ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক হাসন আবদুল কাইয়ূম

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ খড়কীর উরস মুবারক

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ৬ এপ্রিল ২০১৮

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ খড়কীর উরস মুবারক

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বেতারে একটি দেশাত্মবোধক ললিত উচ্চারণ সম্প্রচারিত হতো যা শুনে সবার অন্তরে দেশ প্রেমের মজবুত বুনিয়াদ স্থাপিত হতো আর তা হচ্ছে অলী আল্লার বাংলাদেশ। শহীদ গাজীর বাংলাদেশ/রহম করো, রহম করো, রহম করো আল্লাহ।... ইতিহাস বলে বাংলাদেশে ইসলামের বুনিয়াদ স্থাপন করেন পীর-আউলিয়াগণ। যশোর শহরে খড়কীর পীর খান্দানের দরবার রয়েছে। এই পীর খান্দানের পূর্ব পুরুষ সৈয়দ সুলতান আহমদ স¤্রাট আকবরের আমলে যশোর এসে খানকা স্থাপন করেন। বংশ পরম্পরায় ইসলাম প্রচারে তাদের অবদান রয়েছে। ইসলামের মানবতাবাদী দর্শন তাঁরা তুলে ধরেন। ইলমে তাসাওউফের তালিম দিয়ে তাঁরা আলোময় করে তোলেন মানুষের ব্যক্তি সত্তাকে। এই খান্দানের মাওলানা শাহ আবদুল করিম (রহঃ) বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম এরশাদে খালেকিয়া নামে মৌলিক তথ্যবহুল বিস্তারিত গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে যশোরে উরস করেন যা আজও চৈত্র মাসের ১৬ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। উরস তাসাওউফপন্থীদের এক পরিচ্ছন্ন মিলনমেলা, হযরত জালালুদ্দীন রুমী (রহঃ) থেকে উরস প্রচলিত হয়। চতুর্দশ শতাব্দীতে বাংলাদেশে যেমন রুমীর মসনবী শরীফ আসে তেমনি উরস মুবারক অনুষ্ঠানও এখানে প্রচলিত হয়। হযরত জালালুদ্দীন রুমীর ওফাত দিবসে তাঁর মুরীদগণ উরস পালন করেন। আসলে উরস হচ্ছে ইসালে সওয়াব মাহফিল। এতে খতমে কুরআন, খতমে খাজেগান, যিকর-আযকার, মিলাদ-কিয়াম, খিযারত, সওয়াব রিসানী, বাররুব পরিবেশনা ইত্যাদি হয়ে থাকে। শাহ্্ মোঃ আবদুল করিম ১৮৫২ খ্রীস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯১৫ খ্রীস্টাব্দে ১৭ মার্চ ইন্তেকাল করেন। তার আব্বা হযরত সেলিম উদ্দীন চিশ্তী সেকালের বিখ্যাত সূফী ছিলেন। তিনি কয়েক মাসের শিশুপুত্র আবদুল করিমকে রেখে ইন্তেকাল করলে তাঁর আব্বা শাহ কলিমউদ্দীন চিশ্তী শিশু আবদুল করিমের লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। শাহ আবদুল করিম কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে জমিয়তে উলা লাভ করেন এবং কিছুকাল যশোর জেলা স্কুলের হেড মাওলানা ছিলেন। মাওলানা শাহ মোহাম্মদ আবদুল করিম তরীকায়ে নক্্শবন্দিয়া ছাড়াও কাদেরিয়া, চিশ্তীয়া, সোহরাওয়ার্দীয়া তরীকার পীর ছিলেন। তার অসংখ্য মুরিদ ছিল। ইন্তেকালকালে তিনি দুই পুত্র রেখে যান। তাঁর বড় পুত্র শাহ্্ মোহাম্মদ আবু নঈম পিতার স্থলাভিষিক্ত হন। মাওলানা শাহ মোহাম্মদ আবু নঈম কামিল পীর ছিলেন। তার লেখা হেলালে তরিকত বইটা তাসাওউফ চর্চাকারীদের জন্য একখানি উপকারী বই। তিনি ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করলে শাহ আবদুল করিমের দ্বিতীয় পুত্র মাওলানা শাহ মোহাম্মদ আবুল খায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিনি ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করলে শাহ মোহাম্মদ আবদুল করিমের পৌত্র মাওলানা শাহ মোহাম্মদ আবদুল মতিন দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিনি এই খান্দানের বিস্তার ঘটান বহুদূর পর্যন্ত। তার আদেশ ও যতেœ বহু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তিনি খড়কীতে একটা বিশাল ও অত্যাধুনিক ইয়াতিমখানা প্রতিষ্ঠান করে গেছেন। এর ইয়াতিমখানার নাম আঞ্জুমানে খালেকিয়া। তিনি ইন্তেকাল করলে তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র শাহ মোহাম্মদ কামরুল হাসান হাসু গদিনশিন হন। খড়কীর র্উস মুবারক একটি আদর্শ জলসা। এখানে শিরক, বিদাআত, অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কারের কোন স্থান নেই। শাহ কামরুল হাসান হাসু এই উরস নিষ্ঠার সঙ্গে খড়কী পীর খান্দানের আলো প্রজ্বলিত করে যাচ্ছেন। কমরেড আবদুল হক, অধ্যক্ষ আবদুল হাই, প্রফেসর মোহাম্মদ শরীফ হোসেন এই খান্দানেরই সন্তান ছিলেন। এই উরস মুবারকে মিলাদ ও কিয়াম পরিচালনা করেন আলহাজ আরিফ বিল্লাহ্ মিঠু। লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ উপদেষ্টা ইনস্টিটিউট (অব) হযরত মুহম্মদ (সা.)
×