ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতির মামলায় জেলে যাচ্ছেন লুলা ডি সিলভা

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ৬ এপ্রিল ২০১৮

দুর্নীতির মামলায়  জেলে যাচ্ছেন লুলা ডি সিলভা

দুর্নীতি মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপীল চললেও ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট লুই ইনাসিও লুলা ডি সিলভাকে কারাগারে যেতে হবে বলে বৃহস্পতিবার সুপ্রীমকোর্ট আদেশ দিয়েছে। ঘুষ গ্রহণের মামলায় লুলার ১২ বছর জেল হয়েছিল। আপীল চলাকালীন সময়ে তিনি মুক্ত থাকতে চেয়েছিলেন। সুপ্রীমকোর্টের বিচারকরা তার সে আশা পূরণ করেননি।- এএফপি ও বিবিসি ১১ জন বিচারকের মধ্যে ছয়জনের ভোট আদেশের পক্ষে পড়েছে, বাকি ৫ জন আপীলের সময় সাবেক প্রেসিডেন্টের জামিনের পক্ষে ছিলেন। ব্রাজিলে আপীল চলাকালীন সময় অভিযুক্তরা কারাগারের বাইরে থাকার সুযোগ পেয়েই আসছিলেন। যদিও সুপ্রীমকোর্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারক লুলার ক্ষেত্রে ২০১৬ সালে দেয়া নিম্ন আদালতের এ সংক্রান্ত এ রায়কে প্রাধান্য দিয়েছেন। প্রথম আপীলে হেরে যাওয়ার পর সাজাপ্রাপ্তকে যেখানে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়েছিল। লুলা তার বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অ্যাখ্যা দিয়ে আসছেন। চলতি বছরের অক্টোবরে হতে যাওয়া সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে দূরে রাখতেই এ চক্রান্ত চলছে বলেও তার অভিযোগ। জনমত জরিপে লুলাকেই এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে। মেটাল ওয়ার্কারস ইউনিয়ন আয়োজিত এক কনসার্টে বসে বামপন্থী এ রাজনীতিক তার বিরুদ্ধে দেয়া সুপ্রীমকোর্টের রায় পড়ে শোনেন। নথিপত্র প্রস্তুত হওয়ার সময় পর্যন্ত ৭২ বছর বয়সী সাবেক এ প্রেসিডেন্ট জেলখানার বাইরে থাকার সুযোগ পাবেন। আদালতের এ আদেশের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে লুলা নেতৃত্বাধীন দল ওয়ার্কার্স পার্টি। লুলা ডি সিলভা ২০০৩ থেকে ২০১১ সাল অবধি দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি একজন সাবেক এ খনি শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনকারী। ছিলেন দেশটির অর্ধ শতকের মধ্যে প্রথম বামপন্থী প্রেসিডেন্ট। সামাজিক কর্মসূচীতে বিস্তর খরচ করার কারণে তার মেয়াদকালীন সময়েই ব্রাজিল তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখেছিল। লুলা প্রশাসনের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে ওই ৮ বছরের মধ্যেই দেশটির কয়েক কোটি লোক দারিদ্র্যসীমার নিচ থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়। ২০১৪ সালে লুলার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়। ‘অপারেশ কার ওয়াশ’ নামে ওই তদন্তে ঘুষ ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হিসেবে বিভিন্ন দলের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার নাম উঠে আসে। লুলার বিরুদ্ধে কোপাকাবানা সৈকতমুখী একটি এ্যাপার্টমেন্ট ঘুষ হিসেবে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়, যার বাজার মূল্য প্রায় ১১ লাখ ডলার। অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তার নয় বছর জেল হয়। রায়ের বিরুদ্ধে প্রথম আপীলেও তিনি হেরে যান। জানুয়ারিতে দেয়া আপীলের রায়ে লুলার সাজার মেয়াদ আরও বাড়িয়ে ১২ বছর করা হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় আপীলে যান। আসছে নির্বাচনে এগিয়ে থাকলেও বামপন্থী লুলার প্রশ্নে ব্রাজিলের জনগণের মধ্যে বিভেদ বিদ্যমান। মঙ্গলবারও সাও পাওলোতে ২০ হাজারের বেশি মানুষ লুলাকে কারাগারে রাখার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে। লুলার সমর্থনেও ব্রাজিলের বিভিন্ন শহরে বিশাল বিশাল মিছিল হয়েছে। লুলা বলছেন, সাজার বিরুদ্ধে লড়াই হচ্ছে সামরিক শাসনবিরোধী লড়াইয়েরই ধারাবাহিকতা। ১৯৮৫ সালে দেশটিতে সামরিক শাসনের অবসান হয়েছিল। ‘আমি সামরিক একনায়কতন্ত্রকে মেনে নিইনি, কৌঁসুলিদের এ একনায়কতন্ত্রও মেনে নেব না,’ বলেছেন তিনি।
×