ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

১১ বছরের বালিকা আনার ইতিহাস!

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ৫ এপ্রিল ২০১৮

১১ বছরের বালিকা আনার ইতিহাস!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মাত্র ৫ বছর বয়সে টেবিল টেনিসের ব্যাট হাতে নিয়েছিলেন। তারপর থেকে দক্ষ হয়ে উঠতে মাত্র ৫ বছর লেগেছে তার। এখন ১১ বছর বয়সে তিনি কমনওয়েলথ গেমসের মহিলাদের টেবিল টেনিস ইভেন্টের অন্যতম প্রতিযোগী। ওয়েলস থেকে আসা ১১ বছর বয়সী এ বিস্ময় বালিকার নাম আনা হারসি। এবার গোল্ডকোস্ট কমনওয়েলথ গেমসে সর্বকনিষ্ঠ এ্যাথলেট হিসেবে অংশ নিয়ে ইতিহাস গড়তে চলেছেন তিনি। এমনকি বিশ্বে যত চতুর্বার্ষিক প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে সে সবের মধ্যে তিনিই ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ এ্যাথলেট হিসেবে রেকর্ড গড়তে চলেছেন। বয়সে সবার ছোট, শারীরিক উচ্চতায় খর্ব এবং দৈহিক ওজনেও কম। এসবকে কোনভাবেই বাধা মনে করছেন না হারসি। ওয়েলসের কোচ স্টিফেন জেনকিন্সও এই বালিকাকে নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘সে আসলে নিজ প্রচেষ্টায় এতদূর এসেছে। এই বয়সেই সে অনেক বেশি পরিপক্ব। মানসিকভাবে অনেক শক্ত এবং টেনিসটা তার ভেতর থেকে এসেছে।’ হারসির সতীর্থ শার্লট ক্যারি দেশের এক নম্বর খেলোয়াড়। নিজের দলে হারসিকে তিনি টেনে নিয়েছেন শুধু জনপ্রিয়তার চটকদার পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে। জেনকিন্স আরও বলেন, ‘কেউ তাকে শিশুতোষ মনোভাব নিয়ে বিবেচনা করে না। এরচেয়ে বরং সবাই তাকে সতীর্থ একজন এ্যাথলেট হিসেবেই মর্যাদা দেয়। আর এ বিষয়টি হারসির জন্যও খুব জরুরী। কারণ সে কোনভাবেই নিজেকে বাচ্চা ভাবতে চায় না। আর মেয়েরা সবাই খুব চমৎকার। শার্লটও একসময় আনার অবস্থানে ছিল এবং সে কারণেই খুব ভালভাবে জানে কি পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে।’ এই মুহূর্তে হারসির উচ্চতা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি, কার্ডিফ স্কুলের এই বালিকা বেশ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এক প্রতিযোগী। গত বছর ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপসে অংশ নিয়ে ইতোমধ্যেই একটি রেকর্ডও ভেঙ্গেছে। এ বিষয়ে জেনকিন্স বলেন, ‘এটা তারচেয়ে কিছুটা বড় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা এবং তা সে খুব ভালভাবেই অনুধাবন করতে পারছে। তবে কোন পদক জয়ের উচ্চাশা নিয়ে সে অংশ নিচ্ছে না। সুতরাং এটা তার ওপর থেকে বাড়তি চাপ থেকে মুক্ত রেখেছে। আমি জানি নিজের সেরা অবস্থানে থাকলে সে কি করতে সক্ষম। তার ভবিষ্যতটা আমি খুবই ভাল দেখছি।’ হারসি দৈনিক ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা অনুশীলন করেন। স্কুলে যাওয়ার আগে খুব ভোরে উঠে এই অনুশীলন করেন হারসি। এমনকি পুরুষ প্রতিপক্ষের সঙ্গেও অনুশীলন করেন। এবার গোল্ডকোস্টে এসেও অনুশীলন করছেন পুরুষ প্রতিযোগীদের বিরুদ্ধে। আর এসবই তাকে ক্রমেই র‌্যাঙ্কিংয়ে ওপরের দিকে টেনে তুলছে। জেনকিন্স বলেন, ‘সে বিশ্বের সেরা ৫০ নম্বরে উঠে আসতে পারবে যদি সে চায়। শীর্ষ খেলোয়াড় হওয়ার আকাক্সক্ষাটা যদি সে ধরে রাখে তাহলে অনেকদূর যেতে পারবে।’ হারসির মা একজন চাইনিজ। যোগ্যতা ও সামর্থ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে ভবিষ্যতে নিয়মিত চীনে গিয়ে অনুশীলন করার ইচ্ছা আছে তার। কারণ এর আগে চীন সফরে গিয়ে অনুশীলনের ব্যতিক্রমী কৌশলটা তার বেশ মনে ধরেছে। এ বিষয়ে হারসি বলেন, ‘সেখানে যদি কোন বালক-বালিকা অনুশীলনে শট মিস করে তাহলে কোচেরা ব্যাটের হাতল দিয়ে আঘাত করেন শাস্তি হিসেবে।’ কিন্তু এরপরও জেনকিন্স মনে করেন হারসির উন্নতির জন্য চীনে অনুশীলনটাই বড় ভূমিকা রাখবে। কারণ হারসি চাইছেন ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিকে অংশ নিতে। সেক্ষেত্রে চীনে অনুশীলন হতে পারে এ বালিকার জন্য অন্যতম চাবিকাঠি।
×