষি খাতে ২ দশমিক ৯০ শতাংশ, শিল্পখাতে ১০ দশমিক ২২ শতাংশ এবং সেবাখাতে ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। এদিকে, বিবিএসের শ্রমশক্তি জরীপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ৩৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে ১৩ লাখ। আর শিল্পখাতে নতুন কর্মসংস্থান বেড়েছে মাত্র দুই লাখ। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, শিল্পখাতে নতুন কর্মসংস্থান বাড়ছে ধীরে। প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের বড় অংশ সেবাখাত নির্ভর। ২০১৩ সালে শিল্পখাতে এক কোটি ২১ লাখ মানুষ নিয়োজিত ছিল। এ সংখ্যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক কোটি ২২ লাখ হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মাত্র দুই লাখ বেড়ে এক কোটি ২৪ লাখ হয়েছে। বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১০ কোটি ৯১ লাখ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৮০ হাজার। এছাড়া ‘আনপেইড’ থেকে ‘পেইড এমপ্লয়মেন্ট’ হয়েছে ১৪ লাখ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে ১০ লাখ। কর্মসংস্থান নতুন বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ২ ভাগ। তবে পুরুষের ক্ষেত্রে এটি শূন্য দশমিক ৭ ভাগ এবং নারীদের বৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ৮ ভাগ। অন্যদিকে সেবাখাতে ২০১৬-১৭ অর্থবছর ২ কোটি ৩৭ লাখ মানুষ নিয়োজিত ছিল। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে সেবাখাতে নতুন কর্মসংস্থান ১৭ লাখ বেড়েছে। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে প্রথমবারের মতো সরকারের দেয়া লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ায় গত অর্থবছরে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। সরকার ওই অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। সে হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ০ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি অর্জিত হয়েছে। প্রথমবারের মতো ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবদ্ধি ৬ শতাংশের বৃত্ত ভেঙে ৭ শতাংশ অর্জিত হয়। ওই বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। আর গত অর্থবছর তা বেড়ে অর্জিত হয় ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।
×