ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবৃদ্ধি ৭.৬৫a

প্রকাশিত: ০৪:২২, ৬ এপ্রিল ২০১৮

প্রবৃদ্ধি ৭.৬৫a

বাংলাদেশ সম্প্রতি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার সামর্থ্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশের এই উত্তরণ স্বীকৃতি পেয়েছে বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ কর্তৃক। বিশ্বব্যাংক এই স্বীকৃতি দিয়েছে আয়ের ভিত্তিতে। অন্যটি আয়ের পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে, যেটি হিসাব করেছে জাতিসংঘ। গত কয়েক বছরে মাথাপিছু জাতীয় আয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতাÑ তিনটি সূচকেই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার মর্যাদা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৪ সাল নাগাদ আমরা এ থেকে বের হয়ে ঠাঁই পাব মধ্যম আয় তথা উন্নত দেশের তালিকায়। এই প্রেক্ষাপটে চলতি অর্থবছরের প্রাথমিক হিসাবে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন নিঃসন্দেহে সুখবর ও স্বস্তিদায়ক। প্রথমবারের মতো জাতীয় প্রবৃদ্ধি প্রায় আটের কাছাকাছি। অবশ্য এর কারণও আছে। এর মধ্যে বেড়েছে রফতানি আয় ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের অর্থ প্রেরণের পরিমাণ। কৃষিখাত তো বরাবরই সাবলীল ও ফলপ্রসূ ভূমিকা রেখেছে। সর্বোপরি বেড়েছে বিনিয়োগ। জাতীয় আয়ের হিসাবে বিনিয়োগের পরিমাণ ২৮ দশমিক ৮৯ থেকে উন্নীত হয়েছে ৩২ দশমিক ৬৬ শতাংশে। বর্তমান সরকারের জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। অথচ কাজটি মোটেও সহজসাধ্য ছিল না। কুসুমাস্তীর্ণ তো নয়ই। ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট যখন ক্ষমতায় আসে, তখন দেশের অর্থনীতি ছিল প্রায় ভগ্নদশাপ্রাপ্ত। মানুষের আয় ছিল সীমিত অথচ দ্রব্যমূল্য ছিল আকাশচুম্বী। সেই অবস্থা থেকে জাতীয় অর্থনীতি ও সমৃদ্ধিকে টেনে তোলা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জন্য ছিল রীতিমতো একটি চ্যালেঞ্জ। ২০১৮ সালের আসন্ন জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে অকুণ্ঠচিত্তে বলতেই হয় যে, বর্তমান সরকার অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গেই সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে। অথচ বাস্তবতা হলো, এ সময় প্রায় সমগ্র বিশ্ব দু’দুটো মন্দাবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। এর ফলে বিশ্বের অনেক দেশেই জাতীয় প্রবৃদ্ধি গেছে কমে। এমনকি অনেক দেশে লক্ষ্য করা গেছে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিÑ এ সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মন্দাবস্থার উত্তাপ প্রায় লাগেনি বললেই চলে। বরং শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও শনৈঃশনৈঃ গতিতে এগিয়ে গেছে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি। গত কয়েক বছরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। এর পাশাপাশি বিদ্যুত উৎপাদনও বেড়েছে আশাব্যঞ্জক হারে। কুইক বা রেন্টাল পাওয়ার স্টেশন নিয়ে যত বিতর্কই থাকুক না কেন, জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে তা অবদান রেখেছে। বর্তমানে সরকার একাধিক ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। কয়লা ও তেলভিত্তিক আরও বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের পথে। ফলে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপনসহ দেশের অভ্যন্তরে বহুমুখী পণ্য উৎপাদনে আগামীতে আর সমস্যা হবে না। বর্তমানে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কম। মূলধনী যন্ত্রপাতি এবং শিল্পোৎপাদনের জন্য অপরিহার্য কাঁচামালের দাম কম। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার এখনই প্রকৃষ্ট সময়। দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে প্রচুর অলস অর্থ পড়ে আছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ভাল। সেক্ষেত্রে ঋণের সুদহার কিছু কমিয়ে এবং জমিসহ শিল্প-কারখানা স্থাপনের অবকাঠামো গড়ে তুলে সরকার সুগম করে দিতে পারে বিনিয়োগ পথ। সেক্ষেত্রে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া আদৌ কষ্টসাধ্য হবে না। সুশাসন ও শিল্পায়নের পথ সুগম করা গেলে আগামীতে জাতীয় প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে নিঃসন্দেহে।
×