ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

লাল সবুজের প্রজাপতি

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ৬ এপ্রিল ২০১৮

লাল সবুজের প্রজাপতি

বাংলাদেশের ফুটবল-কিশোরীরা যেন লাল সবুজের প্রজাপতি। দেশের জন্যে বয়ে এনেছে দারুণ এক সম্মান। আনন্দ উপলক্ষও বটে। চার জাতি কিশোরী ফুটবলে (অনুর্ধ ১৫) তারা অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ফাইনালে ড্র করলেও তারা চ্যাম্পিয়ন হতো। কিন্তু লড়াকু ফুটবল খেলে তারা প্রতিপক্ষ স্বাগতিক দেশ হংকংকে রীতিমতো ধসিয়ে দিয়েছে। ছয় গোল দিয়েছে তাদের। হংকং একটি গোলও পরিশোধ করতে পারেনি। আগের দুটি ম্যাচে যথাক্রমে মালয়েশিয়া ও ইরানের বিরুদ্ধে তারা আরও বেশি সংখ্যায় গোল দিয়েছিল, যথাক্রমে দশ ও আট। অবশ্য উভয় ম্যাচে তারা একটি করে গোল খেয়েছেও। তারপরেও বলতে হবে বাংলাদেশের কিশোরীরা দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলে চমৎকার সাফল্য বয়ে এনেছে। তাদের জানাই শুভেচ্ছা, ভালবাসা, অভিনন্দন। টিভিতে সরাসরি দেখার সুযোগ ছিল না, রেডিওতেও শোনা যায়নি এই খেলার ধারাবিবরণী। বেশিরভাগ মানুষই খোঁজ রাখেননি, মিডিয়াও বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি। তাই খবরটা জেনে অনেকেই চমকে উঠেছেন, উল্লসিত হয়েছেন, গর্ববোধ করেছেন। বাংলাদেশের ফুটবল কন্যারা হংকংয়ের মাটিতে নিজেদের নাম খোদাই করে রাখল। উল্লেখ করা দরকার ফাইনালে আমাদের তহুরা হ্যাটট্রিক করেছে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় এই ফুটবল দলের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেয়েদের বয়সভিত্তিক ফুটবলে এবার নিয়ে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। এর আগে ২০১৭ সালে ঢাকায় সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। এছাড়া নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ২০১৫ সালে অনুুষ্ঠিত এএফসি অনুর্ধ-১৪ আঞ্চলিক পর্বে, ২০১৬ সালে তাজিকিস্তানে একই টুর্নামেন্টে এবং একই বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত এএফসি অনুর্ধ-১৬ আঞ্চলিক পর্বেও বাংলাদেশের মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি এই মেয়েরা তাদের সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছে। যা সত্যিই অনেক আনন্দের, পরম স্বস্তির। এটা বিশেষভাবে উল্লেখ করা দরকার যে, যে চারটি দেশের অংশগ্রহণে এই টুর্নামেন্টটি আয়োজিত হয়েছিল তাদের মধ্যে নারী ফুটবল র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের স্থান ছিল সবার নিচে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের তুলনায় মালয়েশিয়া ছিল ২২ ধাপ এগিয়ে। ইরান ৪৪ ধাপ এবং ৩১ ধাপ এগিয়ে ছিল হংকং। কিন্তু সব বাধাই মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশের সূর্যকন্যাদের অদম্য মনোবলের কাছে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ভেতর দিয়ে এটা আবারও প্রমাণিত হলো যে, বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে এই কিশোরীদের মতো বহু মহামূল্যবান মণিমানিক্য ছড়িয়ে আছে। সামান্য পৃষ্ঠপোষকতা ও পরিচর্যা পেলে তারা দেশের জন্য কী অসামান্য গৌরব বয়ে আনতে পারে এই অর্জন নিঃসন্দেহে তার উজ্জ্বল প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হবে। আমরা এটা আশা করতে পারি যে, মেয়েদের ফুটবলের দিকে কর্তৃপক্ষ বিশেষ দৃষ্টি দেবে। যে কিশোরীরা তাদের চমৎকার ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে, দারুণ প্রতিযোগিতার উদাহরণ উপহার দিয়ে এমন আন্তর্জাতিক সাফল্য বয়ে নিয়ে এলো দেশের জন্যে, নিশ্চয়ই তাদেরকে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করা হবে। অল্প বয়সী মেয়েরা যে ফুটবলের মতো একচেটিয়া পুরুষদের অধিকারে থাকা একটি আনন্দদায়ক খেলায় বেশি করে যুক্ত হচ্ছে, তাতে এটা সহজেই অনুমান করা যায় যে, সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। একটুখানি বাড়তি যতœ আর আর্থিক সুবিধা পেলে আমাদের মেয়েরা যে আরও বড় আন্তর্জাতিক আসরে বিরাট সাফল্য অর্জন করবেÑ এমনটা আমরা আশা করতেই পারি। তাই তাদেরকে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। সব ধরনের সহযোগিতার পথ রচনা করতে হবে।
×