ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৮ হাজার অটোরিক্সা স্ক্র্যাপের সিদ্ধান্ত আইনী লড়াইয়ে গড়াল

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ৬ এপ্রিল ২০১৮

ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৮ হাজার অটোরিক্সা স্ক্র্যাপের সিদ্ধান্ত আইনী লড়াইয়ে গড়াল

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে মেয়াদোত্তীর্ণ চিহ্নিত করা ৮ হাজার ৫৪০ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা স্ক্র্যাপ করার বিআরটিএ’র (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি) সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু হয়েছে আইনী লড়াই। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্তে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। আদালত আগামী রবিবার পুনরায় শুনানির দিন ধার্য করেছেন। দেশের সকল মহানগরীসমূহের মধ্যে শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামে চলাচলরত মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা স্ক্র্যাপ করার সিদ্ধান্ত হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের যৌথ সিদ্ধান্তে। দেশের অন্যান্য মহানগরীতে এই জাতীয় যান চলাচল নিয়ে অনুরূপ কোন সিদ্ধান্ত না আসায় এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সিএনজিচালিত অটোরিক্সা মালিক সমিতির পক্ষে এ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করার পর এ সংক্রান্তে আগামী রবিবার সম্ভাব্য রায় আসতে পারে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএ যুগপৎ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকায় ৫ হাজার ৪৭০ ও চট্টগ্রামে ২ হাজার ৮৭০টি সিএনজিচালিত অটোরিক্সা স্ক্র্যাপ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে তা সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া চলছিল। বুয়েট (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) ও চুয়েট (চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) এর পক্ষে বিআরটিএ’র দিক নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত পর্যবেক্ষণে উপরোক্তসংখ্যক থ্রি হুইলার মেয়াদোত্তীর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়। এসব যানের তৈরি সাল ২০০২। বিআরটিএ’র নিয়ম অনুযায়ী এ জাতীয় থ্রি হুইলারের লাইফ টাইম সর্বোচ্চ পনের বছর। কিন্তু এসব যানের ক্ষেত্রে তা পেরিয়ে গেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে এ জাতীয় থ্রি হুইলার যানকে স্ক্র্যাপ ঘোষণা করা যায় বলে মতামত দেয়া হয়। তবে ‘সিএনজি/থ্রি হুইলার সার্ভিস ২০০১’ এর অনুচ্ছেদ ‘ক’ এর উপ অনুচ্ছেদ ৩(ক) অনুযায়ী নির্ধারিত ও বর্ধিত ইকনোমিক লাইফ শেষে তা স্ক্র্যাপ করে পূর্বতন মালিকের নামে প্রতিস্থাপনের সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ যেসব মালিকের এ জাতীয় যান স্ক্র্যাব হবে তারা নতুন অনুরূপ যান রাস্তায় নামানোর সুযোগ পাবেন। এ ব্যাপারে বিআরটিএ চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, প্রতিদিন ৫০টি করে সিএনজি অটোরিক্সা স্ক্র্যাপ করতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদনপত্র জমা/রেজিস্ট্রেশন নম্বরের ক্রম অনুসরণ করতে হবে। স্ক্র্যাপ করার আগে এ সংক্রান্তে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। মেযাদোত্তীর্ণ অটোরিক্সার চেসিস নম্বর ও নম্বর প্লেট গ্যাস কাটার দিয়ে ধ্বংস করাসহ এমনভাবে স্ক্র্যাপ করতে হবে যেন সেগুলো সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার অযোগ্য হয়। স্ক্র্যাপকৃত অটোরিক্সার মালিকের নাম প্রতিস্থাপন হিসেবে নতুন একটি অটোরিক্সা রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। গাড়ির নম্বর, চেসিস নম্বর, তৈরির সন ইত্যাদি উল্লেখ পূর্বক প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত একটি আবেদন মালিক স্ক্র্যাপ করার সময় কমিটির কাছে দাখিল করবে। স্ক্র্যাপকৃত অটোরিক্সার বিপরীতে নতুন অটোরিক্সা রেজিস্ট্রেশনের নিমিত্তে স্ক্র্যাপকৃত তালিকা সংস্থার সদর কার্যালয়ে প্রেরণ করতে হবে। স্ক্র্যাপকৃত কোন অটোরিক্সার পরিবর্তে নতুন কোন অটোরিক্সা প্রতিস্থাপন হিসেবে রেজিস্ট্্েরশন প্রদান করা হলে তার একটি তালিকা সংরক্ষণপূর্বক সংস্থার সদর কার্যালয়ে প্রেরণ করতে হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ সদর দফতরের নির্দেশে এ জাতীয় যান স্ক্র্যাপকরণপূর্বক যাবতীয় প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে। দৈনিক ৫০টি করে আগামী জুলাই মাসের মধ্যে তা সম্পন্ন করার নির্দেশনা রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে গত ১ এপ্রিল ঢাকার বিআরটিএ’র ইকোরিয়া কার্যালয় প্রাঙ্গণে সিএনজিচালিত ২শ’ অটোরিক্সা স্ক্র্যাপ করার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। মালিক পক্ষের আইনী লড়াইয়ের জের হিসেবে প্রক্রিয়াটি থমকে গেছে বলে জানা গেছে। এদিকে, চট্টগ্রামে এ প্রক্রিয়া শুরু করতে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়ার পর তা আগামী ৭ এপ্রিল থেকে শুরু করার কথা ছিল। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ এ বিষয়ে আগামী রবিবার শুনানির দিন ধার্য করায় সদর দফতরের নির্দেশে চট্টগ্রাম বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ তাদের প্রক্রিয়া বন্ধ রেখেছে। সূত্র জানায়, মালিক পক্ষের বক্তব্য হচ্ছে এ জাতীয় থ্রি হুইলার ঢাকায় ৫ থেকে ৬ লাখ আর চট্টগ্রামে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। সুতরাং বিআরটিএ’র এ সিদ্ধান্ত অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। তাদের অভিমত, স্ক্র্যাপ করার পরিবর্তে এ জাতীয় যান দেশের বিভিন্ন মফস্বল এলাকায় চলাচলের সুযোগ দেয়া যায়। এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ যানবাহনে চলাচলের সুযোগ আরও বেশি পাবে। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি থেকেও দেশ রক্ষা পাবে। মালিকপক্ষীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে ৫ লক্ষাধিক এ জাতীয় থ্রি হুইলার যান চলাচল করছে। পাশাপাশি অবৈধ যানের সংখ্যা অগণন।
×