ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফিরে দেখা ॥ মৃত ছেলেকে খুঁজে পেলেন মা!

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ৬ এপ্রিল ২০১৮

ফিরে দেখা ॥ মৃত ছেলেকে খুঁজে পেলেন মা!

রুমেল খান ॥ ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮। বিকেল ৪টায় ‘স্বাধীনতা কাপ ফুটবল’-এর ফাইনাল খেলা। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে তাতে মুখোমুখি হবে চট্টগ্রাম আবাহনী বনাম আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ। বাসা থেকে দুপুর ৩টার মধ্যেই বের হলাম। ফাইনাল বিধায় প্রেসবক্সে প্রচুর সাংবাদিক আসবে। আগেভাগেই না গেলে সামনের সিটে বসা যাবে না। খেলা ঠিকমতো না দেখলে নিউজের মানও ভাল হবে না। তাছাড়া রাস্তায় যানজট আছে, বাসও দেরিতে আসে। কাজেই ঝুঁকি না নিয়ে এক ঘণ্টা সময় নিয়েই বের হয়েছি। এমনিতেই গন্তব্যস্থলে যেতে সময় লাগে ৩০/৪০ মিনিট। তারপরও ঠিক সময়ে প্রেসবক্সে গিয়ে পৌঁছতে পারলাম না। তবে সেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক কারণে। ল্যাপটপ নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে মিনিট পাঁচেক হেঁটে মুগদাপাড়া বিশ্বরোডে গিয়ে উঠলাম। রাস্তার সঙ্গেই মুগদা আইডিয়াল স্কুলের অভিভাবকদের একটি ছাউনি। বাস আসছে না দেখে সেখানে গিয়ে বসলাম। মিনিট সাতেক পরেই লক্ষ্য করলাম রাস্তার ওপাশে ছোটখাটো জটলা। আরও দেখলাম হিজাব পরা এক ত্রিশোর্ধ মহিলা এক সুদর্শন কিশোরকে (কালো শার্ট-প্যান্ট পরা, চোখে চশমা, মুখে সরু কাটিং করা চাপ দাঁড়ি, বয়স আনুমানিক ১৯/২০) জড়িয়ে ধরে আকুলভাবে কাঁদছে। স্বভাবতই তীব্র কৌতূহল হলো ঘটনাটি জানার। এমন সময় দেখলাম বাস কাছাকাছি চলে এসেছে। কিন্তু বাসে উঠলে মহিলার কান্নার বিষয়টা অজানা থেকে যাবে। আর জানতে গেলে বাস মিস হবে। পরের বাস আসতে কমপক্ষে দশ মিনিট। ফলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। দোদুল্যমান অবস্থায় পড়ে গেলাম। শেষ পর্যন্ত কৌতূহলেরই জয় হলো। বাসে ওঠার তাড়নাকে দমন করে এগিয়ে গেলাম মহিলার কাছে। তারপর সেখানে গিয়ে যা দেখলাম আর যা শুনলাম, তা বড়ই বিস্ময়কর এবং মর্মস্পর্শীও বটে। মহিলাটির বাসা গোড়ানে। চাকরি করেন মুগদা মেডিকেল হাসপাতালে। ডিউটি শেষে যাবার পথে রাস্তায় ওই কিশোরটিকে দেখেন। এবং তাকে জড়িয়ে ধরে তীব্র কান্নায় ভেঙে পড়েন। কারণ, মাসকয়েক আগে তার একমাত্র সন্তান (ছেলে) সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। কাঁদতে কাঁদতে ওই মা নিজের মোবাইল ফোন বের করে তার ছেলের কিছু ছবি দেখালেন। সেগুলো দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ! কেননা সেই মৃত ছেলের সঙ্গে এই কিশোরের চেহারার হুবহু মিল! বয়সও প্রায় এক! তবে নাম ভিন্ন। মৃত ছেলের নাম শান্ত। জীবিত কিশোরের নাম সোমেন (মুগদাপাড়া নিবাসী)। সোমেনকে জড়িয়ে ধরে মা বিলাপ করে কাঁদছেন। সোমেনও মা-কে জড়িয়ে রেখেছে। যা ঘটেছে, তাতে সে হতভম্ব। তার চোখেও জল। দু’জনকে এই অবস্থায় দেখে উপস্থিত সবার মতো আমার চোখও অশ্রুসিক্ত হলো। আমার পরামর্শে সোমেন তার মোবাইল নম্বরটা হতভাগিনী মা-কে দিল। মা বললেন, ‘বাবা, তুমিই আমার শান্ত! আমাকে দেখতে আইসো!’ আর থাকতে পারলাম না। কারণ দ্বিতীয় বাসটা এসে পড়েছে। মা আর শান্তরূপী সোমেনকে ওই অবস্থাতেই রেখে বাসে উঠে পড়লাম। বার বার মনে পড়তে লাগলো পুরো ঘটনাটি। [email protected]
×